লাগামছাড়া আশুগঞ্জ যুবলীগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০২০, ১১:৪১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে যুবলীগের রাজনীতি লাগামছাড়া। এক উপজেলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে দুই কমিটি। গেলো ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে আলাদা কর্মসূচি পালন করেছেন দুই কমিটির নেতারা।

দলীয়সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর চর-চারতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন খন্দকারকে আহ্বায়ক করে উপজেলা যুবলীগের ৩০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। পরবর্তী ৯০ দিনের জন্যে কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সে সময়কার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ।

ওয়ার্ড, ইউনিয়নের সম্মেলন শেষ করে উপজেলা সম্মেলন করার দায়িত্ব দেয়া হয় আহ্বায়ক কমিটিকে। কিন্তু চার বছরেও সম্মেলন করতে পারেননি তারা। এই ব্যর্থতায় গত বছরের ২৪ জুলাই জিয়ার আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে আরেকটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।

সাইফুর রহমান মনিকে আহ্বায়ক করে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি ঘোষণা করে জেলা যুবলীগ। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির (ওমর ফারুক ও হারুনুর রশিদ নেতৃত্বাধীন) নির্দেশে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। জেলা যুবলীগ সভাপতি শাহানুর ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আগের আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে চার বছরেও সম্মেলন করতে না পারার ব্যর্থতা এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়।

কমিটির পাঁচজন যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে তিন নম্বরে রাখা হয় উপজেলা বিএনপির প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক নাসের উদ্দিন আহমেদের ছেলে শেখ মো. দাউদ অপিকে। আহ্বায়ক মনির বাবা সৈয়দ সিকদার ছিলেন জাতীয় পার্টির সভাপতি। কমিটির সদস্য মনিরুজ্জমান খান, তারেক সিকদার, আরমান মুন্সি, রাব্বী সওদাগর, আরিয়ান সাবের চঞ্চল, সানি চৌধুরী, লোকমান হোসেন ও মোস্তফা বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক বলয়ের। তাদের কেউ কেউ সরাসরি ছাত্রদল বা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরই তারা ‘জয়বাংলা’ বলতে শুরু করেছেন বলে কমিটির সমালোচনায় মুখর নেতারা জানান।

সাইফুর রহমান মনির নেতৃত্বাধীন এই কমিটিও সম্মেলন করতে ব্যর্থ হয়। বছর পেরুনোর পর মনির কমিটিকে গত ২২ জুলাই মেয়াদ উত্তীর্ণ বলে বিলুপ্ত করে জেলা যুবলীগ। একই সঙ্গে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন ও মো. শাহীন আলম বকশীকে।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই কমিটি দেয়া হয়েছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় জেলা যুবলীগ। কিন্তু ওইদিন রাতেই আবার আরেক বিজ্ঞপ্তিতে সালাউদ্দিন-বকশীর কমিটি বিলুপ্ত করে আগের আহ্বায়ক কমিটি পূনর্বহাল করেন জেলা যুবলীগ নেতারা। এক্ষেত্রেও তারা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশের কথা উল্লেখ করেন এবং ভুল তথ্যের ভিত্তিতে কমিটি দেয়ার জন্য ক্ষমা চান।

তবে দুই আহ্বায়ক কমিটিই এখন সক্রিয় সেখানে। কেন্দ্রীয় আগের কমিটির দফতর সম্পাদক আনিসের হাতে কোটি টাকার বেশি দিয়ে কমিটি বাগিয়ে আনা হয় বলে যুবলীগ নেতারাই জানান।

একটি কমিটির আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন খন্দকার বলেন, তার কমিটি কেন্দ্র থেকে দেয়া। তিন মাসের মধ্যেই ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের কাউন্সিলরের তালিকা করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। ৯২ লাখ টাকার বিনিময়ে অন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এই কমিটিতে পাঁচজন যুগ্ম আহ্বায়ক, যা যুবলীগ গঠনতন্ত্রের বিরোধী। এরপর ওই কমিটি বাতিল করে সালাউদ্দিন ও বকশীর নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি করে দেয় জেলা যুবলীগ। আমার কমিটি হয়েছে সেন্ট্রাল থেকে।

আরেক কমিটির আহ্বায়ক সাইফুর রহমান মনি বলেন, তার কমিটি সেন্ট্রাল এবং জেলার অনুমোদন নিয়েই হয়েছে। তিনি বলেন, অপি ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে। আমার বাবা জাতীয় পার্টি করেছেন, সেটি আমার প্রতিদ্বন্দ্বিরা আমার বিরুদ্ধে ফলাও করে প্রচার করছেন। তিনি কিন্তু এর আগে ছাত্রলীগ করেছেন।

জেলা যুবলীগ সভাপতি শাহানুর ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস বলেন, এই দুটি কমিটি কেন্দ্র থেকেই দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জিয়াউদ্দিন খন্দকারের নেতৃত্বাধীন কমিটি তাদের অজান্তে কেন্দ্র থেকে সরাসরি দেয়া হয়। পরের আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্রের চাপে তারা দিয়েছেন। এখন এই দুই কমিটিই আলাদা কর্মসূচি পালন করছে। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রে জানিয়েছি।

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :