করোনার বেতাল কষ্ট- ১

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২০, ১৪:৩১

আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম

গত মাসের ৪ তারিখে রাজবাড়ী গেলাম। ৬ তারিখে ঢাকায় ফিরে এসেই জ্বরের সাথে নানা উপসর্গ। পরীক্ষা করালাম। কোভিড-১৯। হাসপাতালে ভর্তি। মা গো বাবা গো, খুব ভোগালো।

সবাই আমাকে ভালোবাসায় আগলে রাখে। আমাকে তাদের শুভকামনায় বিচলিত হতে দেখা গেল। আমার মনের মধ্যে একটা মন বাস করে। সেখানে সে যেন শুধু ভালোবাসা চায়, স্নেহ চায়, সহানুভূতি চায়, পরশ চায়।

আমি বরাবরই আত্মবিশ্বাসী মানুষ। এর আগেও একদফা ভুগেছিলাম। সেটা ছিল ভাসকুলাইটিস। ব্যাংকক, দিল্লি হাসপাতালে বছর প্রায় ভর্তি আর ঘোরাঘুরি করে রক্ষা পেয়েছিলাম।

এবার আবার এই দশা। ফোন মোবাইল সব বন্ধ করে রাখলাম। কথা বলতে কষ্ট। সবাই জানতে চায় কেমন আছি, কেমন লাগে। সাথে নানা পরামর্শ। গরমপানির ভাপ, লেবু আদা কত কী! কতজনের পরামর্শ শোনা যায়। মাথা বন বন করে। হ্যাঁ হু, হ্যাঁ হু করাও কঠিন। তাই মোবাইল পুরো বন্ধ। ফেসবুক দেখি। সময় কাটানোর জন্য। লম্বা নাটক সিনেমা কিছু ভালো লাগে না। সংক্ষেপ। গম্ভীর কোনো বিষয় ভালো লাগে না। পণ্ডিতগিরির দরকার কী, দুই দিনের দুনিয়া খাও-দাও যা মন চায় তাই করো, তারপর একদিন আল বিদা।

মোহাম্মদ আলী ক্লে আর টাইসনের কিলাকিলি দেখে ভারী মজা পেলাম। সে কী মাইর! টাইসন একটা পান্ডার মতো। মোহাম্মদ আলীর মাইর হেভি আর্টিস্টিক।

এখন একটু ভালো লাগছে। দুনিয়াময় করোনা। কী যে কষ্ট। এখন মনে হচ্ছে যদি করোনা না হতো তো একটা দুঃখ থেকে যেত। সারা দুনিয়ার মানুষ যে রোগে ক্লান্ত তার ছোঁয়া না পেলে ব্যাপারটা ভালো হতো না। ভালোই হইছে। তো বেতাল কষ্ট। একসময় তো মনে হলো গেলাম বুঝি।

এন্ডারসনের গান ' ও গড উই নিড ইউ' দশবার শুনলাম। মৃত্যু নিয়ে আমার হাহুতোস নেই। পৃথিবী আর মানুষ সৃষ্টি হওয়ার পর কেউ একজনও বেঁচে থাকেনি। সে কারণে রেডি থাকাই ভালো। মৃত্যুকে ভয় না পাওয়াই বাঞ্ছনীয়। সহজ করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এটা প্র্যাকটিস করলে মন ভালো থাকবে। মরার আগে মরা যাবে না। যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ্। (চলবে...)

লেখক: সাবেক সংসদ সদস্য, রাজবাড়ী-১

(ঢাকাটাইমস/০৫আগস্ট/এসকেএস)