‘চুরির জন্য নয়, ইউএনওর ওপর হামলা পরিকল্পিত’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৩২

গ্রেপ্তারকৃতরা নিছক চুরির জন্য দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের বাসায় গিয়েছিল বলে দাবি করলেও তা মানতে নারাজ বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বাসা)। সংগঠনটির মতে হামলার ঘটনাটি পরিকল্পিত। স্থানীয় একটি মহলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং অবৈধভাবে বালু তুলতে বাধা দেয়ায় ইউএনওর ওপর হামলা হয়েছে বলে মনে করছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার সদস্যদের সংগঠনটি।

শনিবার বিকালে রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ এসব কথা বলেন।

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদা খানম সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ ও বালু মহলের অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা দেন। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল তার ওপর বেআইনি তদবিরে ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’

হেলালুদ্দীন বলেন, ‘কোনো কোনো মহল ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য বিচ্ছিন্ন ও চুরির ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার অপপ্রচার চালাচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এটি কোনো চুরির ঘটনা নয়। কারণ দুর্বৃত্তরা কোনো ধরনের জিনিস চুরি করেনি বা তার বাসা থেকে খোয়া যায়নি। এটি একটি পরিকল্পিত হামলার ঘটনা এবং এর সঙ্গে আরও অনেক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন।’

ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় আটককৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলেও ‘তদন্তের স্বার্থে’ এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি সংগঠনের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন।

সচিব বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ইউএনও ওয়াহিদা ইদানীংকালে কিছু উচ্ছেদ করেছেন। আরও কিছু উচ্ছেদ করার জন্য কিছু লোকজন তার ওপর সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। ওখানে যে বালুমহাল অবৈধভাবে বালু তুলতে তিনি বাধা দিয়েছিলেন। এ সমস্ত কারণে প্রভাবশালী কেউ হয়ত তার ওপর ক্ষিপ্ত হতে পারেন। সেটির বহিঃপ্রকাশ এভাবে হতে পারে বলে আমরা মনে করি।’

‘তবে সুনির্দিষ্টভাবে তদন্তের স্বার্থে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটি তদন্ত করছে, সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে উদ্দেশ্য করে আমরা সেটা বলতে পারছি না। একটা জিনিস তদন্ত কার্যক্রম যখন চলে, তখন আমরা সুনির্দিষ্টভাবে যদি কথা বলি, তাহলে কিন্তু তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।’

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ ইউসুফ হারুন প্রশাসনিক কার্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের চিত্র তুলে ধরেন। বলেন, ‘উপজেলাতে বিভিন্ন পেশা ও সংগঠনের লোকজন এখানে থাকেন, অবস্থান করেন। মানুষের যে চাহিদা, চাহিদা অফুরন্ত হয়ে গেছে। সে চাহিদার মধ্যে কোনটা আইনি, কোনটা বেআইনি এটা কিন্তু তারা অনেক সময় বাছবিচার করে না।’

‘আইনগত বিষয় যেগুলো রয়েছে, আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ের যে কর্মকর্তা, ইউএনও সাহেব কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকেন। মোবাইল কোর্ট থেকে শুরু করে আইনের প্রতিটি বিষয় ওনি দেখভাল করে থাকেন, যেন কোথাও আইনের ব্যত্যয় না হয়। কোথাও আইনের ব্যত্যয় করে যদি কিছু আবদার করা হয়, তখন অনেকে (ইউএনও) তাদের বিরাগভাজন হন।’

এই দুর্বৃত্তদের কেউ রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করেন সংগঠনের মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যে সমস্ত লোকজন এই দুর্বৃত্তায়ন করে, তাদের যে সবসময় রাজনৈতিক প্রভাব থাকে এরকম না। অন্য জায়গা থেকে এসেছে। অন্য দল থেকে এসেছে। তারাও কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরকম রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়ে এ সমস্ত কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে। সব রাজনীতিবিদ যে খারাপ এরকম নয়। সব দুর্বৃত্ত কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য, এটি আমরা মনে করি না।’

হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ওয়াহিদা খানম তেমন কোনো চাপে ছিলেন বা অস্বস্তিত্বে আছেন বলে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে শেয়ার করেননি।’

তিনি জানান, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রংপুরের একজন কমিশনারকে প্রধান করে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা তদন্তকারী দলগুলোকে নিজেদের মতামত ও পর্যবেক্ষণ জানাবেন।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসকদের নিরাপত্তার জন্য ইতিমধ্যে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে তাদের নিরাপত্তায় ব্যাটালিয়ান আনসার নিয়োগ দেয়ার দাবি জানিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ‘সব জেলাতে ব্যাটালিয়ান আনসার নেই, যেসব জেলাতে আছে, আমরা সেখানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসকদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগ দেয়ার জন্য আবেদন জানাব।’

সংবাদ সম্মেলনে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুনের মামলার প্রসঙ্গটি উঠে আসে। হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আপনারা শুনেছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ডক্টর রহিমা খাতুনের বিরুদ্ধে কতিপয় অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ও একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির প্ররোচনায় ফৌজদারি আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য পিআইবির কাছে পাঠিয়েছে। অসংলগ্ন কথাবার্তায় ভর্তি এরকম একটি আর্জির ভিত্তিতে একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা নজিরবিহীন এবং দুর্ভাগ্যজনক। যদি মামলা গ্রহণ করা হয় তাহলে জেলা প্রশাসন কী করে তার দায়িত্ব পালন করবেন? আমরা অবিলম্বে এই মামলাটি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারসহ যিনি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

(ঢাকাটাইমস/০৫সেপ্টেম্বর/এআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রশাসন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

প্রশাসন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :