অযোগ্যতা নিয়ে চিকিৎসক তৈরি হওয়া চিন্তার বিষয়

ডা. হাসান শাহরিয়ার কল্লোল
| আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২০, ১৮:০১ | প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০২০, ১৭:১৩

৫ বছর আগের এক কেলেঙ্কারির খবর নিয়ে মাতামাতির কারণ আছ। এটা মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর ফাঁস। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর চ্যানেল২৪টিভির একজন সাংবাদিক খুঁজে বের করেছেন ঠিকই। ওই সাংবাদিককে টুপি খোলা অভিনন্দন। তিনি পাঁচটা বছর লেগে ছিলেন এর পেছনে। আর অভিনন্দন ওই চ্যানেলের কর্তা ব্যক্তিদের, যারা তাকে এই দীর্ঘ সময়ে এই জিনিসটি খুঁড়তে সহায়তা করেছেন। যেই সমর্থনটা অনেক মেধাবী অনুসন্ধানী সাংবাদিক পান না। আর অভিনন্দন সিআইডি বিভাগকে। তারা দুষ্কৃতকারীদের আটক করেছে।

তবে প্রেসের একজন মেশিনম্যান আর তার দু-একজন চ্যালা-চামুন্ডা মিলে এই শত শত কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে গেছেন বছরের পর বছর, সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় বৈকি।কি বিশ্বাস হচ্ছে না যে এটা শতকোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে?

আচ্ছা, একটা মাঝারি মানের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে কেবল ভর্তি হতে কত টাকা লাগে ধারণা আছে? ধরুন ২০ লাখ টাকা। কোনো কোনো মেডিকেল কলেজে কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা লাগে। এখন আপনাকে যদি কেউ বলে যে ১০ লাখ টাকা (আসল সংখ্যাটা কখনো জানা যাবে না, কারণ এর তো আর কোনো রশিদ থাকে না। তাই ধারণা করে একটা বললাম) দিলে আপনার সন্তান ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেয়ে যাবে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পেয়ে। আপনি যদি ব্যবসায়ী হন বা আপনার ব্যবসায়িক বুদ্ধি যদি টনটনে হয় আপনি কি করবেন? ১০ লাখ টাকায় ঢাকা মেডিকেল, নাকি ২০ লাখ সঙ্গে আরো অনেক লাখ যুক্ত করে কোনো একটা মাঝারি মানের বেসরকারি মেডিকেল? (সততার বিষয়টি ভুলে যান, ও জিনিস এখন শুধুমাত্র বই-পুস্তকে) তাহলে যদি ১০০ জন এমন প্রশ্ন কিনে থাকেন তাহলে সেটা ১০ কোটি টাকা। আর যদি ১০০০ জন কিনে থাকেন? ওরে বাপরে ১০০ কোটি?

ফলে একটা লম্বা সময় ধরে এই ব্যবসাটা ছিল জমজমাট। কখনো খুল্লাম খুল্লা, কখনো চুপিসারে। যথারীতি সবাই (দায়-দায়িত্ব যাদের) জোর গলায় অস্বীকার করেছেন এবং ধামাচাপা দিয়েছেন। ছোট ছোট বাচ্চারা (বাচ্চাই তো! ১৬-১৮ বছর বয়স ওদের) শুধু শুধু রোদে পুড়েছে, বৃষ্টিতে ভিজেছে আর লাঠির বাড়ি খেয়েছে। কিন্তু আজ সবই সত্যি বলে প্রমাণ হলো!

এখন এর অভিঘাতটা যদি চিন্তা করি। যারা মেধা না থাকা সত্ত্বেও উপরের দিকের মেডিকেল কলেজগুলোতে চান্স পেয়ে গেছে তারা এখন চিকিৎসক হবার দ্বারপ্রান্তে। পড়াতে গিয়ে তাদের অনেকের পীড়াদায়ক মেধাহীনতা চোখে পড়েছে আমার এবং আরো অনেক শিক্ষকের। মেডিকেলের পড়াশোনাগুলো যে বিশ্রী রকমের কঠিন! ওদেরই বা কী দোষ! ওরা তো আর বোঝেনি যে মেডিকেলে চান্স পাওয়ার চেয়ে মেডিকেলের পরীক্ষাগুলোতে পাস করা আরো কঠিন (হা হা…ছোটবেলায় পড়া- স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে…) এরকম ছোট-বড় পাহাড়ে ধাক্কা খেতে খেতে ওদের অধিকাংশই হয়তো শেষ বর্ষে পৌঁছে গেছে।হয়তো ডাক্তারও হয়ে যাবে ওরা কিছুদিন পর।

কিন্তু ভিতের যে খামতি সেটা কীভাবে পূরণ হবে ভবিষ্যতে? এরকম নড়বড়ে জ্ঞান নিয়ে ওরা কতদূর যাবে? আর কে ভালো কে খারাপ, সেটাই বা কীভাবে নির্ণীত হবে? মেধার যে সহজাত শক্তি ঘাটতি পূরণ করবার, সেটা যে ওদের নেই। আর নৈতিক ভিত্তি। সে তো আরো দুর্বল।

আগে যখন অনেক কম মেডিকেল কলেজ ছিল তখন সমস্যাটা এত ব্যাপক ছিল না। কিন্তু এখন প্রতি বছর প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার নতুন চিকিৎসক তৈরি হয়। তাদের একটা বড় অংশ যদি অযোগ্যতা নিয়ে তৈরি হয় তা চিন্তার বিষয় বটে।কিন্তু আমি শুধু চান্স না পাওয়া ওই কিশোর-কিশোরীদের কথা ভাবছি। যারা ঠিকই পুষে রাখবে মনের ভেতরে সেই কষ্টের কথা। পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়েই যারা বুঝতে পেরেছিল, চূড়ান্ত রকমভাবে প্রতারিত হয়েছে তারা।

লেখক: চিকিৎসক।

(ঢাকাটাইমস/২আগস্ট/এসকেএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :