বেনাপোলে ক্রেন সংকট, আমদানি-রপ্তানি বন্ধের শঙ্কা

প্রকাশ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:৩৯

মহসিন মিলন, বেনাপোল

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট অকেজো থাকায় মালামাল ওঠা-নামা ও ডেলিভারি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ পণ্যজট। বিরাজমান জটিলতা সামাধান না হলে যেকোন সময় বন্ধ হতে পারে দুদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে ২৫ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ফর্কলিফট রয়েছে একটি ও পাঁচ টনের ফর্কলিফট রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে চারটি দীর্ঘদিন ধরে অচল।

৪০ টন, ৩৫ টন ও ১৯ টনের ক্রেন আছে একটি করে। আর ১০ টনের ক্রেন আছে দুইটি। এসব ক্রেনের মধ্যে পাঁচটি থাকে অধিকাংশ সময় অকেজো। বর্তমানে সবচেয়ে বড় ২৫ টনের ফর্কলিফটি অকেজো থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটছে মালামাল লোড-আনলোডে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বন্দরের গুদামে জায়গার অভাবে ওখান থেকে পণ্য বের করার পর নতুন পণ্য ঢোকানো হচ্ছে। খালাসের অভাবে পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকছে দিনের পর দিন। ট্রাক থেকে পণ্য নামানোর অনুমতি মিললেও ক্রেন বা ফর্কলিফট মিলছে না। ফলে জায়গা ও ক্রেন সংকটে বিপাকে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বারবার তাগাদা দেয়ার পরও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান  সাড়া দিচ্ছে না। বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি দিয়েছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করে বলেন, বন্দরের ড্রাইভার ও ইঞ্জিনিয়ারদের যোগসাজশে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি এসব ফর্কলিফট ও ক্রেন ইচ্ছাকৃতভাবে অচল করে রাখেন। মাঝে মধ্যে মেরামতের জন্য যেসব যন্ত্রাংশ কেনা হয় তা অধিকাংশই পুরনো। ফলে মাস না ঘুরতেই ফের তা অচল হয়ে পড়ে।

ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, এই বন্দর দিয়ে দেশের সিংহভাগ শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ ও বিভিন্ন প্রকল্পের মেশিনারিজ আমদানি করা হয়। ক্রেন ও ফর্কলিফট ছাড়া এ জাতীয় পণ্য বন্দরে লোড-আনলোড করা সম্ভব না।

তিনি বলেন, ৩৬ হাজার টন ধারণক্ষমতার বন্দরে প্রতিদিন ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টন পণ্য ওঠা-নামা করা হয়। বন্দরের জায়গা ও ক্রেন সমস্যার সমাধান না করলে বেনাপোল বন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দরে চলে যাবেন।

বন্দরে কোনোভাবে কাজ চালিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ক্রেন সংকটের কারণে গভীর রাত পর্যন্তও কাজ করতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিরা ক্রেন পেলেও গুদামে আর জায়গা থাকে না। তখন ভেতরের পণ্য বের না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

অভিযোগ উঠেছে, ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ মালামাল বন্দরে ঝুঁকি নিয়ে রাখা হচ্ছে। মালামাল রাখার জায়গা না থাকায় প্রতিদিন কয়েকশ ট্রাক মালামাল নিয়ে বন্দরের পাশের সড়কে বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে থাকছে দিনের পর দিন।

ব্যবসায়ীদের এসব অভিযোগের কথা স্বীকার করে বেনাপোল স্থলবন্দরের ডেপুটি ডাইরেক্টর মামুন তরফদার বলেন, বর্তমানে প্রচুর পরিমান মালামাল আসছে ভারতে থেকে। এজন্য জায়গার কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে বন্দরে ক্রেন ফর্কলিফটের সমস্যা আছে। আইনি জটিলতার কারণে  সমস্যাগুলো হচ্ছে। অচিরেই সব ধরনের সমস্যা সমাধান করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১সেপ্টেম্বর/কেএম)