ভেষজ ক্বাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২০, ১৪:৫৬ | প্রকাশিত : ২৭ আগস্ট ২০২০, ১৩:১১

বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাস ঠেকাতে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে জোর দিয়েছেন । প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত করোনার সঙ্গেই থাকতে হবে, কিছু নিয়ম মেনে ও ভেষজ খাবার খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মানুষ জন্মসূত্রে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পেয়েছেন, আয়ুর্বেদে যাকে বলে ‘সহজ বল’, তা রাতারাতি বাড়ানো যায় না। পুষ্টি, ব্যায়াম ও নিয়ম-নিষ্ঠার হাত ধরে সে আসে, যাকে বলে অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনিটি বা ‘যুক্তিকৃত বল’।

‘ভ্যাকসিন দিয়েও নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে যুক্তিকৃত বল গড়ে তোলা যায়। যে রোগের ভ্যাকসিন নেই, যেমন করোনাভাইরাস, সেখানে সঠিক জীবনযাপন ও ঘরোয়া ওষুধই ভরসা। খেয়াল রাখতে হবে যাতে জীবাণু কাছে ঘেঁষতে না পারে বা ঘেঁষলেও শরীর লড়তে পারে সর্বশক্তি দিয়ে।’

এক ধরনের ইমিউনিটি আছে, যাকে বলে ‘কালজ বল’, ঋতু পরিবর্তন ও বয়সের সঙ্গে তা পাল্টায়। সে জন্যই দেখা যায় এমনিতে সুস্থ, কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সময় বা বয়স বাড়লে তিনি সংক্রমিত হচ্ছেন। এই সব সমস্যা ঠেকিয়ে যুক্তিকৃত বল বাড়াতে চাইলে নিয়ম মেনে জীবনযাপন করার পাশাপাশি কিছু ভেষজ খাবার পথ্য হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। ভেষজ ক্বাথ বানিয়ে নিতে পারেন বাড়িতেই। ভেষজ ক্বাথ হচ্ছে পানিতে সিদ্ধ করে প্রস্তুত ভেষজ উপাদানের ঘন নির্যাস বা সার অংশ।

ভেষজ ক্বাথ তো খাচ্ছেন অনেকেই। করোনা আবহে ক্বাথের উপরে ভরসাও রাখছেন অনেকে। কিন্তু ক্বাথের উপকার কী, কখন প্রয়োজন, কখন নয় এগুলো নিয়ে আলোকপাত করা হলো।

ক্কাথের উপকার

প্রদাহ কম হয় বলে ক্রনিক অসুখের আশঙ্কা ও প্রকোপ কমে। ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার-কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস সবই আছে এই তালিকায়। এমনকি, জটিল কোভিডে রোগীর অবস্থা খারাপ হয় প্রদাহের কারণেই। ফলে রোগ ঠেকানোর ও সারানোর যাবতীয় নিয়ম মানার পাশাপাশি নিয়মিত ক্কাথ খেলে বিপদের আশঙ্কা কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা।

ক্কাথ জীবাণুনাশক। ফলে নিয়মিত খেলে সংক্রমণের আশঙ্কা ও প্রকোপ কম থাকে। অ্যান্টিক্সিডেন্ট গুণ থাকায় কোষের ক্ষতি কম হয়, কমে ক্রনিক রোগের প্রকোপ।

বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কিছু উপাদান সরাসরিও কাজ করে। সেজন্য এদের ইমিউনিটি মডিউলেটর বা ইমিউনিটি এনহান্সার বলা হয়।

ক্কাথের অপকার

উপকার আছে বলে অনেকে প্রচুর খেতে থাকেন অনেকে। তাতে অপকার হয়। আবার ক্কাথের কিছু উপাদানের সঙ্গে কিছু ওষুধের ক্রিয়া-বিক্রিয়াও হয়। কাজেই অসুখ-বিসুখ থাকলে বা কোনও ওষুধ খেলে ক্কাথ খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া জরুরি। কী ক্ষতি হতে পারে তার কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া হল।

আদায় আছে জিঞ্জেরল, তার গুণেই এত উপকার। তবে প্রচুর খেলে অম্বল, ডায়ারিয়া, মুখে-গলায়-পেটে অস্বস্তি হতে পারে। বুক ধড়ফড় করতে পারে। ডায়াবিটিস, হাই বা লো প্রেসার ও হৃদরোগ থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবে খাওয়া উচিত। এলাচের কোনও ক্ষতির খবর এখনও জানা নেই। তাও মাত্রা রেখে খাবেন।

