নিথর দেহ হাসপাতালে, সড়কে পড়েছিল রত্নার সাইকেলটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২০, ১৯:২২ | প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০২০, ১৯:১৫

আবারো সড়কে মৃত্যু। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকা এখনো কিছুটা ফাঁকা। এরমধ্যে সাইক্লিং করার সময় চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশের লেক রোডে প্রাইভেটকার চাপায় নিহত হলেন পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্না। পেশায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও রত্না একাধারে পর্বতারোহী, দৌড়বিদ এবং সাইক্লিস্ট ছিলেন। শুক্রবার সকালে প্রাইভেটকারের চাপায় রেশমার প্রিয় সাইকেলটি পেছন থেকে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।

দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে তার প্রাণ চলে গেলেও পথচারীরা তাকে দ্রুত নিয়ে যান সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন না ফেরার দেশে চলে গেছেন অদম্য রেশমা রত্না। তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখন সংসদ ভবনের পেছনের সড়কের মাঝখানে পড়ে ছিল সাইকেলটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, রত্নার রক্তে লাল হয়ে যায় সড়ক। সেখানে ইট দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়। পাশেই ভেঙে যাওয়া সাইকেলটি। যেটিতে চড়ে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতেন রত্না। পরে সেটি পুলিশ জব্দ করেছে।

এদিকে রত্নার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের প্লাটফর্ম ‘এসএসসি ২০০২-এইচএসসি ২০০৪’ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য ছিলেন রত্না। তার মৃত্যুর পর গ্রুপটিতে অনেকেই তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন। সড়কে মৃত্যু বন্ধে অনেকেই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের লাদাখে অবস্থিত স্টক কাঙরি পর্বত এবং ৩০ আগস্ট কাং ইয়াতসে-২ পর্বতে সফলভাবে আরোহণ করেন রত্না। দুটি পর্বতই ছয় হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের পাহাড় কেওক্রাডংয়ের চূড়া স্পর্শ করার মাধ্যমে শুরু হয় রেশমা রত্নার অভিযান। ওই বছরই মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশিতে অবস্থিত পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টিইনিয়ারিংয়ে যান তিনি। কিন্তু অ্যাডভ্যান্স বেজক্যাম্পে যাওয়ার পর তার পায়ে ফ্র্যাকচার হয়। দেশে ফেরার পর সুস্থ হতে লেগে যায় দীর্ঘদিন। পরবর্তী সময়ে নিজ উদ্যোগে সফলভাবে পর্বতারোহণের মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি।

রত্নার বন্ধু মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, আমাদের বন্ধুদের গ্রুপে আমি গর্ব করার মতো অনেক বন্ধু পেয়েছি। এর মধ্যে গর্ব করার মতো একজন রেশমা নাহার রত্না। ও ব্যতিক্রমী কারণ একজন মেয়ে হয়েও পর্বতারোহণ করত। সাইকেল চালাত, রান করত। ও আমাদের দেশের অনেক মেয়ের অনুকরণীয় ছিল, অনুপ্রেরণা ছিল। আর কোনো পর্বত জয় করবে না, একসঙ্গে আর দৌড়ানো হবে না, আর কোনোদিন দেখা হবে না।

০২-০৪ এর সদস্য জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, খুব অল্প দিনেই বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। দেখা হয়েছিল একবারই। আর কখনো দেখা হয়নি শুধু কথা হয়েছে। আর দেখাও হবে না, কথাও হবে না।

গ্রুপের আরেক সদস্য ফেরদাউস সুমন লিখেছেন, আমাদের জীবন এত ছোট কেন? অনেক ইচ্ছা পূরণের আগেই রত্না চলে গেলে না ফেরার দেশে! বন্ধু রেশমা সদা হাস্যোজ্জল অনেক ফ্রেন্ডলি মানুষ। আমাকে অনেক মোটিভেশনাল স্পিস দিতো। ওর হাসি মুখের মাঝে কী যেন এক অজানা কষ্ট চেপে রাখতো। পাহাড় পর্বতে ঘুরতে যাওয়া নিয়ে ওর অনেক প্লানের গল্প করতো।

(ঢাকাটাইমস/০৭আগস্ট/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :