পুলিশের প্রতি আস্থা ফেরানো জরুরি

মুজিব রহমান
| আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২০, ১৪:১২ | প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট ২০২০, ১১:৪৯

সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফ থানার প্রত্যাহারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গ্রেপ্তার হয়েছেন। কক্সবাজারের এসপি ও আরো কয়েকজন ওসির বিরুদ্ধেও ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। কক্সবাজারের ওসিরা কি ব্যতিক্রম? না এটাই বাংলাদেশের চিত্র। কক্সবাজারের উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মর্জিনা আকতারের বিরুদ্ধেও ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ব্যতিক্রম বলার সুযোগ নেই। ওসি প্রদীপকে নিয়ে এতো বিপুল আলোচনার মধ্যেও কি ওসিগণ থেমে আছেন? কয়েকটি ঘটনা এর মধ্যেই প্রকাশ হলো-

১। লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম ঘুষের টাকা নেওয়ার আগে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে নেন। ঘুষ লেনদেনের এমন একটি ভিডিও এরই মধ্যে লালমনিরহাটে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, লালমনিরহাট সদর থানার একটি পারিবারিক মামলার আসামি পক্ষের কয়েকজন মামলাটির বাদীকে হেনস্তা করার কৌশল জানতে ওসি মাহফুজ আলমের কাছে এসেছেন। কৌশল হিসেবে ওসির পরামর্শ মোতাবেক তারা মামলাটির বাদীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ ও ১০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছেন। অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে ওসিকে দিতে হবে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তাকে আরো তিন হাজার টাকা দিতে বলেন ওসি।

২। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার ওসিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। গত সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালতে মামলাটি করা হয়। ভুক্তভোগী কাপড় ব্যবসায়ী মো. সোহেল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

৩। রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে এক যুবককে তুলে নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গোলাম মোস্তফা নামের ওই যুবক বলছেন, ডিবি কার্যালয়ে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) বেলায়েত হোসেন।

পুলিশ কি জনগণের বন্ধু? কীভাবে বলি? আজ মামলা করার সুযোগ থাকলে হাজার হাজার মামলা হবে। হাজার হাজার ক্রশফায়ারের অনুসন্ধান করলে বহু লোমহর্ষক ঘটনাই প্রকাশিত হবে। দরিদ্র সাধারণ মানুষের পক্ষে পুলিশের সহায়তা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে থানায় যেতে পারে না। তাদের ভয়- বাঘে ছুলে আঠারো ঘা আর পুলিশে ছুলে ছত্রিশ ঘা। তারা উল্টো পুলিশের হাত থেকেই বাঁচার চেষ্টা করে। পুলিশকে ভরসার জায়গা মনে করে না। আজ টেকনাফের যে চিত্র আমরা পাচ্ছি তা ভয়াবহ ও বিপর্যয়পূর্ণ। প্রদীপ-মর্জিনাদের দিয়ে আমরা কি করবো? আমরা উল্টো তাদের হাত থেকে মুক্তি চাই।

আজ দেশ থেকে অসংখ্য মেধাবী ও প্রগতিশীল তরুণ/যুবক দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। পুলিশ তাদের ডেকে ডেকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। তারা উগ্রপন্থী মৌলবাদীদের হাতে খুন হলে পুলিশের ওপর দায় যাতে না পড়ে সেজন্যই মেধাবীদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সমাজ বদলের জন্য এই তরুণদের খুবই দরকার ছিল। স্থবির সমাজে গতি আনতে পারতো তারা। দেশের সাধারণ জনগণের কাছে পুলিশের ভাবমূর্তি ইতিবাচক নয়। অথচ পুলিশের প্রতি আস্থা না রাখতে পারলে সমাজে সভ্য মানুষ বাস করতে পারবে না।

পুলিশের প্রতি আস্থা ফেরানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতেই পুলিশ বিভাগের সংস্কার দরকার। অন্তত ওসিদের নিয়োগ হোক স্বচ্ছ ও সরাসরি। মেধাবীদের সুযোগ দিয়ে তাদের সৎ থাকতে বাধ্য করা হোক। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক অপরাধীদের বিরুদ্ধে। টেকনাফের নতুন ওসির তৎপরতা আমাদের কাছে নেতিবাচক বার্তাই দিল। সেনাবাহিনী-র‌্যাব নয় আমরা পুলিশের ওপরই ভরসা করতে চাই।

লেখক: সভাপতি, বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ

ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :