মৌলভীবাজারে মাদক সেবন-ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:৫৪ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:৫৬

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

মৌলভীবাজার শহরে প্রকাশ্যে মাদক সেবন, নারী ধর্ষণ ও এসব ফেসবুকে প্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শহরের চৌমুহনা চত্বরে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন শেষে এক প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

সমাবেশে বক্তারা অভিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি জানান। পরে এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক বরাবর প্রদান করেন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন- মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ্ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ সাহাব উদ্দিন আহমদ, সচেতন নাগরিক সমাজ’র সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, জেলা যৌন হয়রানী নির্মূল কমিটির সভাপতি রাশেদা বেগম, সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি খালেদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আলীম উদ্দিন আলীম, শেখ বুরহান উদ্দিন (রহ:) ইসলামী সোসাইটির চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান মুহিব।

প্রসঙ্গত, গত ৩ আগস্ট শহরের সুনাপুর এলাকায় মাহমুদ এইচ খানের বাসায় মদ ও গাঁজা পার্টির আসর বসে। ওই সময়ে বন্ধুদের নিয়ে মাদক পার্টি ও ধর্ষণের আড্ডা হয়। সেখানে মাহমুদ, সজিব, রায়হান, মার্জিয়া প্রভা ও মারিয়া ছিলেন। পরে ২৫ আগস্ট সজিবের বিরুদ্ধে তার বান্ধবীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় মাহমুদ। পরদিন ২৬ আগস্ট সজিব ধর্ষণের কথা অস্বীকার করে মেয়েটির ইচ্ছাতেই সব হয়েছে বলে পাল্টা পোস্ট দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন থেকেই পাল্টাপাল্টি কিছু ছবিসহ স্ট্যাটাস দেওয়া হয় ফেসবুকে। বিষয়টি নিয়ে মৌলভীবাজারসহ ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

জানা গেছে, সাবেক ছাত্র মৈত্রী নেতা ও বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফর ডটকম’র সাবেক প্রতিনিধি মাহমুদ একটি ধর্ষণের ঘটনার বিবরণ তার ফেসবুক পেইজে তুলে ধরে অভিযোগ করেন, সামাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সজিব নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন গত ৩ আগস্ট তার নিজ বাসায় একটি পার্টির আয়োজন করা হয়। সেখানে একজন নারীবাদী ও অ্যাক্টিভিস্ট মার্জিয়া প্রভা, বাম নেতা রায়হান আনছারী, ছাত্রফ্রন্টের সজিবুল ইসলাম তুষার ও তার এক নারী বন্ধু যোগ দেন। খাওয়া-দাওয়া শেষে সেখানে সবাই গাঁজা সেবন করেন। এক পর্যায়ে নেশাগ্রস্থ হয়ে তুষার তার ওই নারী বন্ধুকে ধর্ষণ করে। এই কাজে বাধা দিলেও মার্জিয়া প্রভা বন্ধু সজিবকে এ কাজে সহযোগীতা করেছেন বলে তিনি তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন।

একদিন পর অভিযুক্ত সজিব তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, ওইদিন নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ওই মেয়েটির সঙ্গে তার অন্তরঙ্গতা হয়।

তবে ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি ওই মেয়েটির আগ্রহে এ কাজ করেছেন বলে জানা। এরপর তাদের মাদক সেবন ও অন্তরঙ্গতার বেশ কিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে জেলার সচেতনমহল, তরুণ-যুবসমাজসহ ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

এছাড়া, এ ঘটনায় মৌলভীবাজার সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শহর শাখার সভাপতি সজিবকে সংগঠনের সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির বর্ধিত ফোরামের সদস্য রায়হানকেও সংগঠনের সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব গত রবিবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরি মাহমুদকে সহযোগী সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করেছে।

মাহমুদ যে বাড়িতে থাকতেন, ওই বাড়ির কেয়ারটেকার গণী মিয়া জানান, মাহমুদ এই বাসায় তার পরিবার নিয়ে থাকবেন বলে ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তার মা-বোন এখান থেকে অনত্র চলে যান। আর তার স্ত্রী ঢাকায় একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তাই তিনিও ঢাকায় চলে যান। মাঝেমধ্যে এ বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু বিষয়টি তারা বুঝে উঠতে পারেননি।

কেয়ারটেকার আরও জানান, প্রায়ই ওই বাড়িতে পার্টি ও উচ্চস্বরে গান-বাজনা হত। সেখানে মেয়েরাও আসত। মাহমুদ তাদের তার বন্ধু বলে পরিচয় দিতেন।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মাহমুদের এক প্রতিবেশী জানান, মাহমুদের বাসায় মেয়েদের আসা-যাওয়া ছিল নিয়মিত। তার এসব পার্টিতে যোগ দিতেন বেশ কিছু পরিচিতজন।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক জানান, এই ঘটনায় ৩১ আগস্ট মৌলভীবাজার মডেল থানায় পৃথক দুইটি মামলা হয়। পরিচয় প্রকাশ করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী। মোস্তফা কামাল বিজয় নামে এক সমাজকর্মী ও ইউটিউবারের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। অপর মামলায় সজিবকে প্রধান আসামি ও রায়হান এবং নারী সুরক্ষা আন্দোলনের নেত্রী মার্জিয়া প্রভাকে ধর্ষণের সহযোগী উল্লেখ করে মামলা করেন ওই তরুণী ।

(ঢাকাটাইমস/৩সেপ্টেম্বর/পিএল)