বন্যার্তদের জন্য সরকারের কাছে ৯ দাবি বিএনপির

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২০, ১৫:৪৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বন্যা মোকাবিলা সরকারকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই আহ্বান জানান।

রিজভী বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে মনে করি, এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা আওয়ামী লীগের ভঙ্গুর আর দুর্নীতিবাজ প্রশাসন দিয়ে সম্ভব না। এজন্য প্রয়োজনে জাতীয়ভাবে দলীয় স্বার্থের উধের্ব উঠে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। সরকারকে বলব, একগুঁয়েমি বাদ দিয়ে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিন। বন্যা দুর্গতদের জন্য বিনামূ্ল্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করুন। স্কুল কলেজের বাঁধের উপর আশ্রয় নেয়া বানভাসি পরিবারগুলোর জন্য লঙ্গনখানা খুলুন।

বন্যা কবলিত এলাকায় কৃষকদের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করে নগদ অর্থ প্রদান, বিনামূল্যে বীজ ও বীজতলা তৈরি ট্রে সরবারহ, সরকারি খামারিদের গবাদি পশুর জন্য আলাদা আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন, গো-খাদ্যের সংকট নিরসন এবং এলাকাভিত্তিক ত্রাণ বন্টনের ব্যবস্থা করার দাবিও জানান রিজভী।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বন্যার পানি বাড়ছে প্রতিদিনই, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। হাঁস-মুরগি আর গবাদি পশু নিয়ে বন্যাকবলিত মানুষরা পড়েছেন মহাবিপদে। দুর্গতরা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার ও জ্বালানির সংকটে ভুগছে। ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বানভাসি মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। সরকারি ত্রাণ তৎপরতা এখনো অনেকটাই প্রচারসর্বস্ব ফাঁপা আওয়াজ। শাসকগোষ্ঠি একেবারেই উদাসীন।

রিজভী বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো চলমান বন্যার যে চাহিদা সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাতে দেখা গেছে, বন্যা কবলিত ৮০ শতাংশ মানুষেরা নিয়মিত খাবার পাচ্ছে না। সরকারের তথ্যবিবরণীতে দাবি করা হয়েছে, বন্যা কবলিত ৩১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে মানবিক সহায়তা হিসেবে এই পর্যন্ত ৭ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন চাল বিতরণ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রমাণ মিলছে না।’

রিজভী আরও বলেন, ‘খবরের কাগজে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বগুড়ার সারিয়াকান্দিসহ উত্তরাঞ্চলে বন্যা কবলিত মানুষের পাতে ভাতের বদলে শুধু পাট শাক। আক্ষরিক অর্থেই জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের কবিতার অবিকল চিত্র আজ বন্যাকবলিত প্রতিটি জনপদেই দেখা যাচ্ছে-‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিঁদ, মুমূর্ষ সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?

‘ক্ষমতাসীন চামড়া সিন্ডিকেট বেপরোয়া’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত বছরের মতো আওয়ামী লীগের চামড়া সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নানা অজুহাতে এই বছর চামড়ার দাম কমানো হয়েছে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৯ শতাংশ। চামড়ার মূল্য না থাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছে দেশে চামড়ার বাজার। দামে ধস নামায় প্রায় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি এই টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গরিব ও এতিম জনগোষ্ঠি।’

রিজভী বলেন, করোনার কারণে চামড়া নিয়ে এবারো সেই সংকট আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যেভাবে পাট শিল্পকে ধ্বংস করা হয়েছে, ঠিক সেইপথেই ধ্বংস করা হচ্ছে দেশের ট্যানারি শিল্প। সরকারের ভেতরে একটি মহল সিন্ডিকেট করে কওমি মাদ্রাসা এবং চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করে নিজেরা ফয়দা লুটতে চায়।”

এসময় ঈদুল আজহার প্রাক্কালে দেশবাসীর কাছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঈদ শুভেচ্ছাও জানান রিজভী। 

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/বিইউ/এমআর)