দিনাজপুর রামসাগরে খাদ্য সংকটে চিত্রা হরিণ

শাহ্ আলম শাহী, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট ২০২০, ২০:৪৮

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী রামসাগর দীঘি জাতীয় উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ মায়াবি দূরন্ত চিত্রা হরিণগুলো খাদ্য সংকটে ভুগছে। পর্যটকদের দেয়া খাবার এবং দীঘিতে জন্মানো পছন্দের শাপলা লতা এখন আর না পাওয়ায় অর্ধাহারে-অনাহারে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে হরিণগুলো।

পর্যটকবিহীন কোলাহল মুক্ত নিরিবিলি পরিবেশে ইতোমধ্যে হরিণগুলো নয়টি হরিণ সাবক জন্ম দিয়েছে। তবে এলাকাবাসী ও প্রাণিবিদদের অভিযোগ, ফুরফুরে মেজাজের চঞ্চল চিত্রা হরিণগুলো খাদ্যের অভাবে ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ছে।

চিত্রা হরিণের প্রিয় খাবার শাপলার পাতা ও লতা। জাতীয় উদ্যান ঐতিহ্যবাহী রামসাগর দীঘিতে আগে যে শাপলা লতা জন্মাতো তা খেতে পছন্দ করতো হরিণগুলো। শাপলা পাতা ও লতা হরিণগুলোর খাদ্যের চাহিদা অনেকাংশই মেটাতো।কিন্তু সেই শাপলা আর জন্মায় না দীঘিতে। করোনা পরিস্থিতির আগে টিকেট দিয়ে মাছ শিকারের উৎসব ও ইঞ্জিন চালিত নৌকার অবাধ বিচরণে শাপলা গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

দুই বিভাগের দ্বৈত শাসনে সৃষ্টি হয়েছে এই পরিস্থিতি। রামসাগরের ৬৮ দশমিক ৫৪ একর পাড়ভূমি স্থলভাগ বন বিভাগের আওতায় এবং ৭৭ দশমিক ৯০ একর জলভাগ দীঘি নিয়ন্ত্রণ করছে জেলা প্রশাসন। দুই বিভাগের ভিন্ন শাসনে এই জাতীয় উদ্যানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। হরিণগুলোর উপরে পড়েছে এর বিরূপ প্রভাব।

অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় মায়াবি দূরন্ত চিত্রা হরিণগুলো খাদ্য সংকটে ভুগছে। পর্যটকদের দেয়া খাবার এবং দীঘিতে জন্মানো পছন্দের শাপলা লতা এখন আর না পওয়া অর্ধাহারে-অনাহারে পুষ্টিহীনতায় ভূগছে হরিণগুলো। এমন অভিযোগ স্থানীয় পশুপ্রেমি উদ্ভিদবিদ মোসাদ্দেক হোসেন, পরিবেশ সংগঠক মুকিদ হায়দার ও শিক্ষাবিদ মামুরের।

রামসাগর দীঘির সাবেক তত্বাবধায়ক রোটারিয়ান একেএম আব্দুস সালাম তুহিন বলেন, রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় সরকারিভাবে ছয়টি চিত্রা হরিণ আনা হয়। বাড়তে আর কমতে শতাধিক হরিণ থেকে এখন জন্ম নেয়া নয়টি হরিণ সাবকসহ ৫৫টিতে দাঁড়িয়েছে। বেশকিছু হরিণ রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে দেশ-বিদেশের প্রধানরা নিয়েছেন।

করোনাভাইরাসের কারণে এসব চিত্রা হরিণসহ মিনি চিড়িয়াখানার বিভিন্ন জীবজন্তুর জন্য খাবার আগের থেকে জোগাড় করে রাখতে হচ্ছে।

দায়িত্বরত কর্মকর্তারা হরিণের খাদ্য বরাদ্দের বিষয়ে ক্যামরার সামনে মুখ খুলতে না চাইলেও জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা পরে বাজেট এলে সমন্বয় করা হয়। হরিণগুলোকে পর্যাপ্ত খাদ্য দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন রামসাগর জাতীয় উদ্যানের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সাদেকুর রহমান।

তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবহেলা করা হচ্ছে হরিণগুলোর প্রতি। বরাদ্ধ থাকলেও হরিণগুলো বঞ্চিত তার প্রাপ্য খাবার থেকে। অবলা প্রাণির খাদ্য লুটে খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রধান আকর্ষণ মিনি চিড়িয়াখানার চিত্রা হরিনগুলো শুধু নয়, বিলুপ্ত প্রজাতির নীলগাই, বানর, হনুমান, অজগর পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীগুলোও অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দুটো নীল গাই মারা গেছে।

ঐতিহাসিক রামসাগরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রাণিগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়ার তাগিদ অনেকের।

সরজমিনে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মানুষ বাধ্যগত অবসর থাকায় এই অবলা প্রাণি মায়াবি হরিণগুলো প্রাণচাঞ্চল্য এবং স্বস্তি ফিরে পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ম মতো খাবার পরিবেশন করলে এবং সেবা-শশ্রুষা অব্যাহত রাখলে, এই হরিণগুলো ভালো থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন প্রাণিবিদরা।

(ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :