দক্ষিণ কোরিয়াতে ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধস, নিহত ৩০

দক্ষিণ কোরিয়াতে গত কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণ, ভূমিধস এবং বন্যায় কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছে। তবে ১২ জনেরও বেশি লোক নিখোঁজ হওয়ার কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় বিপর্যয় ও সুরক্ষা কেন্দ্র।

বন্যা পরিস্থিতির কারণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী চুং সি-কিউন দু’টি প্রদেশকে ‘দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। গত সাত বছরের মধ্যে দেশে এটিই সবচেয়ে বড় বন্যা। করোনা পরিস্থিতির কারণে উদ্ধার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জনাকীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। তবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কেন্দ্রগুলোতে থাকার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় দুর্যোগ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তারা।

দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইওনহাপ জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে রাজধানী সিউলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় বড় ধরনের ফাটলসহ সড়কে রাখা গাড়িও পানিতে তলিয়ে গেছে।  দেশজুড়ে প্রায় এক হাজার ৫০০টি বাড়ি ভূমিধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় এক হাজার সড়ক ও সেতু । ১১ টি প্রদেশ ও নগরীর ৫,৯০০ জনেরও বেশি লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে ।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘায়িত বর্ষা মৌসুমের মধ্যে ১ আগস্ট থেকে সারাদেশে মুষলধারে বৃষ্টিপাত বিপর্যয় সৃষ্টি । পানির নিচে তলিয়ে গেছে প্রায় ৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি ।

কেন্দ্রীয় বিপর্যয় ও সুরক্ষার তথ্য অনুসারে, শুধু  গত তিন দিনেই ১৩ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অনেক মানুষ। আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছ, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় সম্ভবত দক্ষিণ বন্দর শহর বুশান, সিএমের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের লোকদের বন্যা বা ভূমিধসের জন্য পুরোপুরি সতর্ক থাকতে বলেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, আজ  রবিবার সকাল পর্যন্ত সারাদেশে সাতটি রেলপথ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, এবং গাওয়াংজু বিমানবন্দরে ১০ টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত গত কয়েকদিনে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ডুবে গেছে। গত তিন দিনের সময়কালে দক্ষিণ জেওলা প্রদেশের দামায়াং কাউন্টিতে মোট ৬১২ মি.মি বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে, গওয়াংজুতে ৫৩৩.৭ মি.মি এবং হাওয়াসুন কাউন্টিতে ৫১৭.৫ মি.মি বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

রাষ্ট্রীয় আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া চলতি সপ্তাহে মৌসুমের পঞ্চম টাইফুন আঘাত হানতে পারে। যা দেশের বন্যাকবলিত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত নিয়ে আসবে। কোরিয়ান আবহাওয়া প্রশাসনের (কেএমএ) খবরে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়, যা ওকিনাওয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে রবিবার শুরুর দিকে শুরু হয়েছিল এবং উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে।

আগামীকাল  সোমবার সকাল দশটার দিকে জেজু দ্বীপের দক্ষিণে ৩৫০ কিলোমিটার মধ্য দিয়ে প্রবল ঝড় বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেলা ১১ টার দিকে একই দিনে, এটি বুশান থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, সিওলের প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে এর গতিবেগের পূর্বাভাস নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া আগামী দিনগুলিতে আরো ভয়াবহ বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে তীব্র বাতাস এবং ভারী বর্ষণ সহ দক্ষিণ গিয়ংসাং প্রদেশ এবং জেজু দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রান্তরে ঝড় তুলবে । কেএমএ দক্ষিণ-পূর্ব সমুদ্রের উপকূলের লোকদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন এবং বিপজ্জনক জোয়ারের জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জুলাইয়ের শুরু থেকে দীর্ঘায়িত বর্ষা মৌসুমের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রবল বর্ষণে ভুগছে দক্ষিণ কোরিয়া।

(ঢাকাটাইমস/৯আগস্ট/কেএম)