করোনা ও বন্যা

গ্রামীণ অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২০, ০৯:৫৫

রহমান আজিজ

করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে অনেক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের প্রায় অর্ধেক অঞ্চল জুড়ে বন্যা। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, যে মানুষগুলো শহরে কাজ হারিয়ে গ্রামে গেছেন, তাদের জন্য গ্রামে কাজ পাওয়া সহজ হবে না। ফলে গ্রামের শ্রমবাজারে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মজুরি কমে যেতে পারে। গ্রামে যাওয়া মানুষগুলো যদি গ্রামে কাজ না পায়, তাহলে গ্রামের সামাজিক সংকট আরও বেড়ে যাবে।

বন্যায় মৎস্য, গবাদি পশু ও পোল্ট্রি খাতের পাশাপাশি কৃষি খাতের শস্য ও অশস্য উভয় খাত চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা যদি আরও কিছুদিন থাকে, নতুন করে আবাদ করা নিয়েই সমস্যা হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি বর্তমানে বেশ দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। একদিকে করোনাভাইরাস, অন্যদিকে দেশব্যাপী ভয়াবহ বন্যা। এই দুই দুর্যোগের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে।

তিনি বলেন, করোনা ও বন্যায় দুই ধরনের ক্ষতি হয়েছে। যেমন করোনায় অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। আবার অনেকে শহরে কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি চরম সংকটের মুখে পড়েছে।

আবার বন্যার কারণে প্রান্তিক চাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, তারা অনেকে ঘরে ফসল তুলতে পারেননি। অনেকের ঘরবাড়ি ও গবাদি পশু বন্যায় ভেসে গেছে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর হওয়ায় বন্যার আগ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে শস্য খাত তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে মৎস্য, গবাদি পশু ও পোল্ট্রি খাত কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে বন্যায় কৃষি খাতের শস্য ও অশস্য উভয় খাত চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা যদি আরও কিছুদিন থাকে, নতুন করে আবাদ করা নিয়েই সমস্যা হবে।

এর বাইরে যারা নানা ধরনের দোকান চালায় বা ছোটখাটো ব্যবসা করে, তারা করোনা ও বন্যা দুটির কারণেই ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানান ড. সেলিম রায়হান। বলেন, আর গ্রামীণ অর্থনীতির কৃষিনির্ভরতার কারণেই কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অকৃষি খাতও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘যারা গ্রামে চলে গেছে তারা যেন সেখানে টিকে থাকতে পারে, তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। সরকারের পক্ষে এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে বেশি দিন বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো সম্ভব না, তাই কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।

তাদের চাহিদামতো প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ড. নাজনীন বলেন, মূলত এখন যারা গ্রামে যাচ্ছে তারা কোনো কাজকর্ম নিয়ে যাচ্ছে না। টিকে থাকার জন্য যাচ্ছে। মাছ চাষের প্রশিক্ষণ, গরু পালনের প্রশিক্ষণ, মুরগির খামার, বিভিন্ন সবজি চাষসহ তাদের চাহিদামতো উদ্যোক্তা হওয়ার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্স ফেলো বলেন, ‘যেহেতু আয়ের উপায় কমে গেছে, ফলে শহরে বাড়ি ভাড়াসহ থাকার খরচটা অনেকে মেনটেইন করতে পারছে না। ফলে যাদের সুযোগ আছে তারা গ্রামে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কেউই সুনিশ্চিত পরিকল্পনা নিয়ে যাচ্ছে না। এখন সরকারকে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে হবে। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’

ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/এমআর