কুড়িগ্রামে লাশ চুরি ঠেকাতে সারাক্ষণ কবর পাহারা!

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:১৮

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে উপজেলায় বজ্রপাতে নিহত এক কলেজছাত্রের লাশ চুরি ঠেকাতে কবরের পাশে পাঁচদিন ধরে দিনেরাতে পাহারা দিচ্ছেন নিহতের স্বজনরা। পাহারাদারদের জন্য চা-নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে নিয়মিত।

সরেজমিনে শনিবার দুপুরে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামে চোখে পরে এই দৃশ্য। নিহত কলেজছাত্রের কবরের পাশে পলিথিনের তাঁবু ও কাঠের চৌকি বসিয়ে বসার এবং শোয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাশ চুরি ঠেকাতে নিহতের স্বজনেরা এভাবে আগামী তিন মাস পাহারা দেবেন বলে জানান নিহতের বাবা শহিদুল ইসলাম, মামা মফিজুল হক ও মামি কুলসুম বেগম।

গত ১ সেপ্টেম্বর সকালে কলেজছাত্র আরিফুল ইসলাম বৃষ্টি আসার পরে কলার ভেলায় করে নীলকমল নদীতে পলিথিন দিয়ে শ্যালো মেশিন ঢাকতে যায়। এ সময় বজ্রপাতে মারা যায় আরিফুল। তিনি ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আরিফুল ইসলাম ছোট বেলা থেকেই নানার বাড়িতে থাকতেন এবং সেখান থেকেই পড়াশুনা করতেন। নানা বাড়ির পাশেই মায়ের কেনা জমিতে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

এদিকে কবিরাজী শাস্ত্র অনুযায়ী বজ্রপাতে মারা যাওয়া কলেজছাত্র অবিবাহিত হওয়ায় তার মাথা মূল্যবান। তাই লাশ চুরি ঠেকাতে গত পাঁচদিন যাবৎ কবর পাশে স্বজনেরা পাহারা দিচ্ছেন।

পালাবদল করে নিহতের নানা আজগার আলী, মামা হাফিজুর রহমান, স্বপন, সোহাগ ও আরিফুলের ছোট ভাই আশিকুর রহমান পাহারা দেন। দিনে ও রাতে সমানভাবেই জেগে কবর পাহারা দিচ্ছেন তারা।

নিহত আরিফুল ইসলাম কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভাগডাঙ্গা ইউনিয়নের কুমোরপুর কদমতলা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। আরিফুলের মামা মফিজুল হক ও মামি কুলসুম বেগম জানান, আরিফুল আমাদের অনেক আদরের ছিল। ছোট্র থেকে আরিফুলের মা রাহিলা বেগমসহ তার তিন ছেলে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে দেখাশোনা করেছি। বর্তমানে আরিফুলের মা রাহিলা বেগম জর্ডানে রয়েছেন। আরিফুলের বাবা-মা পাশে না থাকলেও তারা তিন ভাইবোন আমাদের আদর-যত্নে বড় হয়। এর মধ্যে আরিফুল হঠাৎ বজ্রপাতে মারা যায়।

স্বজনরা বলেন, কথিত আছে, বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির লাশের মাথা কবিরাজী শাস্ত্রমতে অনেক মূল্যবান। এজন্য লাশটি চুরির আশঙ্কায় আমরা রাতদিন ভাগিনার কবর পাহারা দিচ্ছি।

নানা আজগার আলী জানান, আরিফুল ইসলামের বাবা শহিদুল ইসলাম তার মা রাহিলা বেগমকে ডিভোর্স দেয়। তখন আরিফুল ইসলামসহ তার তিন ভাই-বোন ছিল শিশু। তিন শিশুকে নিয়ে রাহিলা বেগম আমার বাড়িতে থাকেন। অনেক কষ্টে তিন সন্তানকে লালন পালন করেছেন।

আরিফুল এসএসসি পাশ করার পর রাহিলা বেগম পাড়ি জমান জর্ডানে। জর্ডান থেকে বড় ছেলে আরিফুল ইসলামের নামে টাকা পাঠাতেন। ভালভাবে লেখাপড়ার জন্য খোঁজ খবর নিতেন তার মা। বড় স্বপ্ন ছিল আরিফকে নিয়ে। কিন্তু দরিদ্র সংসারের সে আশা লন্ডভন্ড হয়ে গেল।

বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান খয়বর আলী জানান, বজ্বপাতে কলেজ ছাত্র আরিফুল ইসলাম মারা গেছে। কিন্তু রাতদিন কবর পাহারা দিচ্ছেন তা আমার জানা নেই।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির কঙ্কালে কোনো মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে না। এটা কুসংস্কার ও অযৌক্তিক। বজ্রপাতের সঙ্গে নিহত ব্যক্তির কঙ্কালের কোনো সম্পর্ক নেই। বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির কঙ্কালে মূল্যবান কিছু আছে, এমন ধারনা সম্পূর্ণ ভুল।

(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :