‘মসজিদ মিশনে আর জঙ্গিবাদের চর্চা চলবে না’

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:১১

রাজশাহীর মসজিদ মিশন একাডেমি থেকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রণ এবং সেখান থেকে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শনিবার বিকালে রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখা এর আয়োজন করে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরও মসজিদ মিশন একাডেমিতে জঙ্গিবাদের চর্চা চলে। এটা আর হতে দেয়া হবে না। আমরা স্কুল বন্ধের পক্ষে নই। আমরা এই প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন চাই। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের দায়িত্ব দিতে হবে। আর যেসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের মামলা রয়েছে তাদের সরাসরি অব্যাহতি দিতে হবে। তা নাহলে রাজশাহীতে আন্দোলন চলবেই।

জামায়াত নিয়ন্ত্রিত মসজিদ মিশন সংস্থা ১৯৭৬ সালে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে নিবন্ধন নেয়। পরে তারা রাজশাহীতে একে একে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। অথচ সংস্থার গঠনতন্ত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথা ছিল না। আবার নিবন্ধন নেয়ার পর মসজিদ মিশন সংস্থা কোন দিন অডিট করায়নি। কমিটিও অনুমোদন নেয়নি। নিজেদের ইচ্ছেমতোই কমিটি করা হয়। মসজিদ মিশন ও তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকেই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যেক্ষভাবে সম্পৃক্ত।

প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ১১ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির ১১ কোটি টাকার কোন হদিস নেই। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মসজিদ মিশন একাডেমির প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এরপরই প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর দাবি উঠেছে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মসজিদ মিশনের ১১ কোটি টাকা জঙ্গিবাদে ব্যয় করা হয়েছে। এখানকার শিক্ষকদের আমাদের পয়সায় বেতন হয়। কিন্তু তারা আমাদের রক্ত নিয়ে হুলি খেলে। তারা আমাদেরই বুকের ওপর উঠে আমাদের সন্তানদের জঙ্গিবাদ শিক্ষা দেয়। এর শেষ রাজশাহীবাসীকেই করতে হবে। অবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের অব্যাহতি দিতে হবে। তা নাহলে আমরাই গিয়ে তাদের ঘাড় ধরে বের করে দেব। পরিচালনা পর্ষদও পুনর্গঠন করা হবে।

তারা বলেন, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানের মহিলা শাখায় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে মেয়েরাও নিরাপদ নয়। আমরা আজ রাস্তায় নেমেছি সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। সুতরাং সরকারকেই এখন যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আমাদের দাবি থেকে এক বিন্দুও পেছনে সরে আসব না।

প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাজশাহী মহানগরের নির্বাহী সভাপতি ড. সুজিত সরকার। পরিচালনা করেন সদস্যসচিব শাহ আলম বাদশা।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক কবি আরিফুল হক কুমার, নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক উপাধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী মোল্লা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলার সাধারণ সম্পাদক অঞ্জনা সরকার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জেলার সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামার উল্লাহ সরকার কামাল, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামের জেলার সভাপতি নিতাই কুমার সরকার, শহিদ জামিল আক্তার রতন স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক মনির উদ্দিন পান্না, সাবেক ছাত্রনেতা মীর ইসতিয়াক আহমেদ লিমন, তামিম শিরাজী প্রমুখ।

মসজিদ মিশন একাডেমিকে ঢেলে সাজানোর দাবিতে গত ২২ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ও মহানগর ইউনিট মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। একই দাবিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রাজশাহীর পক্ষ থেকে গত ২৫ আগস্ট মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়া ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রাজশাহী জেলা শাখার পক্ষ থেকে মানববন্ধন করে একই দাবি জানানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :