‘ইউরোপে বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী কাজ প্রতিহত করতে হবে’

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২০, ১৯:৫৬ | আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২০, ২৩:১৭

ইউরোপ ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

ইউরোপে বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে হবে বলে নেতাকর্মীদের বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মঙ্গলবার সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের এই সময়ে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এমন অভিযোগ করেন।
জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, চলছে শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসে আমরা হারিয়েছি পরিবারের সদস্যসহ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার অমর স্থপতি, আমাদের স্বার্বভৌম মানচিত্রের চিত্রকর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে এক মর্মান্তিক ঘটনা। যে হত্যাকাণ্ডে নারী ও সন্তানসম্ভবা নারীও রেহাই পায়নি। বুলেটের আঘাতে বিক্ষত হয়েছে শিশুর দেহ। যা পৃথিবীর আর কোনো হত্যাকাণ্ড দেখা যায়নি। সেদিন বিদেশে ছিলেন বলে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যান।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যে বুলেট ১৫ আগস্ট রাতের শেষ প্রহরে হানা দিয়েছিল সে বুলেট ২১ আগস্ট আরো নির্মম হয়ে হানা দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভেনিউতে। ১৫ আগস্টে প্রাইম টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধু আর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রাইম টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের কুশীলবরা শুধু রূপ পরিবর্তন করে, হারায় না। ষড়যন্ত্রকারীদের অব্যাহত অপচেষ্টা আজও চলমান। আমাদের সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে- উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বিরোধী এ অপশক্তির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। উন্নয়নের এ অভিযাত্রায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে দুইটি চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধ ও মানুষের সুরক্ষা এবং পাশাপাশি দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সাম্প্রতিক বন্যা। মানবিকতার উদাহরণ, আস্থার শেষ ঠিকানা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দিন-রাত পরিশ্রম ও বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি।

কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তর পরিবারের মতোই। দেশ-বিদেশের যেখানেই এ পরিবারের সদস্যগণ অবস্থান করুক- সবাই অবিচ্ছেদ্য এক বন্ধনে আবদ্ধ। আমাদের আদর্শের ঠিকানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর আমাদের আস্থার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও রক্তের উত্তরসূরি দেশরত্ন শেখ হাসিনা। যে যেখানেই জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অবস্থান করি না কেন- আমরা হৃদয়ের গভীরে লালন করি লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, আমাদের চেতনার উৎসমূলে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। আমাদের স্বপ্নের সোনালী দিগন্তজুড়ে আলো ছড়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যার দেখানো সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন। সে পথ নকশায় বিশ্বাসের অফুরন্ত শক্তি যোগায় তারই সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়-এর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।

সড়ক মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব আজ কঠিন সময় পার করছে। উত্তর গোলার্ধ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধ, বিষুব রেখার প্রান্তজুড়ে ঘন অমানিশা। করোনা মহামারী স্থবির করে দিয়েছে প্রাণোচ্ছল পৃথিবী। আপনারা পৃথিবীর একটি সমৃদ্ধ দেশে অবস্থান করে দেখেছেন, মহামারীর কাছে দেশগুলো কিভাবে অসহায় সমর্পণ করেছে। হিমসিম খাচ্ছে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও আক্রান্ত মানুষকে বাঁচাতে। অনেক সীমাবদ্ধতা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ অসীম সাহসিকতায় মোকাবিলা করছে এ মহামারি। দূরদর্শিতা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যদিয়ে করোনার সংক্রমণ রোধে কাজ করছে সরকার।

কাদের বলেন, জনবহুল, ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ থেকে স্রষ্টার অপার রহমতে ভালো অবস্থানে থাকলেও এ নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। শেখ হাসিনা সরকার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের সুরক্ষায় দিনরাত কাজ করছে অবিরাম। এ অবিরাম প্রচেষ্টা সকলের সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রয়াস জরুরি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিয়মসহ অন্যান্য খাতের অনিয়মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান জনমনে নতুন করে প্রত্যাশার আলো জ্বালিয়েছে। দলীয় পরিচয় থাকলেও অনিয়ম করে কেউ ছাড় পাবে না, এ কথা আজ স্পষ্ট। সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে দেশরত্ন শেখ হাসিনার চলমান শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সেতু মন্ত্রী বলেন, লাখ লাখ বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। করোনার অভিঘাত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বিশ্ব অর্থনীতির চালচিত্র। এর মাঝে প্রবাসীদের জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রায় ২০টি দেশে সহস্রাধিক প্রবাসী প্রাণ হারিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। সংখ্যার হিসাবে কম-বেশি যাই হোক- প্রতিটি মৃত্যুই আমাদের ব্যথিত করেছে। ইতোমধ্যে করোনায় দেশে ও বিদেশে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি সমবেদনা।

