সেই মুক্তা-মনির জন্মদিন উদযাপন

প্রকাশ | ২২ আগস্ট ২০২০, ১৬:৫৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিনাজপুর

চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশীর্বাদে জোড়া লাগানো যমজ দুই শিশু দিনাজপুরের মনি-মুক্তার আজ (২২ আগস্ট) জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে উঠা মনি-মুক্তা এখন ১২ বছরে পা দিয়েছে। ১১ বছর আগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশীর্বাদে জোড়া লাগানো যমজ দুই বোনকে আলাদা করা হয়।

শনিবার ১২ বছরে পা দিলো জোড়া লাগানো যমজ দুই বোন মনি-মুক্তা। ১১ বছর আগে আলোচিত দুই বোন মনি-মুক্তা আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নয়নের ছোঁয়া এবং বাংলাদেশের চিকিৎসক এআর খানের সাফল্যে নতুন জীবন ফিরে পায়।

মনি-মুক্তা এখন স্থানীয় পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। শনিবার নিজ বাড়িতে উদযাপন করা হয় মনি-মুক্তার জন্মদিন। প্রতি বছর বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনি-মুক্তার বন্ধু-বান্ধবসহ প্রতিবেশী এবং গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করা হলেও এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে ঘরোয়া পরিবেশে উদযাপন করা হলো তাদের জন্মদিন। এমনটাই জানালেন, মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল।

বড় ভাই সজল পাল জানান, আমার বোন মনি ও মুক্তা সুস্থ এবং ভালো আছে। তারা একে অপরের সাথে খেলা করে সময় কাটায়। বেশ সুন্দর করে কথা বলে। নিয়মিত স্কুলে যায়। করোনা পরিস্থিতিতে ঘরের বাইরে রের হলে মাস্ক পরে।

জন্মদিনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে মনি-মুক্তা বলেন, আমরা চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। দেশবাসীর আশীর্বাদ এবং সহযোগিতা পেলে আমরা অবশ্যই আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।

প্রসঙ্গত, দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়ার জয় প্রকাশ পাল। জয় প্রকাশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী পালের গর্ভে ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে মনি এবং মুক্তা জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়। পরে রংপুরের চিকিৎসকরা ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে যমজ বোনকে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে পৃথক করার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শক্রমে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে মনি-মুক্তাকে ভর্তি করা হয়। অতপর ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এআর খানের সফল অপারেশনের মাধ্যমে মনি-মুক্তা ভিন্ন সত্ত্বা লাভ করে। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস।

মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল বলেন, সে সময় গ্রামের মানুষ এটাকে অভিশপ্ত জীবনের ফসল বলে প্রচার করত। সমাজের নানা কুসংস্কারে প্রায় এক ঘরে হয়ে পড়েছিলাম। সমাজের নানা অপবাদে গ্রামে আসিনি। হতাশার মাঝে স্বপ্ন দেখি মনি-মুক্তাকে নিয়ে। বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য। আমাদের স্বপ্ন বাস্তব হয় ডা. এআর খানের কারণে। সেই মানুষটির কারণে আমাদের এই দুই সন্তানের নতুন করে বেঁচে থাকা।

মনি-মুক্তার মা কৃষ্ণা রাণী পাল জানান, ২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রথম ২১ ফেব্রুয়ারি পার্বতীপুরে বাবার বাড়িতে আসি। কিছুদিন সেখানে থাকার পর নিজ গ্রাম বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়ায় মনি-মুক্তাকে নিয়ে আসি। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে এবং ডা. এআর খানের সাফল্যে আমরা মনি-মুক্তাকে স্বাভাবিকভাবে ফিরে পেয়েছি। আমরা সব কষ্ট ভুলে তাদের চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মনি-মুক্তা এবং পরিবারের জন্য সকলের দোয়া কামনা করেছেন তিনি।

মনি-মুক্তার একমাত্র বড় ভাই সজল কুমার পাল জেলার খানসামা কলেজে বাংলা বিভাগে অনার্স শেষ বর্ষে লেখাপড়া করছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা জয় প্রকাশ পাল। পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধনঞ্জয় পাল ও সহকারী শিক্ষিকা শিউলি আকতার জানান, মনি-মুক্তা এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। তারা লেখাপড়ায় বেশ ভালো। সহপাঠীরা তাদের খুব ভালোবাসে। মনি শান্ত হলেও মুক্তা বেশ চটপটে বলেও তিনি জানান। লেখাপড়ার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে নাচ শিখছে তারা। উপজেলা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে যমজ এই দুই বোন। তাদের সাফল্য অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা যোগায়।

(ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/এলএ)