বৈরুত বিস্ফোরণের উপাদান এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২০, ১৯:৫৪ | প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট ২০২০, ১৯:৪৯

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের ভিডিও দেখে অনেকেই বলেছেন তারা জীবনে কখনো এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ দেখেননি। বিস্ফোরণটি ঘটেছিল একটি গুদাম বা ওয়্যারহাউসে– যাতে বিপুল পরিমাণে একটি বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ মজুত করে রাখা ছিল, যারা নাম এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে প্রথম একটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল যা থেকে সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলি আকাশে উঠছিল। লোকজন বৈরুতের নানা জায়গা থেকে সেই বিস্ফোরণের ভিডিও করছিল তাদের মোবাইল ফোনে।

আর ঠিক তখনই তাদের চোখের সামনে ঘটে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি যাতে প্রথম সৃষ্টি হয় একটি বিশাল আগুনের গোলা, তার পর বাতাসের ঝাপটায় তৈরি হয় ব্যাঙের ছাতার মতো আকারের পানি ও বাষ্পের সাদা মেঘ– কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই তা মিলিয়ে যায়, তারপরই দেখা যায় পাক খেয়ে উঠছে লাল রঙের ধোঁয়ার কুণ্ডলি।

পুরো ব্যাপারটা ঘটে মাত্র চার সেকেণ্ডের মধ্যে। সেই লাল ধোঁয়া থেকেই বোঝা যায় যে সেখানে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণ ঘটেছে।

এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কী?

এটা এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা প্রধানত: সার উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়– তবে আরো বহু শিল্প কারখানায় এটা কাজে লাগে। খনিতে যে বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয় তারও অন্যতম একটি উপাদান এটি। সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফিলিপ ইনগ্রাম বলেন, এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিজে কোন বিস্ফোরক পদার্থ নয়, তবে বিশেষ কিছু অবস্থায় তা বিস্ফেরকে পরিণত হতে পারে। একে বরং বলা যায় ‍অক্সিডাইজার অর্থাৎ যা আগুনে আরো অক্সিজেন টেনে আনে এবং আগুন আরো বেশি জ্বলে ওঠে।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক গ্যাবিয়েল ডা সিলভা ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেন, এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটে আগুন ধরানো বা একটা বিস্ফোরণ ঘটার মতো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন।

তবে ডা সিলভা বলছিলেন, তার ধারণা কোনোভাবে এই এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট দূষিত হয়ে গেছে- হয়তো তেল বা অন্য কিছুর সংস্পর্শে এসে এবং সেটাই এই বিস্ফোরণের কারণ। আগুনের সংস্পর্শে এলে এটি অত্যন্ত সক্রিয় বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে। আর বিস্ফোরিত হলে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং অ্যামোনিয়ার মত বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়।

এ কারণে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ করে রাথার জন্য কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয় - বিশেষ করে মজুদ করার জায়গাকে এমনভাবে নিরাপদ করতে হয় যেন আগুন না লাগে। এছাড়া লক্ষ্য রাখতে হয় যেন কোনো নালা বা ড্রেইনে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জমা হয়ে বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি না করতে পারে।

সংবাদদাতারা বলছেন ওয়্যারহাউসটিতে ২৭০০ টন এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছিল এবং তা ছয় বছর ধরে অনিরাপদ অবস্থায় সেখানে পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ২০১৩ সালে একটি জাহাজে করে এই এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বৈরুত বন্দরে এসেছিল। কিন্তু কিভাবে তাতে আগুন লাগলো তা এখনো স্পষ্ট নয়।

গ্যাব্রিয়েল ডা সিলভা বলছিলেন, এ বিস্ফোরণের ফলে বাতাসে যে রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছে তা অপসারিত হতে বেশি সময় লাগবে না কিন্তু যদি তা বৃষ্টির পানিতে এসিডের কণা সৃষ্টি করার মতো কিছু ঘটায়- তাহলে তা পরবর্তীকালে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

এমন বিস্ফোরণ আগেও ঘটেছে

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস সিটিতে ১৯৪৭ সালের ১৬ই এপ্রিল এক এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণ ঘটেছিল যাতে ৫০০ জন নিহত হয়, আহত হয় ৪ হাজার লোক। টেক্সাস সিটি বন্দরে একটি জাহাজ থেকে ২,৩০০ টন এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট খালাস করার সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে।

তাতে পুরো ডক এলাকা ধ্বংস হয়, আশপাশে থাকা অন্য কয়েকটি জাহাজে কয়েকদিন ধরে আগুন জ্বলতে থাকে, এমনকি আকাশে উড়ন্ত দুটি ছোট বিমানও ধ্বংস হয়।

ওই বিস্ফোরণের ঝাপটায় সাগরে ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছাস হয়েছিল। তাতে অনেক বাড়ি ধ্বংস হয়ে ২ হাজার লোক গৃহহীন হয়ে পড়ে।

চীনের তিয়ানজিন শহরের ওয়্যারহাউসে অগ্নিকাণ্ড

চীনের তিয়ানজিন শহরে এক ওয়্যারহাউজে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে ১৭০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়। সেখানে একাধিক ওয়্যারহাউজে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছাড়াও পটাসিয়াম নাইট্রেট এবং সোডিয়াম সায়ানাইডের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ জমা রাখা ছিল।

চীনা কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ার কারণে প্রথমে নাইট্রোসেলুলোজ নামে একটি দাহ্য রাসায়নিক পদার্থে আপনা থেকেই আগুন ধরে যায়। তা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের গুদামে, এবং প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ঘটে।

অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা ভুলবশত: পানি দিয়ে সেই রাসায়নিক পদার্থের আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরো গুরুতর আকার নেয়। ওই ঘটনায় যারা মারা গিয়েছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিল অগ্নিনির্বাপন কর্মী। বিস্ফোরণটি এত শক্তিশালী ছিল যে তাতে ছোট আকারের ভূমিকম্প পর্যন্ত হয়েছিল।

বৈরুতের বিস্ফোরণটিও এত শক্তিশালী ছিল যে প্রায় দেড়শ’ মাইল দূরের সাইপ্রাস দ্বীপের বাড়িঘরের দরজা-জানালা তাতে কেঁপে উঠেছিল বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। সূত্র: বিবিসি

ঢাকা টাইমস/০৫আগস্ট/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :