সফলতা নিয়ে যত কথা

প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০২০, ১৪:৩৩ | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২০, ১৪:৪২

রবিউন নাহার তমা

সফলতা। ছোট একটি শব্দ। অথচ এর মানে আমরা খুঁজে বেড়াই শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। মাসখানেক আগে এক বন্ধু এবং সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- সফলতার সংজ্ঞা কি? তার সোজাসাপ্টা উত্তর-  বছরখানেক আগেও এ সময়টাতে মনে হতো সফল হতে হলে অনেক টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি দরকার। যেটা এখন আর মনে হচ্ছে না। এখন শুধু মনে হয়, আশপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে ভালো থাকাটাই সফলতা!

কথা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে বসবাসরত একজন পিএইচডি গবেষকের সাথেও। তিনি বলছিলেন, ‘সফলতার নেই কোনো নির্দিষ্ট মাপকাঠি। একসময় যে কাজ বা প্রাপ্তির জন্য নিজেকে সফল ভাববেন, পরবর্তীতে সেটাকে যে মূল্যহীন মনে হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমার কাছে সফলতা মানে হলো ছোট ছোট লক্ষ্যবিন্দুর সমষ্টি। যেখানে একটা বিন্দুর সাথে আপনি আরেকটা বিন্দু জুড়ে দেবেন। এই লক্ষ্যবিন্দুগুলো জুড়ে দেয়ার পথে আপনার বাধা বিপত্তি আসবেই। এভাবে সফলতা ও ব্যর্থতা দুটোকে সাথে নিয়েই আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রকৃতপক্ষে সফলতা বা ব্যর্থতা কোনোটাই স্থায়ী নয়!’

খ্যাতিমান বা বিত্তশালী মানুষদের বিবেচনা করে আমরা নানাজনে সফলতার নানান ব্যাখ্যা দিয়ে যাই। এভাবে সফলতার সংজ্ঞা লোকমুখে নির্ধারিত হয়ে যায়। কিন্তু আসলে কি তাই? একেক পেশার মানুষের কাছে সফলতার সংজ্ঞা একেকরকম। একজন ব্যবসায়ীর যেখানে বাজার দখল করার মধ্যে সফলতা একজন চিকিৎসক আবার তার রোগীকে সুচিকিৎসা দেয়ার মধ্যে খুঁজে পান এটা। প্রতিটা মানুষ ভিন্ন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন। সুতরাং তাদের সফলতার মাপকাঠি ভিন্ন হওয়াটাই শ্রেয়। বিখ্যাত সোশ্যাল সাইকোলজিস্ট এরিন বেকার এ প্রসঙ্গে বলেন -  ‘Success is something that every person can define and design for themselves.’

সফলতা খুঁজতে গিয়ে আরেকটি ভুল আমরা সহজেই করে ফেলি। এটা হলো অন্যের কোনো বিষয়ে সফলতাকে নিজের সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করি। এতে নিজে কতটুকু শ্রম দিয়েছি তা বিবেচনার বাইরে রেখে দিই বেশিরভাগ সময়েই। যেমন-একজন শিক্ষার্থী যে প্রচুর পরিশ্রম করে গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়ে পাস করলো। অন্যজন মাঝে মাঝে বইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে জিপিএ-৪ পেল। এতে যদি সে ব্যর্থতার গ্লানিতে ভোগে তবে সেটা নিতান্তই বোকামি।

কারণ যেমন কর্ম আপনি করবেন তেমন ফলই আপনি পাবেন! সুতরাং অন্যের সাথে নিজের তুলনা করতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা গ্লানি বয়ে আনে। তাছাড়া অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে যাওয়াটা একধরনের ব্যর্থতার পর্যায়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে বিল গেটসের উক্তিটি টেনে আনতেই হয়- ‘Don't compare yourself with anyone in this world.If you do so,you are insulting yourself.’

সফলতার মানে কিন্তু বয়সভেদে পরিবর্তনশীল। একটা বয়সে শিক্ষালাভ করা, আরেকটা বয়সে এসে ক্যারিয়ার এবং শেষ বয়সে এসে জীবনের সুখলাভ করাটাই সফলতা বলে অনেকে মনে করেন। বিভিন্ন জরিপে এই তথ্যগুলোই ফুটে উঠেছে। টিনএজারদের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ যেখানে তাদের পছন্দনীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়াটাকে সফলতা মনে করেন সেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ ত্রিশ বা ত্রিশোর্ধ্ব মানুষ ভালো চাকরি বা ব্যবসা করার মধ্যে সফলতা খুঁজে পান। চল্লিশোর্ধ্ব মানুষ আবার সফলতা খুঁজে পান তার ব্যাংক-ব্যালেন্সের উপর! আর যারা কাজকে ছুটি জানিয়েছেন তারা কিংবা ষাটোর্ধ্ব মানুষের সফলতা দেখেন তার যাবতীয় সুখ আর আনন্দের মাঝে। এভাবে সময়ের সাথে সাথে পাল্টায় মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি-পাল্টায় সফলতার সংজ্ঞা।

সফলতা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই গবেষণা করছে অস্ট্রেলিয়ার টরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে হেলথ, হসপিটালিটি, ডিজাইন, বিজনেস স্টাডিজ ইত্যাদি বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথকভাবে ‘Success Coach’ রয়েছেন। তারাও সফলতা বলতে নিজেকে প্রতিদিন উন্নত করা, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নেয়া, নিজের জীবনের অর্থ ভালোভাবে বুঝতে পারার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

আপনার সফলতা শুধুমাত্র আপনার কাজ দিয়েই সংজ্ঞায়িত। আপনার সুখই আপনার সফলতা। আপনি হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না, নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে নিজের খুশিমনে কাজ করে যাচ্ছেন, সবাইকে নিয়ে ভালো আছেন- এর চেয়ে সুখকর আর কিইবা হতে পারে?

শেষ করবো পবিত্র বাইবেলের একটি কথা দিয়ে। বাইবেলে আছে, ‘সফলতা কোনো অর্জনীয় বিষয়বস্তু নয়, বরং স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসই সফলতা।‘

লেখক: শিক্ষক

ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/এসকেএস