জিম্বাবুয়ের সাবেক তারকা এখন এসি সারাই করেন

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট ২০২০, ১৬:৫০

ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন নির্ধারিত সময়ের দুমাস আগেই। সদ্যজাত অবস্থাতেই দুরারোগ্য মেনিনজাইটিস। বধির হয়ে ছিলেন বেশ কয়েক বছর। রে প্রাইসের সেই লড়াই এখনও থামেনি। জিম্বাবুয়ের সাবেক এই দুর্দান্ত ক্রিকেটার এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র এবং রেফ্রিজারেটরের সারাইকর্মী।

পুরো নাম উইলিয়াম রেমন্ড প্রাইস। জন্ম ১৯৭৬ সালের ১২ জুন। জন্মের কয়েক মাস বয়সেই মেনিনজাইটিস। তাঁর বেঁচে থাকার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তাঁদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে প্রাইস বেঁচে থাকলেন। কিন্তু হারালেন শ্রবণক্ষমতা।

তিনি যে কিছু শুনতে পারছেন না, সেটা অনেক পরে বুঝতে পেরেছিলেন বাড়ির লোক। চার বছর বয়সে জটিল অস্ত্রোপচারে ফিরে আসে প্রাইসের শ্রবণক্ষমতা। কিন্তু বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা তাঁর আজীবনের সঙ্গী হয়ে থাকে। তাঁর বয়সীদের তুলনায় বেশ কিছুটা দেরি করেই শুরু হয়ে তাঁর স্কুলপর্ব।

বাড়ির বাগানে ক্রিকেট খেলায় হাতেখড়ি। প্রথমে তিনি ছিলেন পেসার। পরে কলেজে পৌঁছে রপ্ত করেন স্পিন বোলিং। স্পিনার হওয়ার পরে তাঁর ক্রিকেট খেলার ধরনেরও অনেক উন্নতি হয়।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে। তখনও ক্রিকেটকে পেশা করার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। পড়াশোনার পাশাপাশি শিখেছিলেন রেফ্রিজারেটর এবং এয়ারকন্ডিশনিং মেশিন সারাইয়ের কাজ। সেটাই পরবর্তী জীবনে হয়ে দাঁড়াল বেঁচে থাকার উপায়।

জিম্বাবুয়ের জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজর তাঁর উপর ছিল। সুযোগ এল হঠাৎই। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে বিপাকে পড়ল জিম্বাবুয়ে দল। অফ ফর্ম এবং চোটের কারণে দলের বাইরে পল স্ট্র্যাং, অ্যাডাম হাকল, অ্যান্ড্রু হুইটল। ফলে দলে সুয়োগ পেলেন স্পিনার প্রাইস।

২০০৩ সালে প্রথমে ইংল্যান্ড, তারপর অস্ট্রেলিয়া সফরে নজর কেড়ে নিলেন প্রাইস। সেই সময় থেকে সমসাময়িক বিশ্বমানের স্পিনারদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে প্রাইসের নামও।

২০০৪ সালে সুর কাটল ক্যারিয়ারে। তৎকালীন অধিনায়ক হিথ স্ট্রিকের সঙ্গে প্রাইস-সহ বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার বিদ্রোহ ঘোষণা করেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে। প্রাইস ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে চলে যান। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

২০০৬ সালে তিনি আবার জিম্বাবুয়ে ফিরে আসেন। জাতীয় পর্যায়ে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেন। হয়তো তাঁর উদ্দেশ্য ছিল পরের বিশ্বকাপে খেলা। কিন্তু ২০০৭ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দল বাছাইয়ের সময় তাঁর দিকে ফিরে তাকাননি নির্বাচকরা।

বিশ্বকাপে প্রত্যাখ্যাত প্রাইস এবার ঠিক করলেন তিনি আবার জিম্বাবুয়ের হয়েই খেলবেন। সাড়ে তিন বছর কাউন্টি ক্রিকেট খেলার পরে নির্দিষ্ট সময়ের এক বছর আগেই উর্সস্টারশায়ার কাউন্টির সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করলেন। ২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের জাতীয় দলে ফিরলেন প্রাইস।

দেশের হয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের বিগত পারফরম্যান্সকে ছাপিয়ে গেলেন প্রাইস। ২৭টি ওয়ানডে ম্যাচে ৪৫ উইকেট নিয়ে আইসিসির তালিকায় তিনি উঠে এলেন বিশ্বের তৃতীয় সেরা বোলার হিসেবে। এরপর তিনি হয়ে ওঠেন জিম্বাবুয়ে দলের নিয়মিত সদস্য।

২০১৩ সালের মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সিরিজ চলাকালীন ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন প্রাইস। ক্যারিয়ারে মোট ২২ টেস্টে তিনি উইকেট পেয়েছেন ৮০টি। ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন পাঁচবার। সেরা বোলিং পারফরম্যান্স ৬/৭৩।

১০২টি ওয়ানডে ম্যাচে তাঁর শিকার ১০০ উইকেট। সেরা পারফরম্যান্স ২২ রানে ৪ উইকেট। কিন্তু তাঁর নিজের দেশেই প্রাইস অনুচ্চারিত থেকে গিয়েছেন। টেস্টে তিনি জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক।

জিম্বাবুয়ের যে চারজন বোলার ওয়ানডেতে একশো উইকেট নিয়েছেন, প্রাইস তাঁদের মধ্যে অন্যতম। জিম্বাবুয়ে থেকে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে তিনি খেলেন আইপিএল-এ। কিন্তু তার পরেও তিনি প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছেন বলে অভিমত বহু ক্রিকেটপ্রেমীর।

অবসর নেওয়ার পরে প্রাইস প্রথমে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। খেলার সাজসরঞ্জাম পাওয়া যায়, এরকম একটি দোকান খুলেছিলেন। কিন্তু সেই ব্যবসা বেশি দিন ভাল চলেনি। দোকানটি এখনও আছে। পাশাপাশি, অর্থোপার্জনের জন্য এখন বাতানুকূল যন্ত্র এবং রেফ্রিজারেটর সারাইয়ের কাজ করেন বিশ্বের সাবেক তিন নম্বর বোলার, রে প্রাইস।

(ঢাকাটাইমস/৩ আগস্ট/এসইউএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :