ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন: রাষ্ট্রপতি

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২০, ০৬:৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। তাই আমাদের দায়িত্ব হবে জ্ঞানগরিমায় সমৃদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। তাহলেই আমরা চিরঞ্জীব এই মহান নেতার প্রতি যথাযথ সম্মানপ্রদর্শন করতে পারবো।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এবছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। ২০২১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। এ দুটি জাতীয় অনুষ্ঠান বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে অনন্য মাইলফলক। আমি মনে করি এ দুটি অনুষ্ঠান যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদার সাথে উদযাপনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারবে।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য-আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প-২০২১’, ‘রূপকল্প-২০৪১’ ও ‘ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০’ ঘোষণা করেছেন। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমি দলমতনির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই। আসুন, জাতীয় শোক দিবসে আমরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করি এবং তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আত্মনিয়োগ করি।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশসহ গোটাবিশ্ব আজ করোনা মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। করোনার প্রভাবে সারাবিশ্ব আজ স্থবির হয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তঃদেশীয় যাতায়াতসহ অর্থনীতি এক মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার করোনাপরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি দেশবাসীকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ‘ভয় নয়, সতর্কতা’ এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’

বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ আগস্ট এক কলঙ্কজনক অধ্যায় উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘১৯৭৫ সালের এদিনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদাতবরণ করেন। একই সাথে শহিদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ অনেক নিকট আত্মীয়। এমন ঘটনা কেবল দেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। আমি শোকাহত চিত্তে তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা মহান স্বাধীনতার রূপকার। ১৯৪৮ সালে ভাষার দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বসহ ১৯৫২ এর মহান ভাষা আন্দোলন ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ’৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২ শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬-দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ’৭০ এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাঁকে বারবার কারাবরণ করতে হয়।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। ফাঁসির মঞ্চেও তিনি বাংলা ও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। দীর্ঘ চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এই মহান নেতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করি।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আজ অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে। ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতির পিতার নাম এ দেশের লাখো-কোটি বাঙালির অন্তরে চির অমলিন, অক্ষয় হয়ে থাকবে।’

ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/এমআর