কক্সবাজারের বিচারবহির্ভূত সব হত্যার বিচার চান গয়েশ্বর

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২০, ২০:১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

কক্সবাজার-টেকনাফ-উখিয়াতে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, বিনা বিচারবিচারে উখিয়া-টেকনাফে ২৬৪ জন মানুষ হত্যা হয়েছে। বিনা বিচারে মানুষ হত্যা যেটা স্বাধীন দেশে হয় না। সন্দেহ করে আপনি মানুষ মেরে ফেলবেন? এটা মেনে নেয়া যায় না।

রবিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক স্মরণসভার তিনি এসব কথা বলেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্মরণে এই সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম।

গয়েশ্বর বলেন, মেজর (অব). সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিষয় পত্রিকায় যে রিপোর্টগুলো দেখলাম তাতে দেখা যায়নি, এই অফিসার উদ্যত হয়েছেন। তিনি অস্ত্র হাতে নিয়ে আসছেন তাও তো না। তাহলে তাকে গুলি করার প্রয়োজন দেখা দিল কেন? আর পুলিশের নিয়ম আছে গুলি করার প্রাথমিকভাবে- আত্মরক্ষার্থে, হাঁটুর নিচে যাতে সে আগাতে না পারে। বুকে গুলি করার অর্ডার তো পুলিশের থাকে না, নিয়মও নেই।

বিএনপি নেতা বলেন, ওসি প্রদীপসহ তার সঙ্গে আরও সাতজনকে কেন ধরলেন? প্রাথমিকভাবে সন্দেহ পোষণ হয়েছে যে, এটা হত্যাকাণ্ড, ইট ওয়াজ নট এক্সিডেন্টাল। না হতে পারে পূর্ব-পরিকল্পিত। তারা আত্মসমপর্ণে গেল কেন? তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আদালত অভিযোগ গ্রহণ করেছে সেজন্য তারা আত্মসমর্পণ করেছে। তারা (পুলিশ) হত্যা মামলার আসামি যদি হয়, আদালত যদি বিশ্বাস করে তারা দায়ী তাহলে তাদের দায়ের করা আসামি কেন জেলখানায় থাকবে? সেই মামলা কেন প্রত্যাহার হবে না। এটা সোজা হিসাব, এটা কঠিন হিসাব না।

গয়েশ্বর বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা যদি হয়, তাহলে আমার দেশের সরকারপ্রধানের কাছে জানতে চাই, দুটি বাহিনী-প্রধান বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য সময় নষ্ট করলেন কেন? আমরা এইটুকু বিশ্বাস করি তাদের সর্বোচ্চ যোগ্যতা আছে বলেই তারা সেখানে আছেন। একজন প্রধানের তো ওখানে যাওয়ার দরকার হয় না। পুলিশ প্রধান ঢাকায় বইসা অর্ডার দিলেই দ্যাটস এনাফ।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা স্তম্ভ দলীয়করণের মাধ্যমে এমন অবস্থায় নিয়ে গেছে যে, মানুষের নিঃশ্বাস ফেলার অবশিষ্ট নাই। আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, আইয়ুবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আজকে আইয়ুব খান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের এই অবস্থা দেখে লজ্জা পেতো। সেই কারণে নীতি-নৈতিকতা, যে গণতন্ত্র মূল্যবোধ-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দেখার জন্য একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল, যুদ্ধ আমরা করেছিলাম, সেই গণতন্ত্র আমরা এখনো পাই নাই। একাত্তরের সেই যুদ্ধ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতীয়তাবাদী দলের দর্শনের প্রতি তার আনুগত্যতার স্মৃতিচারণ করেন বিএনপির এই নেতা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের টেলিফোনে কথা বলা প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী আরও বলেন, রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা হতেই পারে, হওয়াটাই স্বাভাবিক। এরপর থেকে ভারতের সাউথ ব্লক অথবা অন্যরা বলতে শুরু করলেন বাংলাদেশ আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। আমরা কি বলছি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ?

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/০৯আগস্ট/বিইউ/জেবি)