যেসব ফল ও সবজি খেলে ক্যানসার ঠেকানো যায়

প্রকাশ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৫৮

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ক্যানসার বা কর্কটরোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখনও পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ২০১৮ সালে বিশ্বের ৯.৬ মিলিয়ন মানুষ ক্যানসারের কবলে প্রাণ হারিয়েছেন। প্রত্যেক বছর নতুন করে ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছেন তিন লক্ষ মানুষ।

প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার রোগ সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোন চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনও পর্যন্ত ক্যানসারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি। ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যানসার রয়েছে। প্রত্যেক ক্যানসারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা।

আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় কিছুটা রদবদল করতে পারলে দূরে সরিয়ে রাখা যায় ক্যানসারকে। এই মারাত্মক অসুখ প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে বরাবর সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন ক্যানসার চিকিৎসকরা। এখনও তারা সফলতার মুখ দেখছেন না।

কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, অন্য দিকে বেশ কিছু খাবার ক্যানসারের বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।

নিরামিষ খাবার শরীর সুস্থ রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। পুষ্টি বিজ্ঞানীরাও আজ সে কথা মানেন।  ভারতের ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ জানান, উদ্ভিজ্জ খাবারে আছে পর্যাপ্ত ফাইবার,  অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালস।

টাটকা ফল সবজিতে থাকা এই সব উপকারি উপাদান ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি ক্যানসার রুখে দিতে পারে বলে। তবে বোতলবন্দি ফলের রস বা  প্যাকেটজাত মিষ্টির রসে ভরা ফল না খেয়ে টাটকা তাজা ফল ও সবজি খাওয়া উচিত। পেয়ারা, আম, জাম, আপেল, কলা-সহ যে কোনও টাটকা ফলমূল ও বিট, কুমড়ো, টোম্যাটো, ঢেঁড়সের মত সব্জি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে সাহায্য করে।

ক্যানসার প্রতিরোধ সহ আমাদের সামগ্রিকভাবে ভাল রাখতে সাহায্য করে এমন কিছু ফল ও সবজি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। অবশ্য তালিকা মিলিয়ে নিয়ম করে প্রত্যেক দিনই যে এসব সবজি ও ফল খেতে হবে তা নয়, চেষ্টা করবেন রোজের খাবারের তালিকায় মরসুমি সবজি ও ফল রাখার।

 

কলা

 

বছরভর পাওয়া যায়। অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে রোজ কলা খাওয়া যেতে পারে। সেলেনিয়ামের সক্রিয় যৌগের এক শক্তিশালি উৎস এই ফল। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মজবুত করার পাশাপাশি ক্যানসার কোষ বিনষ্ট করতে পারে ।

 

আপেল

 

দাম বেশি হলেও সারা বছরই এই ফল বাজারে মিলবে। এতে আছে প্রোসায়ানিডিনস, যা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে কার্যকর।

 

ডালিম বা বেদানা

 

থাকে ফলিফেনল নামে এক যৌগ, যা ক্যানসার সৃষ্টকারী কোষ ধ্বংস করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে। 

 

কালো আঙুর

 

আছে রেসভেরাট্রল, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে সামগ্রিক ভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

 

কমলালেবু

 

একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্যানসার ফাইটার। কমলালেবুর কোয়ায় থাকা ২_হাইড্রক্সিফ্ল্যাভনয়েড (২_এইচএফ) স্তন ও ফুসফুস ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে কার্যকর ভূমিকা নেয়। কমলালেবুর রস নয়, লেবুর কোয়া চিবিয়ে খেলে তবেই ২_হাইড্রক্সিফ্ল্যাভনয়েড পাওয়া যাবে। সারা বছর কমলা লেবু পাওয়া যায় না। তাই যে কোনও লেবু, তা সে বাতাবি লেবু হোক বা পাতিলেবু, খেলে সামগ্রিক ইমিউনিটি জোরদার হয়।

 

টমেটো

 

লাইকোপিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের মহা শত্রু। তাই রোজকার ডায়েটে টোম্যাটো রাখতে ভুলবেন না। 

 

ব্রকোলি

 

আদতে বিলিতি এই সব্জি এখন আমাদের দেশেও সুলভ। এই সবুজ রঙের সব্জিটি ইনডোল-৩ কারবিনোল নামক ফাইটোকেমিক্যালসের এক অন্যতম ভাণ্ডার। এই উপাদানটি ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে পারে।

 

বিট

 

এতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটা সায়ানিন। যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।

 

নটে শাক

 

যার বিজ্ঞানসম্মত নাম অ্যামারান্থাস ভিরিডি‌ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্যানসাররোধক। বিট বা ব্রকোলি না পেলেও সুলভে বাজারে লাল বা সবুজ নটে শাক পাবেন । সপ্তাহে ৩/ ৪ দিন এই শাক খেলে ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হবে।

শুধু ক্যানসার রোধক খাবার খেলেই চলবে না, সিগারেটসহ তামাককে জীবন থেকে বিদায় জানাতে হবে। ওজন ঠিক রাখতে নিয়ম করে শরীরচর্চা করা জরুরি, মন ভাল রাখতেই হবে। মানসিক চাপ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। মন ভাল রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্যানসার ও নভেল করোনা সহ অসুখ-বিসুখ দূরে সরিয়ে রেখে সুস্থ ভাবে বাঁচুন।

(ঢাকাটাইমস/ ১সেপ্টেম্বর/আরজেড/এজেড)