শেরপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে তঠস্থ দুস্কৃতিকারীরা

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২০, ১৫:১৭

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

শেরপুরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে তঠস্থ হয়ে পড়েছে দুস্কৃতিকারীরা। কর ফাঁকিবাজ, চোরাকারবারি, ভিজিএফ’র চাল ও গম আত্মসাৎকারিদের পাকড়াও করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একের পর এক পদক্ষেপে এখন মহাবিপদে পড়েছে সুযোগসন্ধানীরা।

গত ২৩ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী রাজস্ব ফাঁকি  দেয়ার অভিযোগে বিড়ির প্যাকেটে কর পরিশোধিত স্টিকার পুনরায় ব্যবহার করার সময় এক লাখ ৭৮ হাজার ৩০০ প্যাকেট বিড়ি, তিন হাজার ৮০০টি আগের কর পরিশোধিত স্টিকার উদ্ধার করে। এছাড়া কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা ১১ হাজার ৩২০ কেজি ভিজিএফ এর চাল উদ্ধার করে। আর এসব ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে জনপ্রতিনিধিসহ প্রায় ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে। অন্যদিকে যৌথ বাহিনীর এসব কর্মকান্ডে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। এদিকে অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

র‌্যাব, পুলিশ, এনএসআই ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ২৯ জুলাই রাতে সদর উপজেলার কুসুমহাটি এলাকার লছমনপুর ও শ্রীবরদী উপজেলার তাঁতীহাটির দুটি ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালানো হয়। এগুলোর মালিক রশিদা বিড়ি ফ্যাক্টরির স্বত্ত্বাধিকারী স্থানীয় ইদ্রিস মিয়া।

অভিযানে জিহান মিল্ক এন্ড ফুড প্রসেসিং কারখানা থেকে এক লাখ ১৪ হাজার ৪০০ প্যাকেটে পূর্বে ব্যবহৃত শুল্ক ও কর পরিশোধিত স্টিকার পুনরায় ব্যবহার করা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এছাড়া একই অবস্থায় তাঁতীহাটি থেকে ৬৩ হাজার ৯০০টি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক ও কর পরিশোধিত তিন হাজার ৮০০টি ব্যবহৃত স্টিকার জব্দ করা হয়।

জব্দকৃত বিড়ি এবং আগের ব্যবহৃত শুল্ক ও কর পরিশোধিত স্টিকারের দাম ৩৫ লাখ ৯৬ হাজার ৪০০ টাকা। পুরাতন ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে কোম্পানিটি বিপুল পরিমাণ বিড়ি পুনরায় বাজারজাত করার লক্ষে মজুদ করে রাখে। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মী রুবেল শাহরিয়ার ও শফিউল আলমকে  গ্রেপ্তার করা হয়।

এছাড়া ২৩ জুলাই রাতে নালিতাবাড়ী উপজেলার উত্তর বাজার কাচারীপাড়া এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এসময় অবৈধভাবে মজুদ রাখা ভিজিএফ এর আট হাজার কেজি (১৬২ বস্তা) চালসহ সাইদুল ইসলাম নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। ওই চালগুলো একটি ভাড়া করা বাড়িতে মজুদ করা ছিল। আর এ ঘটনায় বিশেষ আইনে মামলা করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য একটি গুদাম থেকে কাবিখার গম জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গমের গুদামটি সিলগালা করা হয়। গ্রেপ্তার সাইদুল ইসলাম জানান, জব্দকৃত কাবিখার গমের বস্তা রয়েছে ৩৮২টি।

অন্যদিকে ৩০ জুলাই নালিতাবাড়ীতে আবারো জব্দ করা হয় অবৈধভাবে মজুদ করা ভিজিএফ  এর ৩ হাজার ২২০ কেজি চাল। উপজেলার কলসপাড়, যোগানীয়া ও বাথুয়াকান্দা এলাকা থেকে ওইসব চাল এবং সরকারি খাদ্য অধিদপ্তর লেখা স্বম্বলিত কিছু খালি বস্তা জব্দ করে পুলিশ।

যৌথ বাহিনীর এসব কাজে স্বস্তি প্রকাশ করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ ধরণের অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিড়ি উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন সোলায়মান নামে এক সমাজকর্মী। তিনি বলেন, ইদ্রিস মিয়ার কোম্পানি  এখন পর্যন্ত কী পরিমান টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে তা জনসম্মুখে আনা প্রয়োজন। শুধু তাই না, তার প্রতিষ্ঠানে যদি আরো অনিয়ম হয়ে থাকে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

যারা সরকারি চাল চুরির সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন সমাজ সেবক রাজিয়া সামাদ ডালিয়া। তিনি বলেন, শেরপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে তঠস্থ দুস্কৃতিকারীরা। এ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের এসআই কামরুজ্জামান বলেন, ভিজিএফ’ র তিন হাজার ২২০ কেজি চাল উদ্ধারের ঘটনায় জনপ্রতিনিধিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।

নালিতাবাড়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান, চাল উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। আর আসামিদের মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ ছয়জন জনপ্রতিনিধি রয়েছে। কর ফাঁকি রুখতে শুল্ক বিভাগের  যেকোন কাজে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন শেরপুর সদর উপজেলার ইউএনও ফিরোজ আল মামুন।

র‌্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুরের সহকারী পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার এম.এম.সবুজ রানা বলেন, যারা সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করবেন তাদেরকে সহায়তা করতে সব রকমের নিরাপত্তা দেয়া হবে। কিন্তু অসৎ উপায় অবলম্বন করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা।

(ঢাকাটাইমস/৫আগস্ট/কেএম)