সংকটে জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা, আড়তগুলোতে নেই ঈদের প্রস্তুতি

জয়পুরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০২০, ২১:১০

প্রতিবছর কোরবানির ঈদে জয়পুরহাটের আড়তগুলো থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার পশুর চামড়া ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এবার এ জেলার চামড়ার আড়তগুলোতে নেই কোনো প্রস্তুতি। এর কারণ করোনার পাশাপাশি বর্তমান বাজার ধসে এমনিতেই লোকসান, তার ওপর ট্যানারি মালিকদের প্রায় ৮ কোটি টাকার বাকি দিয়ে নি:স্ব হয়েছেন অনেক চামড়া ব্যবসায়ী। এ অবস্থায় চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন চামড়া মালিক সমিতি।

জানা গেছে, ঢাকার বাইরে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা এবং ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, পাঁচবিবি উপজেলার রেলগেট, আক্কেলপুর উপজেলার হাজিপাড়া, জয়পুরহাট শহরের আরাফাত নগর, আমতলী এলাকায় চামড়ার আড়তগুলোতে প্রতি বছরের মতো এবার নেই কোনও প্রস্তুতি। এসব আড়তের চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকেরা গত কয়েক বছরের কোটি কোটি পাওনা টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারেনি। এছাড়া প্রতি বছর ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে চামড়া কেনায় বিপাকে পড়েছে মূল ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত জেলা হওয়ায় চামড়া পাচারের আশঙ্কাও থাকে এখানে। সেইসঙ্গে চামড়ার প্রধান কাঁচামাল লবণের দাম এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে নতুন চামড়া কিনতে পুঁজি সংকট পড়ে গেছেন তারা। তাই বকেয়া টাকা পরিশোধে ট্যানারি মালিকরা যেন উদ্যোগ নেন ও সেইসঙ্গে ব্যাংকগুলোও যেন সহজ শর্তে লোন দেয়, এ বিষয়ে সরকারকে সুদৃষ্টিও কামনা করেন তারা।

জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ী শাহিন আকতার জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তারা আড়তগুলো প্রতিবছরের মতো এবার ধোঁয়া মোছা করছেন না তারা। গতবারের চামড়ার টাকা এখনো ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা রয়েছে। চামড়ার বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করায় কয়েক বছর ধরে তারা লাভের মুখ দেখতে পারেনি। একদিকে লোকসান অন্যদিকে বকেয়া, এভাবে তাদের মূলধন শেষ। এদিকে ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে না পারায় নতুন করে লোন দিচ্ছে না। ফলে আসন্ন ঈদে নতুন করে চামড়া কেনা মুশকিল হয়ে পড়বে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

তিনি জানান, ট্যানারি মালিকেরা সবসময় সিন্ডিকেট দিয়ে চামড়া কেনে এবং দাম পরিশোধের বেলাতেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অল্প করে টাকা দেয়, যা দিয়ে তারা ব্যবসা চালাতে পারে না।

তবে পাঁচবিবি উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ী অহেদুল হোসেন ছোটন জানান, চামড়া পাচার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এ শিল্প করোনার মধ্যেও লাভের মুখ দেখবে।

কোরবানির আগেই পুঁজি সরবরাহ করে চামড়া শিল্পকে সচল রাখবে ট্যানারি মালিকেরা এমন আশা ব্যক্ত করে জেলা চামড়া ব্যাবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শামিম আহমেদ জানান, ‘দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি চামড়া শিল্পের প্রসারে কাঁচামাল লবণের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ চামড়া পাচার রোধ ও বকেয়া টাকা পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এ শিল্প টিকে থাকবে।’

এদিকে চামড়া পাচার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন উল্লেখ করে জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস হাসান টিটো জানান, জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্ত এলাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তারকাটায় ঘেরা, বাকি ১৮ কিলোমিটার সীমান্তে তারকাটা নেই। চোরাকারবারিরা মূলত এই জায়গাগুলোকেই তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই এই জায়গাগুলো সবসময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়।

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :