‘রাক্ষুসী নদী আমার সাজানো সংসার তছনছ কইরা দিল'

মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর)
 | প্রকাশিত : ০৬ আগস্ট ২০২০, ১৭:৫৯

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় রাক্ষসী মধুমতি নদীর ভাঙন তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। বছরজুড়েই নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন চলতে থাকে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এ ভাঙন আরও রুদ্ররূপ ধারণ করে বসতভিটা, ফসলি জমি, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভিটেমাটিসহ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে শত পরিবার।

চলতি বর্ষা মৌসুমে মধুমতি নদীর তীব্র স্রোতের কারণে উপজেলার প্রাচীন জনপদ পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চরনারানদিয়া গ্রামের জিরো পয়েন্ট নামক বৃহৎ স্থানে অন্তত শতাধিক বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত নদী শাসন না করলে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে দক্ষিণ চরনারানদিয়া গ্রাম। ভাঙন ঠেকাতে জরুরিভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এতে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।

এলাকাবাসী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত ২০১৬ সালের শুরু থেকে দক্ষিণ চরনারানদিয়া গ্রামে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়। এরপর থেকে গত চার বছরের ব্যবধানে আগ্রাসী মধুমতির তীব্র ঢেউ আর স্রোতের কারণে দক্ষিণ চরনারানদিয়া গ্রামের অধিকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সহায় সম্পদ হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ চরনারানদিয়া জিরো পয়েন্ট এলাকায় মধুমতি নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি ও ফলদ বৃক্ষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী প্রায় শতাধিক পরিবার। রাক্ষুসী মধুমতির হিংস্র থাবায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সেই সব পরিবারের জীবন সংসার। সবকিছু হারিয়ে একটু মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজতে দিশেহারা হয়ে ছুটছে ক্ষতিগ্রস্ত সেই পরিবারগুলো। এখনও জমির সন্ধানে ভাঙনকবলিতরা খেয়ে না খেয়ে মধুমতির পারে বসে থাকেন। ভাঙনকবলিত এলাকার একমাত্র মসজিদটিও বর্তমানে বিলীন হওয়ার পথে। বালির বস্তা ফেলে মসজিদটিকে কোন ক্রমে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।

নদীপাড়ের বাসিন্দা বিধবা রাবেয়া বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাঙনের স্থান দেখিয়ে বলেন, ওই স্থানে আমার বসতঘর ছিল। হঠাৎ করে ঈদের দিন নদী আমার সাজানো সংসারটারে তছনছ কইরা দিল। দুটি ঘর মুহূর্তেই নিয়ে যায় রাক্ষুসী নদী।

চার সন্তান নিয়ে রেবেকা বেগম এখন ভিটেমাটি ছাড়া। ঠাঁই হয়েছে প্রতিবেশী এক বাড়িতে। রেবেকা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, স্বামী কৃষি কাজ করেন। তার মধ্যে বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে গেল নদী। এখন চার সন্তান নিয়ে কী করব- বুঝতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকে শুনেছি অনেক লোকজনকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমরা সরকারের কাছে সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করছি।

ষাটোর্ধ্ব বাদলী বেগম নামে এক নারী বলেন, অকারণে নদীতে বালুর বস্তা ফেলে টাকা নষ্ট করছে। এতে কোন কাজে আসছে না। তার থেকে এই টাকাগুলো গরিবদের সহায়তা করলে ভালো হয়।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত একই এলাকার সিরাজ মৃধা বলেন, প্রতিবছরই এ নদী ভাঙনে মানুষ দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়; কিন্তু কোন ব্যবস্থা দেখা যায় না। বিভিন্ন নির্বাচনে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার, এমপি মহোদয় এসে পরিদর্শন করে ভোট চান। ভোট নেয়ার পরে আর খোঁজ রাখেন না।

গ্রামের অপর এক বাসিন্দা ইকরামুজ্জামান মিয়া বলেন, মধুমতি নদী ধীরে ধীরে দক্ষিণ চরনারানদিয়া গ্রামকে খেয়ে ফেলছে। এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ গ্রামের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান 'ঢাকা টাইমস'কে জানান, আমার ইউনিয়নের দক্ষিণ চরনারানদিয়া, বাঁশতলা ও দেউলি এলাকায় প্রচুর নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙনের বিষয়ে বহুবার যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। কিন্ত তারা আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, মধুমতি নদীর ভাঙন রোধে প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। করোনার কারণে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। তবে বর্ষা মৌসুমে অস্থায়ীভাবে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/৬আগস্ট/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :