মশার কামড়ে কি করোনা হয়?
এক দিকে করোনাভাইরাসের কারণে মহামারি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে মশার কামড়ে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো ভয়াবহ রোগ ছড়াচ্ছে। এই সময়ে অনেকের মনে প্রশ্ন মশার কামড়ে কি করোনা হয়?
ভাবনার স্বপক্ষে যুক্তিও আছে যথেষ্ট। লকডাউনে এক দিনও ঘর থেকে বের হননি, এমন মানুষও এখন কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন। কোথা থেকে সংক্রমণ আসছে, বোঝার কোনও উপায় নেই। মশায় ভর করে আসছে না তো!
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বা ইয়েলো ফিভারের ভাইরাস যদি মশার মাধ্যমে ছড়াতে পারে, করোনাভাইরাসের না ছড়ানোর কী আছে!
কিন্তু না, ছড়াচ্ছে না, সুখবর দিলেন বিজ্ঞানীরা।
নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে তারা জানালেন, কোভিড রেসপিরেটরি ভাইরাস, ছড়ায় হাঁচি-কাশির ড্রপলেট থেকে।যেহেতু এই ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় না, কাজেই আপাতত যতটুকু জানা গিয়েছে তার ভিত্তিতে বলা যায়, মশার কামড়ে কোভিড হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে ভবিষ্যতে যে হতে পারে না, তা এখনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।
ভারতের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “অদূর ভবিষ্যতে না হলেও সুদূর ভবিষ্যতে এই ভাবে সংক্রমণ হলেও হতে পারে। কারণ, পশুর শরীর থেকে একটা ভাইরাস এসে পতঙ্গের শরীরে ঢুকে পড়ল। তার পর তার মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়াতে শুরু করল, এ ভাবে ব্যাপারগুলো ঘটে না। বাহকের শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাদের বহু সময় লাগে।
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জাপানি এনকেফেলাইটিস রোগের ভাইরাস যেমন শত শত বছরের প্রচেষ্টায় একটু একটু করে মশার শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর রোগ ছড়ানোর মাধ্যম হয়ে উঠেছে ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও তাই। এত দিন জানা ছিল, ম্যালেরিয়া পরজীবীর বাহক প্লাসমোডিয়াম মশার ১০০ প্রজাতির মধ্যে মাত্র চারটি সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সম্প্রতি রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের গবেষণার থেকে জানা গিয়েছে, বহু বহু বছরের প্রচেষ্টায় আরও দুটো প্রজাতি সে ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। করোনাভাইরাসও হয়তো সে ক্ষমতা অর্জন করবে এক দিন, তবে তাতে কত বছর লাগবে, তা জানা নেই এখনও। অতএব ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি সামলাতে মশা থেকে যেমন দূরে দূরে থাকছেন, থাকুন। করোনার কারণে এখনই মশাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”
আমাদের চারপাশে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের উপর মশার প্রজাতি ঘুরে বেরাচ্ছে। তার মধ্যে কোনটা যে কোন রোগ ছড়ায়, তার সিকিভাগও জানা নেই এখনও। তবে এটুকু জানা আছে যে, ভাইরাস ছড়াতে এডিস ও কিউলেক্স মশার কোনও জুড়ি নেই।
গবেষণার কারণে এদের মধ্যে থেকে তিনটি গোত্রের ২৭৭টি মশা বেছে নেওয়া হয়। তাদের শরীরে করোনাভাইরাস ঢুকিয়ে ২৪-৪৮ ঘণ্টা রাখা হয় পর্যবেক্ষণে। তাতে দেখা যায় শুধুমাত্র একটি মশার শরীরেই ভাইরাস জীবিত ছিল ২৪ ঘণ্টা। এটুকু সময়ের মধ্যে বংশবিস্তার করতে পারেনি ভাইরাস। আর বংশবিস্তার করতে না পারলে রোগ ছড়ানোর কোনও প্রশ্ন নেই।
তবে হ্যা, কোনও করোনা রোগী যদি মশার উপর হেঁচে-কেশে দেন বা ভাইরাস-ঠাসা কফ-থুতু মশার গায়ে লাগে এবং সেই মশা শরীরে বসলে ও সেই জায়গায় হাত দিয়ে তৎক্ষণাৎ সেই হাত নাকে-মুখে লাগালে সংক্রমণ হতে পারে, যদি সংক্রমণ ঘটানোর মতো পর্যাপ্ত ভাইরাস থাকে সেখানে, যা স্বাভাবিক অবস্থায় বলতে গেলে অসম্ভবই
ঢাকাটাইমস/৭আগস্ট/এজেড