দারুচিনিতে আছে কুমারিন। বেশি খেলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। প্যারাসিটামল, অ্যাসিটামিনোফেন বা স্ট্যাটিনজাতীয় ওষুধের সঙ্গে খেলে সে আশঙ্কা বাড়ে। সুগার কমে যেতে পারে, কাজেই ডায়াবিটিসের ওষুধের সঙ্গে খাবেন কিনা তা জেনে নিন আগে। প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.১ মিগ্রা হচ্ছে নিরাপদ মাত্রা। এক চা-চামচে ৫ গ্রাম হয়। কাজেই ৫০ কেজির বেশি ওজন হলে ওটুকু খেতে পারেন।

গোলমরিচের পিপারিন নিজে যেমন উপকারি, অন্য উপাদানগুলোর উপকারও সে বাড়ায়। তবে খুব বেশি খেলে গ্যাস্ট্রাইটিস বাড়তে পারে। তুলসি পাতা ভাল। কিন্তু পারদ ও লোহা থাকে বলে চিবিয়ে খেলে দাঁতের রং বদলে যায় অনেক সময়।

গুড়ুচি হল ম্যাজিকাল হার্ব। তবে রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে বলে ডায়াবেটিস থাকলে খাওয়ার আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় চরক সংহিতায় ঘরোয়া ওষুধ বানানোর ৫টি পদ্ধতির কথা বলা আছে। যেমন-

লতাপাতা বেটে রস বের করে, যাকে বলে স্বরস।

মশলা ও ভেষজ পানিতে ফুটিয়ে, যাকে বলে ক্কাথ বা কাড়া।

বিভিন্ন রকম ভেষজ মিশিয়ে বেটে পেস্ট বানিয়ে, যাকে বলে কল্ক।

ভেষজ ও মশলা ঠান্ডা পানিতে সারারাত ভিজিয়ে পর দিন ছেঁকে নিয়ে, যার নাম শীত বা হিম।

ভেষজ ও মশলার গুড়ো গরম পানিতে ভিজিয়ে ছেঁকে চা-এর মতো খেলে তাকে বলে ফান্ট।

ভেষজ ক্কাথ বানানোর পদ্ধতি

যে সব ভেষজ রস করা যায় না, যেমন, মশলা, তাদের দিয়ে বানানো হয় ক্কাথ। এর সঙ্গে মেশানো হয় আরও নানা রকম ইমিউনিটি বুস্টার যেমন, গুলঞ্চ, আদা, তুলসি, মধু ইত্যাদি। ক্কাথ নানা রকমভাবে বানানো যায়। এখানে কয়েকটির কথা বলা হল।

৩ কাপ পানি এক চা-চামচ করে এলাচ-দারুচিনির গুঁড়া, টাটকা আদা বাটা ও সিকি চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে কম আঁচে ফুটিয়ে এক কাপমতো করুন। এরপর ছেঁকে মধু মিশিয়ে খান।

৮-১০টা তুলসি পাতা, ৫-৬টা গোলমরিচ ও আধ চামচ আদা বেটে পানিতে ভাল করে ফুটিয়ে, ছেঁকে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। সর্দি-কাশির কষ্ট কমবে।

আধ চা-চামচ দারুচিনির গুঁড়া এক কাপ জলে ফুটিয়ে মধু মিশিয়ে খান। চটজলদি এনার্জি পাবেন। অন্যান্য উপকার তো আছেই।

আধ চা-চামচ গুড়ুচি এক কাপ পানিতে ফুটিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়বে, বাড়বে হজম শক্তি। কমবে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ।

দু-গ্লাস ফুটন্ত পানিতে এক চামচ করে জিরে, মৌড়ি ও জোয়ান দিয়ে আঁচ কমিয়ে দিন। পানির রং পালটে গেলে তাতে থেঁতো করা দুটো বড় এলাচ, দুটো ছোট এলাচ ও এক চামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে গ্যাস নিভিয়ে দু-মিনিট ঢেকে রাখুন। ছেঁকে এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়ো ও স্বাদমতো মধু মিশিয়ে গরম গরম খান। শুকনো কাশি কমবে।

(ঢাকাটাইমস/২৭আগস্ট/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :