আমাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে যায়- তথাপি সত্য, শুভ ও সুন্দর কামনা

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২০, ২০:৫২

অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ

পত্রিকার পাতা খুললেই মন খারাপের খবর।  মাতবরবাড়ি ও পায়রা দুটি সমূদ্র বন্দর নির্মাণ করা হয়েছে।  আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র চীন এই দুটি বন্দর নির্মাণ করেছে।  অনেক আশা।  অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হবে।  কিন্তু পত্রিকা বলছে ওই বন্দরগুলো কাঙ্খিত নাব্যতা পাবেনা।  সুতরাং - ওই বানরের তৈলাক্ত বাঁশের উঠার মত ব্যাপার।  দুই ফুট ওঠা তো একফুট নামা।  এরই মাঝে আবার নতুন খবর - পদ্মা সেতু নাকি ২০২২ সালের আগে নির্মাণ হবে না।  এই কদিন আগেও সংবাদ দেখলাম করোনাকালীন সময়ে পুরোদমে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ।  আর মাস ঘুরতে না ঘুরতেই শুনলাম অবাক করা কাহিনী।  আমাদের স্বপ্ন গুলো এভাবে দূরে সরে যায় আর আমরা যখন স্বপ্নের জিনিসটি পাই তখন বুড়ো বুড়ি হয়ে যাই।  তখন আর তার কোনো আকর্ষণ থাকে না।  এই ঘানি টানার দিন যেন আর শেষ হয় না।  হতভাগা আমরা !

মাঝরাতে আমাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে যায়।  আর তাই পাকিস্তানিরা  ডাকা পার্লামেন্ট স্থগিত করে , আমাদের যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে হয়।

আমরা আসলে কি ? কিভাবে ওরা পারে একটি পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করতে?  একটি শিশুকে হত্যা করতে? আর মানুষ নামের ওই কলঙ্কগুলোকে কানাডা , যুক্তরাষ্টের মতো উন্নত দেশ আশ্রয় দেয় কিভাবে? ঘৃণা করবো কি ভাবে মনতো পাথর হয়ে যায়! কিভাবে বিনা বিচারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দ্বার রুদ্ধ করতে দিতে পারে, কিভাবে বিচারক বিব্রত হন হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবির মামলার শুনানি করতে।

পদ্মা সেতু যথাসময়ে দিতে পারছে না বলে মন খারাপ করছি।  তাঁদেরকে ভৎসনা করছি - কিন্তু আমরা কি করছি ? রডের বদলে বাঁশ দিচ্ছি , তাজা মানুষকে গুলি করে মারছি , সামান্য কিছুর লোভে কি না করছি।

ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে এক দিকে শুকিয়ে দেয়া হয় , আরেক দিকে বিনিয়োগের সংবাদে শংকিত হয়ে বিমান নিয়ে চলে আসে দূত ! ১৯৪৭ সালের আগেতো একই দেশ ছিল।  কেন তবে আজ নিবন্ধন ! ১৯৭১ সালে যারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিলো কেন তাদের বিরুদ্ধে নিজ দেশের নাগরিকদের মানবধিকার লঙ্ঘনের খবর ?

দিন মাস ঘুরতে না ঘুরতে সাদা পুলিশরা কালো মানুষদেরকে গুলিকরে মারে ? ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে ভ্যাকসিন ব্যবসাও মানুষ(?) নাকি করতে পারে ! পারবেনা কেন তারাতো ড্রাগ-ইয়াবা ব্যবসা করে , নারীর শরীর নিয়ে ব্যবসা করে , মানুষের অর্গান চুরি করে কিংবা অর্গানের জন্য মানুষ হত্যা করে।

আমি হিসাব মেলাতে পারিনা।  আমার হিসাব মেলে না।  অস্ট্রেলিয়া চেয়েছে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত যাতে ভাইরাস কিভাবে ছড়ালো তার একটি উত্তর পাওয়া যায়।  আর কোথায় যায় , শুরু হলো বাণিজ্য যুদ্ধ। হংকংয়ের মানুষ একটু স্বাধীনতা চায় - মাইর লাগাও ! এই মাইর খেতে খেতে ইতালি থেকে ডেনমার্ক , নেদারল্যান্ড  হয়ে শেষমেশ নাকি স্বাধীনতাকামীরা নিউ ইয়র্ক গিয়ে বসত বাড়ি নির্মাণ করেছে।  সেখানে একটি স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ও প্রতিষ্ঠিত  আছে।  হায়রে স্বাধীনতা ! অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা এখনো আন্দোলন করে একটি দেশের জন্য।  আন্দোলন করে প্যালেস্টাইনের জনগণ।  একটি দেশ চায়।  আমরা এক নদী রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতাকে কি অবহেলাই না করছি!  

আমাদের স্বাধীনতা আছে মাস্ক না পরবার।  কিন্তু অন্যের বাঁচার অধিকারতো আছে।  কেন আমি মাস্ক পরবার কষ্টটা সাময়িক ভাবে মেনে নিতে পারছি না ? সেই আবার খবরে ফিরে যাওয়া।  এখন তিন টাকায় মাস্ক পাওয়া যায় কিন্তু ক্রেতা নেই।  অথচ ওই মাস্ক নিয়ে কি না কেলেঙ্কারি ! ব্রিগেডিয়ার শহীদুল্লাহ চলে গেলেন বেদনা নিয়ে।  বেদনা নিয়ে অনেকেই জেলে ছোট খাটো অপরাধের জন্য - আর রাঘব বোয়াল বহাল তবিয়তে। 

এই অসম সমাজ ব্যবস্থা কি চিরদিন থাকবে ? না কি একদিন পরিবর্তন আসবে ? আমরা কি পিছিয়ে পড়া মানুষদেরকে এগিয়ে নিতে  থমকে দাঁড়াবো নাকি - যে পেছনে পড়েছে পড়ে থাকনা গান গেয়ে আনন্দে আত্মহারা হবো ?

ছোট বেলায় দেখতাম কলুর বলদ আর চাষির গরু টোনা মুখে জীবন কাটাতো।  ওই "চাইনিজ ভাইরাস" এখন আমাকে টোনা পড়তে বাধ্য করেছে।  এক ট্রাম্প ছাড়া কেউ প্রতিবাদ করছে না। 

আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিলো ভাইরাস ! আর আমরা নীরবে সেটা মেনে নিচ্ছি ! কেন প্রতিবাদ করতে পারছি না ? কিসের ভয় ? ১৯৭১ সালে মার্কিনরা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে ছিল।  সেদিন অকুতোভয় বাঙালি ভয় পায়নি তো ! সেদিন আমাদের কিছুই ছিলোনা দুটি হাত ছাড়া।  অস্ট্রেলিয়ার মাত্র ২ কোটি মানুষ তারা প্রতিবাদ করছে।  আমরা পারছিনা বিচার চাইতে। 

ভাইরাস এখন বস্তির ঘরে ঘরে।  পত্রিকায় দেখলাম ওরা ওই ভাইরাস এর সঙ্গে থাকছে। তারা ভয়কে জয় করেছে।  তারা ওই ভ্যাকসিনের জন্য কান্নাকাটি করছে না।  ভ্যাকসিন ট্রায়াল হলো কি হলোনা ভাবছে না।  বিষয়টি হলো - জন্মিলেই মরিতে হইবে ! কেউ কি লিখিত দিয়েছে ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল করে দিলে আমাদেরকে ভ্যাকসিন দিবে ? ভারতে সঙ্গে লিখিত চুক্তি হয়েছে যুক্তরাজ্যের।  আর মোদী দাদাকে বলি কেন সিং পেন এর মতো ফোন করেন না ? আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আপনার যা বলতে মন চায়  বলে ফেলুন।  কেন সচিব দিয়ে কাজ শেষ করতে চান দাদা ? ওই  কথায় আছে ঝেড়ে কাশুন।  আমরা মর্যাদার জীবন চাই।  আমাদের মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী বলেছেন শিক্ষা নীতি যুগোপযোগী করবেন।  খুব ভালো লাগলো জেনে।  আশা করি মর্যাদার জীবন অর্জন ও যাপনে কর্মমুখী শিক্ষা হবে আমাদের মূল নীতি।  

মাস্ক পরে বাইরে যেতে হয় - দম আমারও বন্দ হয়ে আসে।  তাই কম কম যাই।  আসুন সকলে শান্তির বাংলা গড়তে একটু কষ্ট করি - ১৮ কোটি মাস্ক - তিন টাকা করে ৫৪ কোটি টাকা।  এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন বিনামূল্যে দেন।  ভ্যাকসিনের আশায় না থেকে মাস্ক পরে করোনা ভাইরাস কে পরাজিত করি।  শক্ত করে চীনকে বলি বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাও।  সময় মতো আমাদের কাজগুলো শেষ করে দাও।  করোনা ভাইরাস দিয়ে আল্লাহ আমাদের সাহসের পরীক্ষা করছেন।  আমরা যেন অন্যায়ের প্রতিবাদে সাহসী হই , শান্তির জন্য কাজ করি , সুখের জন্য অসুখ বয়ে না আনি। 

কষ্টের মাস আগস্ট।  ১৫ আগস্ট সকালে ঘাতকের বুলেটে আমাদের একটি স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিলো। আমাদের স্বপ্নগুলো বার বার ভেঙে যায়- হয়তো করোনার সমাধান হবে , পদ্মা সেতু হবে - কিন্তু "আমরা রাত পোহালেই আর শুনতে পাব[না] বঙ্গবন্ধু মরে নাই।" তথাপি  সত্য , শুভ ও সুন্দর আমাদের কামনা যেন থাকে।  আর তাই , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অনুরোধ করেছি - বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের পাশে শিশুদের জন্য একটি "শেখ রাসেল" নামে  লাইব্রেরি করতে দিতে যাতে যুগ যুগ ধরে ওই বিদ্যালয়ে যারা পড়তে আসবে তারা যেন জানতে পারে শেখ রাসেল কে ছিলেন, কিভাবে একটি শিশুকে, একজন মহিয়সী মাকে, বাঙালি ইতিহাস নির্মাতা জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল। রাত পোহালেই আমার শিশুটি বিদ্যালয়ে গিয়ে সারাক্ষণ বঙ্গবন্ধুর ছায়াতে যেন বড়ো হয়ে উঠে। বঙ্গবন্ধু আমাদের সকলের ছায়া।  আমাদের স্বাধীনতা ও সাহসের উৎস বঙ্গবন্ধু, যার বুকে ছিল ভালবাসার সাগর। বঙ্গবন্ধু আপনাকে হাজার সালাম।

লেখক : শিক্ষক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়