করোনাকালে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে সিটি ব্যাংক

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০২০, ১৯:২৭

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে ঋণ সুদহার কমিয়েও বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে সিটি ব্যাংক।এই সময়ে ব্যাংকটির নতুন আমানত, সম্পদ, ইকুইটি ও ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। কমেছে খেলাপি ঋণ।

ঋণ বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত সিঙ্গেল ডিজিট অর্থাৎ ৯ শতাংশ সুদহার গত ১ এপ্রিল থেকে বাস্তবায়নের ফলে বছরের প্রথমার্ধে ঋণসুদ থেকে ব্যাংকটির আয়কমলেওগত বছরের ডিসেম্বর থেকে ঋণপ্রবাহে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটি।

প্রথমার্ধে ঋণের সুদ থেকে সিটি ব্যাংকের আয় দাঁড়িয়েছে ১২৪৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের জুনের চেয়ে ৩৫.৭ কোটি টাকা কম। এই সময়ে গ্রাহকের আমানত সুদ বাবদ ৮৪০.২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে ব্যাংকটি। গত বছরের জুন মাসের তুলনায় এর পরিমাণ ৮১.৭ কোটি (১০.৮ শতাংশ) বেশি।

দেশের এই অন্যতম বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সরকারি তহবিল নির্ভরশীল সুদহীন সেবাখাত থেকে ৪৬১.৭ কোটি টাকা আয় করেছে ব্যাংকটি। এই ক্ষেত্রেও গত বছরের জুন হিসেবে ৪৬.১ কোটি টাকা বেশি আয় এবং বার্ষিক ১৪.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

তবে করোনা মহামারি প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে অর্থনীতির ধীরগতি এবং কমতি সুদহার বাস্তবায়নে গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথমভাগের মুনাফায় ১৭.২ শতাংশ ঘাটতি হয়েছে ব্যাংকটির।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, করোনাকালে পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও লোকবল অপরিবর্তিত রাখায় বছরের প্রথম ভাগে আয় কমেছে। পরিচালন ব্যয় ৪৬ কোটি টাকা বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের জুনের তুলনায় নিট আয় কমেছে ৫৭.৭ কোটি টাকা।

ব্যাংকের ব্যবসা বাড়লেওআয় কমার পেছনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতি বাস্তবায়ন এবং করোনাকালীন ব্যবসা খাতের সার্বিক নেতিবাচক প্রভাব এতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন মাসরুর আরেফিন।

তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির মোট ঋণের ৫.৮ শতাংশ খেলাপি থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে গত জুন নাগাদ সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৫ শতাংশ। আগামী দিনে তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং, উইমেন ব্যাংকিং এবং খুচরা পর্যায়ের সেবা কম খরচে আমানত সংগ্রহে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।

সিটি ব্যাংক ঋণসুধের হার সিঙ্গেল ডিজিট করলেও গ্রাহক আমানতের সুদের গড় হার অপরিবর্তিত (৫.৫ শতাংশ) রেখেছে। গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে মোট ২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা নতুন আমানত সংগ্রহ করেছে ব্যাংকটি।

এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে আমানত গত ছয় মাসে ১৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একই সময়ে নারী গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৭.৬ শতাংশ।

জানা গেছে, জানুয়ারি-জুন সময়কালে সিটি ব্যাংকের মূল সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৪৪৫১ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। এই সময়ে ব্যাংকের ইকুইটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬০৭ কোটি টাকা, যা ২.২ শতাংশ বেশি। ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সার্বিক ঋণপ্রবাহ গত বছরের জুনের তুলনায় ১৮.৩ শতাংশ বেড়েছে এ ব্যাংকে।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও জানান,  জুন মাস পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের এসএমই সেবা কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৬ এবং এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রের পরিধি বেড়েছে ২১.৭ শতাংশ।

করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনীতিকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রণোদনা অর্থায়ন বাস্তবায়নে অংশ নিয়েছে সিটি ব্যাংক। তারা এই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে জুন পর্যন্ত ৭৩১ কোটি টাকা বিতরণ করেছে বলে জানা গেছে।

(ঢাকাটাইমস/০৭আগস্ট/মোআ)