অবিচ্ছিন্ন মনোভাবে পরিবার হোক সংকট উত্তরণের কেন্দ্র

প্রকাশ | ৩০ আগস্ট ২০২০, ১৮:০৫

খাদিজা পারভীন

সমাজবদ্ধ জীব মানুষ সমাজে পরিবারের পরিচয়েই টিকে থাকে। ব্যক্তিজীবনে পরিবারের ভূমিকা ‘জীবনের ঝড়ো সমুদ্রে লাইফ জ্যাকেট স্বরূপ’। জীবনে কোনও কিছুই স্থায়ী নয়, ব্যতিক্রম শুধু পরিবার। কঠিনের দুনিয়ায় শক্তভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে শিকড়টা প্রয়োজন তার মূল ভিত্তি পরিবার।

জীবনের সুউচ্চ সোপানে পৌঁছানোর অনুপ্রেরনা থেকে শুরু করে জীবনের সঙ্গ-অনুসঙ্গ সবকিছুই এখানে রয়েছে। গাছের ডালের মতো করে আমরা বিভিন্ন দিকে বেড়ে উঠলেও শিকড় কিন্তু এক জায়গাতেই (পরিবার) থাকে। পূর্বপুরুষদের সাজানো বাগানের ধারাবহিকতায় জীবনের প্রধান দিকনির্দেশক প্রতিষ্ঠান পরিবার।

পারিবারিক বলয়ের অন্যতম প্রধান অংশ ভাই-বোন। আপনজন এবং ভাই-বোন আত্মার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনেই আবদ্ধ─ এটি চিরন্তন সত্য। বাবা-মায়ের অস্তিত্ব, জীবনের সূচনা, শুভাকাঙ্খী, অনুরক্ত, অসীম ভালোবাসা এর সবই পবিারে ঘিরে থাকে।

জীবনের সহায়ক অভিন্ন এক অংশ হিসেবে ভাই-বোনের অবস্থান সুদৃঢ়। ভাই-বোনের সান্নিধ্যের মধ্যে রয়েছে বাবা-মায়ের মধুর আবেশ। দায়িত্বে-কর্তব্যে জীবনের ভারসাম্যতা রক্ষায় ভাই-বোনের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। বিপদে, প্রয়োজনে মনের ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্র হিসেবেও ভাই-বোন অগ্রগণ্য।

এছাড়া পারিবারিক সুরক্ষা জীবনের সৌন্দর্য, সাহচর্যও ব্যক্তিজীবনের পরিতৃপ্তির অন্যতম খোরাক। সময়ের আবর্তে, জীবনের পরিক্রমায় অথবা করোনার মতো মহামারীতে আর কাউকে পাওয়া না গেলেও ভাই-বোনকে পাওয়া যাবে। দিশাহীনতার মাঝে এরাই আর সবার আগে পাশে দাঁড়াবে।

জীবনের কোনও অংশের কিছু অসমতা এবং অসহিষ্ণুতা দ্বারা ভাই-বোনের এই পবিত্র বন্ধন প্রভাবিত হওয়ার নয়। আপনত্বের সুদৃঢ় উপলদ্ধিই দিতে পারে অরক্ষিতের সুরক্ষা, অপূর্ণতায় পূর্ণতা আর জীবন পথের নিরাপত্তা।

ফলে আলোকিত চিন্তার কোনও না কোনও অংশে ভাই-বোন স্থান পাওয়ার দাবি রাখে। যদিও নাগরিক জীবনের বাস্তবতা বড়ই কঠিন। জীবনের প্রাধিকার পরিবর্তন যদিও চিরন্তন কিন্তু বিস্মৃতি কাঙ্খিত নয়। একমাত্র পরিবারই বদলে দিতে পারে জীবনের অনেক কিছুই। তবে সেটা আমাদের জীবনের শুরু ও শেষ যদি পরিবারের সঙ্গেই হয়।

জীবনের উৎকর্ষতা হয়তো সবার জন্য নয়। রূঢ় বাস্তবতার কারণে সবার জীবন সমান আলোকিত হয় না। পরিবারের নক্ষত্রদের উজ্জ্বলতায় পুরো পরিবার উজ্জ্বল দীপ্তিময়ও হতে পারে। এতে দীপ্তিমানের দীপ্তি নিস্প্রভ হয় না, বরং অধিক থেকে অধিকতর হয়।

মানবজীবনের সময়সীমা সংকীর্ণ। ভারসাম্য রক্ষায় ত্রুটি/সুপ্ততা জীবনের গন্ডিকে ছোটই করে, সম্পর্কে তৈরি হয় দূরত্ব আর সীমাবদ্ধতা। পারিবারিক বঞ্চনা অথবা পরিবার বিচ্ছিন্নতা দূর্বলের জন্য জীবনের বড় পরাজয়। তাই পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা কখনওই কাম্য হতে পারে না। পরিবারের প্রতি সবসময় কোমল ও স্বচ্ছ থাকা এবং অন্তরের অনুগ্রহ সংরক্ষিত রাখা নিতান্তই সাধারন বিষয়।

মানবজীবন আমৃত্যু বিরামহীনভাবে ধাবমান। ব্যস্ততা জীবনের অন্তরায় নয়, বরং জীবনকে অধিক প্রস্ফুটিত করারই অভিপ্রায় মাত্র। তবে অতি ব্যস্ততা অন্যকে উপলদ্ধি করার অনুভূতিকে নষ্ট করে। অগ্রাধিকারের মধ্যেই কর্মের সীমাবদ্ধতা বিশেষ কারন হেতু দীর্ঘ পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি হলেও, সেসব নিরসনে এমন আত্মোপলদ্ধিরই প্রয়োজন যা দ্বারা পরিবারচ্যুত সদস্যরা আবারও পরিবারের মাঝে উজ্জীবিত হতে পারে।

বিষয়টা একেবারেই অবান্তর নয়। পারিবারিক সাহচর্য অর্থাৎ দশজন একজনের সহায়ক হলে দূর্বলকে সুরক্ষিত করা অসম্ভব কিছু নয়। আল্লাহ প্রদত্ত রহমতের অবারিত দ্বার দুর্দশাগ্রস্তের জন্য উন্মুক্ত থাকতেও পারে। তারপরও পরিবারই মানুষের নির্ভরতার প্রধান অবলম্বন।

এই কথাগুলো একান্তই আপনজনদের অন্তরের প্রতিফলন, অনুভূতিরই প্রকাশ এবং পারিবারিক সুপ্ততায় প্রভাবক স্বরূপ। সহমত অথবা ভিন্নমত পোষণ কোনওটাই অবান্তর নয়।

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ফোনালাপ, উপহার প্রেরণ, উপঢৌকন দেওয়া এসব সম্পর্ক রক্ষার নূন্যতম অবস্থা হিসেবে ধরা যেতে পারে। এসব আবার প্রত্যেকের জীবনের অবস্থানের হিসেবে বিবেচ্য যদিও। তবে পবিারের অপর কোনও সদস্যের সংকটাপন্ন জীবনকে পরিত্রাণ দেওয়ার মাঝে এই ধরনের কাজে অধিক কার্যকারিতা এবং ফলপ্রসূতা নিহিত আছে।

অর্থাৎ পরিবারের মধ্যকার কাঙ্খিত জায়গা থেকে দুর্ভোগে পড়া, সংকটে থাকা সদস্যটির পাশে দাঁড়ালে, সহায়তার হাত বাড়ালে সংকট নিরসন অথবা জীবনের নূন্যতম অবস্থানটুকু তৈরিতে তা বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। এর সঙ্গে বাড়তি হিসেবে পারিবারিক সম্মিলিত আনন্দ তো আছেই। একে অপরের পাশে থাকার অবিচ্ছিন্ন মনোভাব নিয়ে মানুষের নিরন্তর পথচলা সুন্দর ও শুভ হোক।