ডাক্তারের সেবা পেতে যা জানা দরকার
প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২০, ১৭:৫৫
দেশের অনেক মানুষের ধারণা একজন ডাক্তার যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো জায়গায় যেকোনো রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে বাধ্য। এটা বাস্তবে সত্য নয়। এদেশের ডাক্তাররা অনলাইনে অফলাইনে ঘরে বাইরে, রাস্তায়, গাড়িতে বসে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সেটা তাদের মহানুভবতা। এটাকে কোনো অবস্থায় তাদের কর্তব্য কিংবা দায়বদ্ধতার ফেলা যায় না।
অনেক মানুষ ডাক্তারদেরকে ফোনে কিংবা রাস্তা ঘাটে যেখানেই পায় নিজের, পরিবারের, এমনকি দূরসম্পর্কে কারো সমস্যা বলেই চিকিৎসা চেয়ে বসে। এক্ষেত্রে ডা. যদি কোনো কারণে অস্বীকৃতি জানাই আমরা তাকে স্বার্থপর, লোভী ডাক্তার ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষায়িত করে থাকি। আবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ক্রিটিক্যাল রোগী higher center এ রেফার করলে ডা.কে অপদস্থ করি। যেটা কোনোভাবেই ঠিক না।
আবার আড্ডায় কিংবা অনলাইনে অনেকে ডাক্তারের শাস্তি, এমনকি ফাঁসি ও চেয়ে বসি। অন্তরে এমন মানসিকতা পোষণকারী জনগণের কাছে অনুরোধ আগে আপনার অধিকার কিংবা প্রাপ্য কতটুকু সেটা বুঝে নেন তারপর কোনো পেশাকে গালাগাল করেন।
একজন মানবতার খাতিরে করছে বিধায় সেটা করতে উনি বাধ্য সেটা ভেবে ভুল করবেন না। তাহলে কখন একজন ডাক্তার রোগীকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করতে পারে? আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডাক্তারদের এসব অধিকার সবার জানা দরকার-
১. ডাক্তার যদি নিজেই সুস্থ না থাকে।
২. পূর্বে সেই রোগ সম্পর্কে যদি তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে ডাক্তার চাইলে এমন রোগের নতুন রোগীকে চিকিৎসা নাও দিতে পারেন।
৩. নিজের কর্মঘণ্টা ও কর্মস্থলের বাইরে। বাহিরে তিনি চাইলে রোগী দেখতেও পারেন, নাও পারেন।
৪. রোগীর বাড়ি গিয়ে রোগীকে দেখার কোনো বাধ্যবাধকতা ডাক্তারের নেই।
৫. অনেক সময় ইমার্জেন্সি মুহূর্তে একজন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয় মানবিকতা বিচার করে।
তবে এর মানে এই নয় যে সেই রোগীকে ডাক্তার তার নিজস্ব রোগী হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনিই সেই রোগীর চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন। তিনি চাইলে প্রাথমিক ম্যানেজ করার পর সেই রোগীকে অন্য হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন।
৬. প্রাইভেটভাবে দেখালে ডাক্তারের ফি যদি না দেয় কিংবা তিনি যেভাবে চিকিৎসা দিতে চান সেটা যদি রোগী মেনে না নেয়, তাহলে একজন ডাক্তার চাইলে সেই রোগীকে চিকিৎসা নাও দিতে পারেন।
৭. যদি একজন ডাক্তার মনে করেন যে তিনি সেই রোগের চিকিৎসা দিতে পারবেন না কিংবা চিকিৎসা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় সুবিধা, যন্ত্রপাতি, ওষুধ, স্টাফ ইত্যাদি তার কাছে নেই, তাহলে তিনি চাইলেই রোগীকে সেখানে চিকিৎসা না দিয়ে উপযুক্ত জায়গায় রেফার করে দিয়ে পাঠাতে পারেন।
৮. রোগী যদি ডাক্তারের সাথে দুর্ব্যবহার করে (মানসিক সমস্যা ছাড়া)।
৯. যদি ডাক্তারের নিজের কিংবা পরিবারের ক্ষতি কিংবা জীবননাশের আশংকা থাকে।
১০. চিকিৎসা প্রদানকালে জীবনের নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে।
১১. রোগী নিজেই যদি ক্ষতিকর কোনো ওষুধ চায়।
(তথ্যসূত্র: Medical law and Ethics)।
লেখক: মেডিকেল অফিসার (সিসিইউ), চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল
(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/এসকেএস/জেবি)