এক বছরেও শেষ হয়নি প্লট জালিয়াতি মামলার তদন্ত

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০২০, ২১:৩৪

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা এলাকার আটটি সরকারি বাণিজ্যিক প্লট জালিয়াতির অনুসন্ধান চলে টানা ছয় বছর। এরপর গত বছরের ২ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক আল-আমিন বাদী হয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। কিন্তু প্রায় এক বছরেও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি।

অভিযোগকারীরা বলছেন, ২০০৫ সালের চাঞ্চল্যকর এই প্লট জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পার হয়ে যায় প্রায় ৬ বছর। অভিযোগ শেষে মামলা হলেও তার তদন্ত শেষ হয়নি এক গত বছরেও। চাঞ্চল্যকর এই দুর্নীতির মামলাটির তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারী সুমন চৌধুরী।

তিনি বলেন, একটা প্রমাণিত দুর্নীতি মামলার তদন্তের নামে এভাবে সময় ক্ষেপন হতে থাকলে কেউ দায়িত্ব নিয়ে অভিযোগ করতে এগিয়ে আসবেন না। দুর্নীতিবাজরা বিচারের মুখোমুখি না হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিও থামবে না।    

অভিযোগকারী সুমন চৌধুরী আরও জানান, ২০০৫ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে চন্দ্রিমা এলাকার ৮টি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। তিনি ২০১৪ সালে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেন। এরপর ৬ জন কর্মকর্তা বদল শেষে ৬ বছর পর ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সর্বশেষ অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক আব্দুল করিম মামলার অনুমোদন চেয়ে প্রতিবেদন দেন। অনুমোদন শেষে গত বছর ২ অক্টোবর দুদক দুর্নীতির মামলাটি করেন।

মামলার অভিযোগে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাজশাহীর চন্দ্রিমা বাণিজ্যিক এলাকার ৫০ দশমিক ৬৭ কাঠা আয়তনের ৮টি বাণিজ্যিক প্লট প্রতিযোগিমূলক দরে বরাদ্দের জন্য একটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। আটটি প্লটের বিপরীতে মাত্র আটটি আবেদনই জমা পড়ে। তড়িঘড়ি করে আবেদনকারীদের প্রত্যেককে সাড়ে ৬ কাঠা করে আয়তনের কোটি টাকা মূল্যের একটি করে বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে মাত্র ৬ দিনের মাথায় ২০০৬ সালের ২ জানুয়ারি সাধারণ সভা ডেকে প্লট বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয়।

এদিকে অভিযোগের পর দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে অভিনব উপায়ে সরকারি প্লট জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগকারী সুমন চৌধুরী ও দুদকের অনুসন্ধান তথ্যানুসারে, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত দুর্নীতি। যে পত্রিকাটিতে প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার দেখানো হয়েছিল সেটি ছিল একটি নকল কপি। একই দিনে প্রকাশিত পত্রিকাটির যেসব কপি বাজারে ছাড়া হয়েছিল, সেইসব পত্রিকাতে বিজ্ঞপ্তিটি ছিল না। পুর্বপরিকল্পিতভাবে নকল পত্রিকা ছাপিয়ে বিজ্ঞপ্তিটি গোপন করা হয়, যাতে প্লটগুলোর জন্য একাধিক আবেদনকারী আবেদন জমা করতে না পারেন। যারা আবেদন করেছিলেন এবং বরাদ্দ পেয়েছেন- তারাও এই দুর্নীতির সঙ্গে আগে থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন। এই দুর্নীতির ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়। 

সূত্র মতে, ওই সময় প্রতি কাঠা জমি মাত্র ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয় গ্রহিতাদের। যদিও ওই সময় চন্দ্রিমা এলাকার জমির প্রতি কাঠার মূল্য ছিল ২০ লাখ টাকা করে।  অস্বাভাবিক এই কম দরে গোপনে প্লটগুলো বরাদ্দের ফলে কাঠা প্রতি সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ১৮ লাখ টাকা করে। মোট ৫০ কাঠা জমিতে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ কোটি টাকা।

দুদকের অনুসন্ধান ও মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, এই প্লট জালিয়াতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, আরডিএর সাবেক চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক এস্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক,  হিসাবরক্ষক রোস্তুম আলী, আরডিএর উচ্চমান সহকারী পদ থেকে চাকরিচ্যুত ও বর্তমানে অন্য দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকা মোস্তাক আহমেদ, প্লট গ্রহিতা এনামুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শোয়েব আহমেদ সিদ্দিকী, ডা. এসএম খোদেজা নাজার বেগম, ডা. রবিউল ইসলাম স্বপন, মাহফুজুল হক ও খায়রুল আলম। এই মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে।

দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, শিঘ্রই মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে। তবে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে নাকি- তাদের অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে, তা স্পষ্টভাবে জানাননি তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৭আগস্ট/এলএ)