বরখাস্ত হওয়া কাউন্সিলর এবার হতে চান মেয়র

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০২০, ১৮:২১

রাজশাহীতে বরখাস্ত হওয়া এক পৌর কাউন্সিলর এবার ‘মেয়র হওয়ার’ চেষ্টায় নেমেছেন। এবার ঈদুল আজহার আগে পৌরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন তিনি। ব্যবহার করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতাদের নাম ও ছবি। অথচ ক্ষমতাসীন দলটি থেকে আরও আগেই বহিস্কৃত হয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌর এলাকার আব্দুল্লাহীল কাফী।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন কাফী। কিন্তু নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে।

জানা গেছে, কাফী আগে যুবলীগ করতেন। কিন্তু ২০০৮ সালের দিকে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পৌর মেয়র পদে তিনি নির্বাচন করেন। তখন তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। ওই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। পরেরবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। এরই মধ্যে একজন চরমপন্থী ক্যাডারও হিসেবেও কাফীর পরিচয় প্রকাশ পায়। তবে গেল বছরের ৯ এপ্রিল পাবনার শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু যুবলীগে আর পদ ফিরে পাননি। এখনও তিনি আওয়ামী লীগ বা এর কোনো সহযোগী সংগঠনের পদে নেই। অথচ ঈদ শুভেচ্ছার ফেস্টুনে তিনি ব্যবহার করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে স্থানীয় একাধিক নেতার নাম ও ছবি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

কাঁকনহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে কাফীর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি দলের কর্মীও নন। ২০০৮ সালে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে দলের সকল প্রকার কর্মকাণ্ড থেকে বহিস্কার করা হয়। কাফী যা করছেন তা ব্যক্তিগতভাবে।’

কাঁকনহাট পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘একজন চরমপন্থী জাতির পিতা, দলীয় প্রধান, সংসদ সদস্য ও মেয়রের ছবির সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে ফেস্টুন বানান। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। কাফী এ ধরনের কোনো কাজ করতে পারেন না।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ বলেন, ‘অনেকেই জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন তৈরী করছেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। বিশেষ করে স্থানীয় নেতাদের ছবি ব্যবহারের পূর্বে অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন।’

কাঁকহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আবদুল মজিদ বলেন, ‘কাফী তার ফেস্টুনে নিজেকে কাউন্সিলর হিসেবেও পরিচয় দিয়েছেন। অথচ তিনি স্থায়ীভাবে বহিস্কৃত। তাই কাউন্সিলর পরিচয়ও তিনি দিতে পারেন না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে পৌরসভা থেকে জানানো হবে।’

মেয়র বলেন, ‘আমার কাছেও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগই আসে। তার কর্মকাণ্ড পৌরসভার সুনাম ক্ষুণ্ন করছে এ কথা সত্য। এ নিয়ে আমাদেরকেও অনেক সময় বিব্রত হতে হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় কাফী পৌরসভার ভিজিএফের গম বিতরণের সময় লুট করে নিয়ে যেতে চান। তখন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। জমি দখলের আরেকটি মামলায় তার দুই বছরের কারাদণ্ড হয়। ‘লাল-সবুজ’ নামে একটি সংস্থা খুলে গ্রাহকের আমানতের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালে সংস্থাটির কার্যক্রমের এক তদন্ত প্রতিবেদনে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ নেওয়াজ লিখেছিলেন, আইন লঙ্ঘন করে এটি পরিচালিত হয়। সংস্থাটি থেকে জনগণের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে অন্যের জমি দখলেরও। এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রবিবার দুপুরে আব্দুল্লাহীল কাফীকে ফোন করা হয়। বরখাস্ত হওয়ার পরও ফেস্টুনে কাউন্সিলর লেখা কেন, জানতে চাইলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :