করোনায় সেরে ওঠার পর কী কী করবেন?

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২০, ০৯:০৩

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

যেকোনো সংক্রামক অসুখের সঙ্গী হয়ে আসে ক্লান্তি, রোগ সেরে যাওয়ার পরও যা পিছু ছাড়ে না। শরীর-মনের দুর্বলতায় জর্জরিত মানুষ সহজে ফিরতে পারেন না স্বাভাবিক জীবনে, বিশেষ করে আগের ফিটনেস রুটিনে। কোভিডের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে, তবে আরও বেশি মাত্রায়। কারণ করোনা হল রেসপিরেটরি ভাইরাস। সবার আগে সে থাবা বসায় ফুসফুসে। ফুসফুস কমজোর হয়। আর তার ফলে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি হয়ে শরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে ক্লান্তি।

রোগ মাঝারি, এমনকি, মৃদু পর্যায়ে থাকলেও উপসর্গ হিসেবে কখনও এত ক্লান্তি থাকে যে বিছানা ছাড়তেও মন চায় না। আবার এ রোগ এমন যে সেরে যাওয়ার পরও মাস তিনেকের মধ্যে ফিরে আসতে পারে। সে সময় তাকে আটকাতে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ শক্তিই ভরসা, যা ঠিকঠাক রাখতে গেলে সঠিক খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমের সঙ্গে ব্যায়ামেরও প্রয়োজন আছে।

এ কারণেই দুশ্চিন্তা । রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে ব্যায়াম করতে হবে, অথচ শরীর দিচ্ছে না, মন চাইছে না। প্রশ্ন জাগে, কেন কোভিডে ক্লান্তির সময়কাল এত দীর্ঘ? কীভাবে তা কাটিয়ে ফেরা যাবে ব্যায়ামের রুটিনে?

করোনায় সেরে ওঠার পর ক্লান্তি পুরোপুরি না কমা পর্যন্ত ব্যায়ামের জন্য দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই। এতে হিতে বিপরীত হবে। মন অশান্ত হলে ক্লান্তি কমতে আরও সময় লাগবে। কাজেই সব উপসর্গ কমে যাওয়ার পর, কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও যদি ক্লান্তি না কমে, ভাল করে বিশ্রাম নিন। খাওয়াদাওয়া করুন। ঘুমের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। ঘুমের সময় শরীরের ভাঙচুর মেরামত হয় সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে রাত ২টা থেকে ৪টার মধ্যে। সব নিয়ম মেনে চলার পরও কার ক্ষেত্রে ঠিক কত দিনে শরীর ঝরঝরে হবে, তা বলা যায় না। মানুষটির সাধারণ স্বাস্থ্য, বয়স, কত দিন ধরে ভুগেছেন, রোগের জটিলতা ইত্যাদির উপর ব্যাপারটা নির্ভর করে।

করোনা নেগেটিভ আসার পর  খাওয়া-ঘুম ও বিশ্রামের পাশাপাশি অল্প করে হাঁটাচলা শুরু করা দরকার। সুস্থতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আস্তে আস্তে তা বাড়াতে হবে। তাড়াহুড়ো করা চলবে না। মনে রাখতে হবে, সংক্রমণ কমে গেলেও শরীরে প্রদাহের জের রয়ে গেছে, ফুসফুসও আগের চেয়ে কমজোর। খুব ধীরে ধীরে গ্রেডেড এক্সারসাইজ করে তাদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে তবে পুরোদস্তুর ব্যায়াম করা যাবে।

কোন পর্যায়ের রোগ হয়েছে ও কো-মর্বিডিটি আছে কি নেই, তার উপর নির্ভর করে ব্যায়ামের রুটিন। ২০-৫০ বছর বয়সি উপসর্গহীন রোগী যেমন কোয়রান্টিনে থাকার সময় থেকেই হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। একটু জোরে হাঁটা বা স্পট জগিং। ইচ্ছে হলে ও অভ্যাস থাকলে জোর বাড়ানোর ব্যায়াম যেমন, প্লাঙ্ক, সাইড প্লাঙ্ক, পুশ আপ ইত্যাদি। সঙ্গে ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে ডিপ ব্রিদিং। ব্যায়াম করার সময়ও যদি জোরে শ্বাস টানতে ও ছাড়তে পারেন, এতে শরীরে বেশি অক্সিজেন যায়, সারা শরীর ও পেশি বেশি তরতাজা হয়।

জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এক পা-ও এগোনো যাবে না। এদের মধ্যে যারা একেবারে শয্যাশায়ী, তাদের শরীর সচল করার জন্য ফিজিওথেরাপি করতে হতে পারে। ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হালকা প্রাণায়াম করতে হতে পারে। শরীর কিছুটা সেরে ওঠার পর ঘরে একটু একটু করে হাঁটাচলা বাড়িয়ে ও ব্রিদিং এক্সারসাইজ করে ফুসফুস ধাতস্থ হলে তবে অন্য ব্যায়ামের প্রশ্ন।

মৃদু ও মাঝারি উপসর্গের রোগীদের ক্ষেত্রে শরীর ভাইরাসমুক্ত হওয়ার পর ও ক্লান্তি কমতে শুরু করলে প্রথমে হাঁটাহাটি ও প্রাণায়াম দিয়ে শুরু করে শরীর কতটা নিতে পারছে তা দেখে স্ট্রেচিং, যোগা, জগিং, সাইক্লিং ও প্লাঙ্ক, সাইড প্লাঙ্ক, পুশ আপ, ব্রিজ এমনকি কিছু দিনের মধ্যে ওয়েট ট্রেনিংও শুরু করে দেওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে সবটাই যেন শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হয়, বিশেষ করে যাঁদের বয়স বেশি ও কোনও  কো-মর্বিডিটি আছে।

নিয়ন্ত্রিত ব্যায়ামে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, কোভিডের কো-মর্বিডিটির প্রকোপ কম থাকে। বাড়ে ফুসফুসের কার্যকারিতা। করোনার মতো রেসপিরেটরি ভাইরাসের প্রকোপ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে গেলে, যার বিরাট প্রয়োজন। তাছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করলে ভাল ঘুম হয়, তরতাজা হয় শরীর-মন, কমে মুড সুইং ও মানসিক চাপ, এই মুহূর্তে, যখন কোভিড নিয়ে আমরা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, তখন এর বিশেষ প্রয়োজন আছে।

(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/এজেড)