ফুসফুস ছাড়াও যেসব অঙ্গের ক্ষতি করে করোনা

প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০২০, ১৪:৪৬

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

প্রথমে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু এখন জানা গেলো ফুসফুস ছাড়াও করোনা বিভিন্ন অঙ্গের স্থায়ী ক্ষতি করে। জেনে নিন করোনা শরীরের কোন কোন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ করে।

ফুসফুসে থাকে ক্ষতের দাগ

ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জোসেফ ব্রেনান জানিয়েছেন, সেরে ওঠার দেড়-দুই মাস পরও কিছু রোগীর শুকনা কাশি থেকে যায়। থাকে বুকে জ্বালা ভাব। গভীর ভাবে শ্বাস টানতে, শ্বাস ধরে রাখতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়। এর প্রধান কারণ সংক্রমণ ও প্রদাহের ফলে ফুসফুসের কিছু অংশের স্থায়ী ক্ষতি। 

যত নিউমোনিয়ার বাড়াবাড়ি হয়, ক্ষতি হয় তত। সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে ধূসর প্যাচ, যাকে বলে গ্রাউন্ড গ্লাস ওপাসিটি। 

রেডিওলজি জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, চীনের হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৭০ জন জটিল রোগীর মধ্যে ৬৬ জনেরই ফুসফুসের ক্ষতি হয়েছে। এদের অর্ধেকের মধ্যে পাওয়া গেছে ধূসর প্যাচ। এমনকি উপসর্গহীন কোভিড রোগীদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা গিয়েছে। এবং তার কিছু দিন পরই জাঁকিয়ে বসেছে রোগ।

রক্ষা নেই হৃদযন্ত্রেরও

আগে থেকে হৃদরোগ না থাকলেও আইসিইউ তে ভর্তি কোভিড রোগীদের প্রায় ১৯ শতাংশের হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হার্ট ফেলিওর, অ্যারিদমিয়া, হার্ট অ্যাটাক, সবই হতে পারে। ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। হার্টের পেশী দুর্বল হয়ে রক্ত সরবরাহের ঘাটতি হয় অনেকের। ফলে আগের মতো দৌড়ঝাঁপের জীবন আর ফিরে আসে না।

চিকিসকরা জানিয়েছেন, ভাইরাসের প্রভাবে যাদের হার্টের পেশীতে সরাসরি প্রদাহ বা মায়োকার্ডাইটিস হয়, সেই ক্ষতির রেশ থেকে যেতে পারে দীর্ঘ দিন। পেশী দুর্বল হয়ে রক্ত সরবরাহের ব্যাঘাত হয়। ওষুধপত্র খাওয়ার সঙ্গে ধূমপান ও মদ্যপান ছেড়ে দিলে ও ডাক্তার না বলা পর্যন্ত পরিশ্রমের কাজ না করলে ৬-৮ সপ্তাহে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়।’

কিডনি ও লিভার

কোভিডের জটিল পর্যায়ে সবচেয়ে ক্ষতি হয় কিডনি ও লিভারের। স্বাভাবিক হতে সময় লাগে কম করে ৩-৪ সপ্তাহ। কখনও পুরো স্বাভাবিক হয় না। বিশেষ করে যদি আগে থেকে সমস্যা থাকে।

রক্তের সমস্যা

প্রায় ৩১ শতাংশ জটিল কোভিড রোগীর শরীরে প্রচুর পরিমাণে রক্তের ডেলা জমতে থাকে। এ থেকে নানা সমস্যা হয়। যেমন—

ফুসফুসে জমলে পালমোনারি এমবলিজম নামের প্রাণঘাতী সমস্যা হতে পারে। আইসিইউ-তে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২৩-৩০ শতাংশের এই সমস্যা হয়। সেরে ওঠার পরও অনেকের ক্লান্তি, বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট লেগে থাকে। চলাফেরা ও কাজকর্মে তার প্রভাব পড়ে।

• কারও রক্তের দলা পৌঁছে যায় মস্তিষ্কে। স্ট্রোক হয়। উহানের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সেখানে আইসিইউ-তে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৫ শতাংশের স্ট্রোক হয়েছিল।

• কারও হার্ট অ্যাটাক হয়। ফলে হার্ট আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে যায়।

• কিডনিতে জমলে কিডনির ক্ষতি তো হয়ই, ডায়ালিসিস করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেরে ওঠার পর কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়।

• পায়ের শিরায় জমে দেখা দিতে পারে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস নামের জটিল অসুখ। বাড়ি যাওয়ার পর হঠাৎ রোগ দেখা দিতে পারে।

এ সব কারণেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরও বেশ কিছু দিন রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খেয়ে যেতে হয় অনেক সময়।

(ঢাকাটাইমস/১আগস্ট/এজেড)