মহাসাগরজয়ী আলিম দেশের জন্য কাজ করতে চান

মোঃ জাকির হোসেন, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
| আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২০, ১৩:৫৭ | প্রকাশিত : ০৬ আগস্ট ২০২০, ১৩:৪৩

গ্রামের ছেলে আব্দুল আলিম। সাগর-মহাসাগর জয় করে চলেছেন একের পর এক। দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ ও তার ভেতরের যাত্রীসহ মালামাল সফলতার সঙ্গে উদ্ধার করে বিভিন্ন দেশে খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। প্রায় ১৫টি দেশে উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তবে দেশে এর আগে বিভিন্ন উদ্ধার কাজে সফল হলেও দেশের মানুষ তাকে চেনে না।

উদ্ধারে দেশে-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া আব্দুল আলীম নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কাঙ্গালপাড়া শ্বাষকান্দর এলাকার আবেদ আলির ছেলে। নিজ পেশার মাধ্যমে তিনি দেশের জন্য কাজ করতে চায়।

সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত আব্দুল আলিম জানান, দেশের মানুষ তার কথা জানলে হয়তো দেশের নৌ-দুর্ঘটনাগুলোতে ডাক পেতেন তিনি। দেশে একাধিক নৌবন্দরের কারণে তার ডাইভার পেশাটি শিল্প হিসেবে গ্রহণ করলে এখান থেকেও ব্যাপক রেমিট্যান্স আসতো। আয় হতো কোটি কোটি ডলার। তবে দেশে বেসরকারিভাবে এর প্রচারণা না থাকায় ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষিত জনবল নেই।

এ বিষয়ে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘সরকার ইচ্ছে করলে ফায়ার সার্ভিসের মতো একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে। যারা নৌ দুর্ঘটনায়, জাহাজ উদ্ধার, জাহাজ ফিটনেসে ব্যবহার হতে পারে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে নতুন আরেকটি পরিচিতি এনে দেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।’

আব্দুল আলিম বাড়ির পাশে মোহাম্মাদিয়া শাহ সিকান্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর সৈয়দপুর রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯৭ সালে সৈয়দপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে নৌবাহিনীর খুলনা তিতুমীর ঘাটিতে যোগদান করেন তিনি। সেখানে দীর্ঘ ১৫ বছর চাকরি শেষে ২০১২ সালে অবসর নেন তিনি। এরপর চলে যান সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুর সরকার তার আগের সার্টিফিকেট ও অভিজ্ঞতার অবমুল্যায়ন করলে ওই দেশ থেকে ডাইভারে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন আব্দুল আলীম। বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকায়ও। এরপরই ১২০ ফিট পানির নিচে একটি জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় আলিমের নেতৃত্বে পানির নিচ থেকে জাহাজটিকে কেটে কেটে তোলা হয়। মূলত এ কাজের মাধ্যমেই উদ্ধার কাজের চাকরি জীবন শুরু করেন তিনি। পেশাগত প্রয়োজনে এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেট ও সম্মাননা স্বীকৃতি অর্জন করেছেন তিনি।

এরপর ইরানী শিপ এমভি- শাহারাজ প্রায় ৩৫০০ কন্টেইনার নিয়ে চীন যাচ্ছিল। জাহাজটি ইন্দোনেশিয়ার কাছে পৌঁছালে পানির নিচে কোরালে লেগে আটকে যায়। এসময় জাহাজটিকে কোনোভাবেই সামনে টানা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে উদ্ধারের জন্য সিঙ্গাপুরের সাহায্য চাওয়া হয়। তিন দিন পর আলিমের নেতৃত্বে উদ্ধারকারী সিঙ্গাপুর টিম উদ্ধার কাজে নেমে যায়। সেখানে সফলতার সঙ্গে উদ্ধার কাজ সমাপ্ত করেন তিনি। এরপর মালদ্বীপে ও ইন্দোনেশিয়া কাজ করেছেন তিনি। এর ফলস্বরূপ বর্তমানে হংকং, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় জাহাজ উদ্ধার করে চলেছেন। তার কাজের ধরন হচ্ছে শিপ স্যালভেস।

এর আগে, দেশে চাকরি জীবনে তার ব্যাপক সফলতা রয়েছে উদ্ধার কাজে। বাংলাদেশে মিতালী-৩ লঞ্চ ২০০৩ সালে যাত্রাবাড়ীতে ডুবে যায়। শত লোক নিখোঁজ হয়। নৌবাহিনীতে থাকা অবস্থায় আলিম এ উদ্ধারকারী দলে ছিল। এ দুর্ঘটনায় মরদেহ উদ্ধার করা হয় ১৩০ জনের। ২০০৪ সালে বরযাত্রীবাহী নৌকা ডুবে যায়। সেখানেও আলিমের নেতৃত্বে উদ্ধার কাজ চালায়। ২০০৯ সালে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে ডুবে যায়। সেখানেও আব্দুল আলিম উদ্ধার কাজ চালায়।

জানা গেছে, সমুদ্রে পাঁচ বছর পরপর জাহাজের ফিটনেস পরীক্ষা হয়। একটি জাহাজকে ডকিং করলে টাকা ও সময় বেশি লাগে। তলদেশে ফিটনেস পরীক্ষায় ডুবুরি ব্যবহার করে ফিটনেস দিতে পারে। চার্জ বড় জাহাজ ১৫ হাজার ডলার আর ছোট জাহাজ ৮ হাজার ডলার। এছাড়া একটি বড় জাহাজের উদ্ধারে ব্যয় হয় ১০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৮০ কোটি টাকার উপরে।

(ঢাকাটাইমস/৬আগস্ট/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :