রেণু মানে রেখে যাওয়া সাহস

প্রকাশ | ০৮ আগস্ট ২০২০, ১৯:২৫

ইশতিয়াক আহমেদ জয়

স্বাধীনতা সমুদ্রের উত্তালতা পেরিয়ে সাঁতরে পেরিয়ে যেতে প্রস্তুত মুজিব। সামনে এসে দাঁড়ালেন রেণু─ পেছনের ঢেউজলে ছোঁয়া বালিতে রেখে এলেন পায়ের ছাপ।

তিনি ভাসলেন তরী হয়ে, নাবিক রওনা হলেন পাল তুলে দিয়ে─ ওই যে দূরে, যেখানে স্পষ্ট নয় দুচোখ, স্বাধীনতা সেখানে।

এরপরের ইতিহাস অজানা নয় কারও, কিন্তু জানা হয়নি তারও অনেক আগে, যেমন জেনেছি তার বেশ খানিকটা পরে।

আমাদের সাথে তো আসলে পরিকল্পিত পরিকল্পনার হত্যা হত্যা খেলা শুরু হয়েছিল পুনরায়, সমস্যাটা সেখানেই বেঁধেছিল।

হত্যা করা হয়েছিল বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রস্টা, বলিষ্ঠ উচ্চারণে যুদ্ধকে শুদ্ধ সঙ্গীতে রুপান্তরিত করা এক যাদুকরকে। এরপরে যদিও পুনরায় আশা করা সুসাহস নয়─ কেননা কখনও পরিনাম শুধু মৃত্যু।

কারণ যারা বাঙালি জাতির স্রষ্টার বুকে বন্দুক তুলতে পেরেছে তারা মানুষ নয়। আর অশরীরি অসত্যের বিরুদ্ধে সেই জাতি আর দাঁড়াতে পারে না─ যাদের সাতই মার্চের সেই তর্জনী-হুঙ্কার বন্ধ করে দেওয়া হয় চিরতরে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা─ ‘আপন জনের রক্তের দাগ থেকে জন্মানো এক মহাসাহস’। কারণ সেদিন দৃশ্য ছিল অপরিস্কার। ইতিহাস ছিল শয়তানের হাতে লেখা সৃষ্টিকর্তার আত্মজীবনীর মতোন।

আমাদের জানতে দেওয়া হয় শেখ মুজিবর রহমান থেকে বহমান নদী পর্যন্ত ঠিক কতগুলো যোগসু্ত্র। এখন জানতে পারছি আরও অনেক কিছুই, জানছি প্রতিদিন। ঠিক তেমন জেনেছি বঙ্গবন্ধুকন্যার সাহসের খনির দিশা।

হাসিনার বুকে সাহসের প্রতিধ্বনি লেখা হয়েছিল রেণুর নামে সুতরাং এই গর্জন এবং অর্জন কাঙ্খিতই। প্রতিকূলতায় মানুষ যে যথার্থ যোদ্ধা হয়ে ওঠে─ আমাদের মা, বঙ্গবন্ধুর রেণু তাইই ছিলেন।

এর আগে তো কোনও দিন রাজনীতির মাঠে তাকে দেখা যায়নি। বাঙালি বধূ যেমন হন─ ছিলেন তেমনই। ভাতের টেবিলে সুপরিচিত উপস্থিতি ছিল তার। স্বামী, শশুর, শাশুরিসহ প্রত্যককে নিজ হাতে খাইয়ে আনন্দে ভাসা বাঙালি বধূর সেই চিরায়ত রুপ।

কীভাবে এল এতটা সাহস যা রেণুকে ‘রাতারাতি’ রণাঙ্গনের অগ্রযোদ্ধায় রুপান্তরিত করলো? রাতারাতি? না, রাতারাতি নয়। কেননা বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধের সূত্রপাত মুহূর্তের মাত্র নয়।

এর পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ নির্মমতার গল্প। যে নির্মমতায় রেণু হয়ে উঠেছিলেন রণতরী─ বঙ্গবন্ধু সেই রণতরীর সাহসী নাবিক, যার যাত্রাপথ ছিল বাংলাদেশের দিকে।

হ্যাঁ। বঙ্গমাতার অবদান অস্বীকার করে ‘বাংলাদেশ’ লেখার কোনও উপায় নেই। মুজিবের জেলজীবনে তিনি রাজনীতিতে নেমে এসেছেন─ নিজের গহনা বিক্রির টাকা হাতে দাঁড়িয়েছেন অসহায় কর্মীদের পাশে।

শুধু তাইই নয়, আমরা যে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ কিংবা জেলজীবনে পিতার লেখা বিবিধ বই পড়ছি─ তা লেখার পেছনেও একমাত্র প্রেরণার নাম বেগম ফজিলতুন্নেছা মুজিব।

সমুদ্রজলে রেণু আর মুজিব একত্রে কখনও পা ভিজিয়েছিলেন কি-না খুব জানতে ইচ্ছে করে... এই প্রশ্নের উত্তর না পেলেও উৎসাহ পেয়েছি─ এক অলৌকিক আলোচনার মতোন।

হে জননী...আজ আপনার জন্মদিবসে বাংলাদেশের মুক্ত খামে এক আকাশ ভালোবাসা পাঠালাম... শুভ জন্মদিন বঙ্গমাতা।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কক্সবাজার জেলা শাখা