মানুষকে সামাজিক দূরত্বে ফেরানো সম্ভব নয়
করোনা মহামারীর মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানার যে অনীহা মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে তা প্রতিপালনে মানুষকে ফেরানো কঠিন হিসেবে দেখছেন সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের মতে, দেশে সবকিছু যেভাবে স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে, এমন অবস্থায় করোনার সংক্রমণ বাড়লেও সবক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা অনকেটাই অসম্ভব।
গতকাল ঢাকা টাইমসকে দেওয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তৌহিদুল হক বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ থেকে নিজেকে মুক্ত বা নিরাপদে রাখতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা একেবারে অপরিহার্য। এটা মেনে চলতেই হবে। অন্যান্য দেশ সেটা মেনে চলছে। কিন্তু কিছু বাংলাদেশসহ বেশিরভাগ দেশের মানুষ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে করোনার সতর্কতাগুলো মানেনি। সেক্ষেত্রে সরকার বা রাষ্ট্র বিভিন্নভাবে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করেছে। সরকার জোরপূর্বক মানুষকে মানানোর চেষ্টা করেছে।’
করোনা থেকে নিজে এবং আশপাশের মানুষদের নিরাপদে রাখার জন্য সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টি আসলে অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একটি দেশের জনস্বাস্থ্য, সংস্কৃতিটা কেমন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখানে এই বিষয়গুলো সেভাবে তৈরি হয়নি। দ্বিতীয়ত হলো আমাদের এখানে ঘনবসতিপূর্ণ এবং মানুষের চাহিদা ও বেঁচে থাকার যে সংগ্রামের ক্ষেত্রে মানুষের সম্পৃক্ততা এত বেশি, পরস্পরসম্পৃক্ত সেই জায়গাগুলো চিন্তা করলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত যেভাবে করার কথা সেটা চাইলেও মানা সম্ভব না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস হলো দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছে। কিন্তু শুধু করোনা নয়, যেকোনো সংক্রামণ রোগের ক্ষেত্রে যতদিন যায় মানুষের মধ্যে এটি সহজ করে নেয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এখন যেটা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে করোনাকে দেখে, যেভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দেখে, এবং দেশের সরকারের করণীয় সম্পর্কেও মানুষ কমবেশি সচেতন।’
‘বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষের ভালো জানেন। এখন কিন্তু মানুষ নিজের সঙ্গে একটি হিসাব করে নিয়েছে। বোঝাপড়ার একটি বিষয় তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি মানুষ যত স্বাভাবিক জীবনের দিকে প্রবেশ করতে যাবে, সেক্ষেত্রে সে অনেক কিছুই তার পক্ষে মানা অসম্ভব হয়ে পড়ে।’
তৌহিদুল বলেন, ‘নিয়ম মানার ক্ষেত্রে কিছু সক্ষমতারও বিষয় আছে। যেমন- মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এসব কেনার সক্ষমতাও তো অনেকের নেই। আর আমাদের এখানে জনস্বাস্থ্যের নিয়মগুলো মানার ক্ষেত্রে নিম্নবিত্ত বা ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ বসবাসকারী মানুষকে দায়ী করে থাকি। আসলে বিষয়টি এমন নয়। এটা তো সবাইকে মানতে হবে। অথচ জনস্বাস্থ্যের নিয়মগুলো মানার ক্ষেত্রে কোনো শ্রেণির মানুষই সচেতন নয়। আমাদের দেশে যেকোনো কারণেই হোক জনস্বাস্থ্যের সংস্কৃতি মানার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ জনস্বাস্থ্য সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত না হওয়ায় বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে যারাই এ নিয়ে কথা বলছেন, মানুষ তা অপ্রয়োজনীয় মনে করছে। তাই হঠাৎ করে জনস্বাস্থ্যের সংস্কৃতি তো চালু করা যায় না। এটা চর্চা করতে হয়, দীর্ঘসময়ের প্রয়োজন। মানুষ ক্রমান্বয়ে করোনার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেটি করার ক্ষেত্রে মানুষ তার নিজস্ব উপলদ্ধি, নিজস্ব জ্ঞান ও সক্ষমতা অনুযায়ী কোনও নিয়ম মানছে আবার কোনটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে মানুষকে আর সামাজিক দূরত্বের দিকে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় মন্তব্য করে সমাজ বিশ্লেষক তৌহিদুল বলেন, ‘কারণ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হলে আবার লকডাউনের দিকে যেতে হবে। সবকিছু বন্ধ করতে হবে। সেটা সম্ভব নয়। এখন মাস্ক পড়ার ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে। সরকার এজন্য কড়াকড়ি করতে পারে, মানুষকে সচেতন করতে পারে। তাহলে হয়তো একটি ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।’
(ঢাকাটাইমস/২৫আগস্ট/ডিএম)