কর্মজীবী নারী ও করোনা প্রেক্ষাপট

তৃপ্তি সেন
 | প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০২০, ১৬:৩৫

পৃথিবীজুড়ে এক ভয়াবহ মহামারি করোনা বর্তমান সময়কে অনেকখানি গ্রাস করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর পরই সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এই ছুটির সাথে সাথে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। ঘরের ভেতর আটকে পড়ে মানুষ। একদিকে করোনা-ভীতি অন্যদিকে সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পরের অবস্থা কেমন হতে পারে সে নিয়ে সকলে চিন্তিত হয়ে পড়ে।

করোনার এই সময়টাতে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ছুটি হয়ে যায়। কিন্তু ছুটি বলতে নারীর জীবনে কিছু নেই। নারী গৃহিণী হলে যেমন দায়িত্ব পালন করেন কর্মজীবী নারীরাও তেমনই উভয় দায়িত্ব পালন করেন। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কর্মজীবী নারী কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা প্রমাণ করছেন বারবার। করোনাকালে কর্মজীবী নারীদের হাজার গুণ বেশি কাজ করতে হচ্ছে। দিনের বেশিরভাগ সময় তারা দিচ্ছে অনলাইন অফিস ও বাসার কাজে।

তানিয়া রহমান বেসরকারি এনজিওতে কর্মরত আছেন। লকডাউনের এক পর্যায়ে তাদের অনলাইন অফিস শুরু হলে তিনি পড়ে যান বিপাকে। হোম অফিস এক আতঙ্কের নাম হয়ে যায় তার কাছে। বাড়িতে বসে অফিসের পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন। কখনো বাচ্চা এসে বিরক্ত করে তো কখনো শাশুড়ি বলেন সারা দিন ওই যন্ত্রে (কম্পিউটারে) কী এত করো বুঝি না। অন্যদিকে অফিস থেকে বলে এখন তো ছুটিতেই আছেন, তাহলে কাজ করতে সমস্যা হওয়ার কথা না।

কিন্তু কর্মজীবী নারীর অফিসের কাজের যেমন দায়িত্ব রয়েছে তেমনি একইভাবে সংসারের দায়িত্বগুলোও তার আছে। তানিয়ার সকাল শুরু হয় ভোর সাড়ে পাঁচটায়। এরপর বুয়াহীন বাসায় রান্না করা, ঘরের কাজ, বাচ্চার খাবার বানানো সব করে অফিসের জন্য বসতে হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তানিয়া রহমান দিশেহারা। ছুটি আছে তাই সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব তার। অন্যদিকে অফিসে যেতে হয় না বলে বেশি বেশি এসাইনমেন্ট দেয় অফিস কর্তৃপক্ষ ও অনলাইনে বিভিন্ন মিটিং ও ট্রেনিং কোর্সে জয়েন করতে হয় তাকে। দুয়ে মিলে তানিয়া রহমানের দম ফেলার ফুসরত নেই।

করোনাকালে হোমফিস বা অনলাইন অফিসের চাপ অন্যদিকে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কর্মজীবী নারীদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শারীরিক ও মানসিক বিষাদগ্রস্ততা ভর করছে তাদের ওপর। কর্মজীবী নারীরা সাধারণত বেশি পরিশ্রম করেন। অফিস থেকে এসে পুরুষ যখন সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে চা পান করেন তখন কর্মজীবী নারীটি অফিস থেকে ফিরে রান্নাঘরে পৌঁছে যান। সংসারের যাবতীয় খুঁটিনাটি কাজ সম্পন্ন করা নারীরা কর্মক্ষেত্রেও সফলভাবে সকল কাজ সম্পন্ন করেন।

তবে করোনার এই দুর্যোগে কর্মজীবী নারীদের শারীরিক ও মানসিক অবসাদ তাদের মনোবলকে ভেঙে দিচ্ছে। তারা হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন। অনলাইন অফিসকর্মীদের বাড়িতে থাকা নিশ্চিত করলেও অতিরিক্ত কাজের চাপ ও সাংসারিক সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারীরা তাদের নিজেদের জন্য সময় বের করতে পারছেন না। পরিবার ও অফিসের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা কর্মজীবী নারীদের জন্য একান্ত কাম্য। তাদের জন্য সামান্য সাহায্য অসামান্য প্রভাব বিস্তার করতে পারে তাদের কর্মক্ষেত্রে ও পরিবারে।

লেখক: সহকারী শিক্ষক (বাংলা), বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্ঝর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট

ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

মুক্তমত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :