‘শুধু আইন নয়, যৌন হয়রানি বন্ধে সচেতনতা জরুরি’

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২০, ১৮:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

যৌন হয়রানিকে বৈশ্বিক ব্যাধি আখ্যায়িত করে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেছেন, ‘শুধু আইন প্রণয়ন করলে হবে না, যৌন হয়রানি বন্ধে জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও তৃণমূল পর্যায়ে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।’

শনিবার একটি অনলাইন অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

করোনা মহামারিকালীন প্লান ইন্টারন্যাশনাল ও গার্লস অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্সের সহায়তায় কর্মস্থলে নারীদের যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ওপর জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এক জরিপের ফলাফল তুলে ধরে এই অনুষ্ঠানে।

ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘নারীর প্রতি যৌন হয়রানি সারাবিশ্বে একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আপনারা এখানে যে সুপারিশগুলো এখানে উপস্থাপন করেছেন এগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। আমরা একটি সমন্বিত আইন প্রণয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি এই বছরের মধ্যে আইনটি সংসদে উপস্থাপন করতে পারবো। তবে শুধু আইন প্রণয়ন করলে হবে না, জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও তৃণমূল পর্যায়ে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।’

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিটি নারী কর্মস্থলে কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন।

জরিপের তথ্য উপস্থাপন করে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, গবেষণার জন্য নমুনা হিসেবে ২০টি  প্রশ্ন সম্বলিত একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। পরবর্তী সময়ে তথ্য সংগ্রহকারী দলের মাধ্যমে জরিপ কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ৩৯০ জন নারীর একটি তালিকা তৈরি করা হয় (র‌্যান্ডম স্যাম্পলিং)। পরবর্তী সময়ে এই জরিপটিতে যৌন হয়রানি শিকার হয়েছেন এমন ১৩৫ জন কর্মজীবী নারী অংশগ্রহণ করেন। গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয় এই বছরের জুলাইয়ে।

তিনি বলেন, অংশগ্রহণকারী ১৩৫ জন নারীর শতভাগই নিজ কর্মস্থলে কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে জানান। তাদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ ২/৩ বার, ২৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ নারী ৪ থেকে ৫ বার এবং ২২ দশমিক ৯৬ শতাংশ নারী একবার করে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

১৩৫ জনের মধ্যে ৬১ জন শারীরিক স্পর্শের মাধ্যমে (৪৫ দশমিক ১৯ শতাংশ), ৮০ জন মৌখিকভাবে (৫৯ দশমিক ২৫ শতাংশ) সরাসরি যৌন আবেদনের শিকার হয়েছেন ৬৪ জন অর্থাৎ ৪৭ দশমিক ৪১ শতাংশ নারী।

এছাড়া ৬০ জন (৪৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ) সুপারভাইজার দ্বারা,  ৮৮ জন (৬৫ দশমিক ১৯ শতাংশ) ম্যানেজার/বস কর্তৃক, ৮ জন (৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ) নারী তাদের নিয়োগকর্তার দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। 

জরিপে বলা হয়, উত্তরদাতাদের একটি বড় অংশ অর্থাৎ ৮৯ জন জানেনই না কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বিষয়ক নীতিমালা থাকা প্রয়োজন বা এ সম্পর্কে হাইকোর্টের একটি গাইডলাইন আছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী মধ্য থেকে ১১৮ জন (৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ) মনে করেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত আইন প্রয়োজন। শতকরা ৮৫ দশমিক ১৯ নারী বলছেন, আইন হলেই হবে না; এটি যথাযথভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যৌন হয়রানি হলো একটি খারাপ আচরণ। পৃথিবীর সকল সমাজে সকল স্তরের মানুষের মধ্যে এটি বিদ্যমান। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এর ব্যাপকতা বেশি। নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মনোভাবই এর মূল কারণ। তাই মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/বিইউ/জেবি)