তিনি বলেন, অর্থনীতির ক্ষতি পুষিয়ে জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখতে শেখ হাসিনা সরকার নিয়েছে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান। এ দুর্যোগে প্রবাসী আয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি জোগাচ্ছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা তৈরি পোষাক শিল্পের ক্রয় আদেশ বাতিলের প্রেক্ষাপটে নিজেই বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের সাথে কথা বলেছেন। এরই মাঝে ক্রয় আদেশ আসতে শুরু করেছে। অর্থনীতি আকস্মিক স্থবিরতা কাটিয়ে পুরোনো ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে।

কাদের বলেন, বিদেশে অবস্থান করলেও আপনাদের হৃদয়জুড়ে বাংলাদেশ। দেশের যে কোনো ভালো সংবাদ যেমনি আপনাদের আনন্দিত করে তেমনি খারাপ সংবাদ ব্যথিত করে। একটি মতলবি মহল দেশ ও বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে দেশের ইমেজ নষ্ট করছে। লাখ লাখ প্রবাসীর অবস্থানকে নড়বড়ে করছে। সম্প্রতি ইতালি বিএনপির এক নেতার এক বক্তব্যে ইতালি প্রবাসীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নামক দলটি সরকারের কোনো ইতিবাচক প্রয়াস দেখতে পায় না। তারা সমালোচনা আর মিথ্যাচারের বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে। দিনের আলোতে দেখতে পায়- রাতের অন্ধকার। প্রেসব্রিফিং আর নেতিবাচকতার কাঁদামাটিতে আটকে আছে তাদের রাজনীতি।
তিনি বলেন, প্রবাসে আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যে অপপ্রাচার চালানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকুন। শেখ হাসিনা সরকারের ইতিবাচক অর্জন তুলে ধরুন, প্রচার করুন।

দূতাবাসসমূহের সেবার মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে আপনারা প্রয়োজনে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর নজরে আনতে পারেন। প্রয়োজনে আমাকেও জানাতে পারেন, আমি নেত্রীকে জানাতে পারব।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বছর চলছে। আমরা যার যার অবস্থান থেকে প্রিয় নেত্রী, আমাদের আস্থার প্রতীক বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি।

সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল ও বিশেষজ্ঞ পরিষদ, ইউরোপ (নর্ডিক)-এর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী হেদায়েতুল ইসলাম শেলীর যৌথ পরিচালনায় অনলাইন আলোচনা সভায় অংশ নেন ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিজ ফরাজী, জার্মান আ.লীগের সভাপতি বসিরুল আলম চৌধুরী সাবু, অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান, পর্তুগাল আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল আলম জসিম, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সভাপতি (একাংশ) শহীদুল হক, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ কাশেম, সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গির কবির, ডেনমার্ক আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফা মজুমদার বাচ্চু, স্পেন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস আর আই এস রবিন, সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান, ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম, গ্রিস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাওলাদার, নরওয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (একাংশ)  মফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক (একাংশ)  বিদ্যুৎ কাল, আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব ইকবাল আহমেদ।

এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক খোকন শরীফ, জার্মান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস আলী চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক এফ এম আইচ আলী, ইতালি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবাল, অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম কবির ও সহ সভাপতি রুহি দাষ সাহা, পর্তুগাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত ওসমান, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (একাংশ) জাহাঙ্গীর চৌধুরী, সুইডেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফারহাদ আলী খান, স্পেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিজভি আলম, ডেনমার্ক আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, নেদারল্যান্ডস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (একাংশ) মস্তফা জামান, ,ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মেদ আবুল কাশেম, ফ্রান্স আ’লীগ নেতা আতিকুজ্জামান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহীন আরমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম সালু, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলী হোসেন, নরওয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি বদরুল ইসলাম ও সুইডেন আওয়ামী যুবলীগের আহব্বায়ক জুবাইদুল হক সবুজ, বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব ইতালির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক কমরেড খোন্দকারসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতারা।

ঢাকাটাইমস/০৪ আগস্ট/ইএস