সালমান শাহ: চলচ্চিত্রের উঠোন থেকে অকালে নিভে যাওয়া প্রদীপ

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:১৮ | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৫৮

লিটন মাহমুদ

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন আনপ্যারালাল নায়ক। মৃত্যুর পরেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সিনেমার আবির্ভাব ছিল ধূমকেতুর মতো। তিনি সালমান শাহ। আছেন হৃদয়ে, থাকবেনও চিরকাল। প্রস্থানের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে এ নায়কের প্রতি শ্রদ্ধা। শুরুটা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে। এরপর খুব বেশি ছবি করা হয়নি সালমান শাহর। কারণ, চলচ্চিত্রের রঙিন পর্দায় এই নায়কের সময়-ঘড়ির বয়স ছিল খুবই অল্প। মাত্র তিন বছর পাঁচ মাস বারো দিন। ক্যারিয়ারের ছবির সংখ্যা যদিও সাতাশটি তবুও ভাটা পড়েনি তার জনপ্রিয়তায়। হয়তো তিনি নেই, তবুও যে তিনি আছেন খুব বেশি।

‘স্বপ্নের পৃথিবী’তে তিনি স্বপ্নের নায়ক। এখন যদিও তিনি মেঘের ওপারে এই নায়কের ‘স্বপ্নের ঠিকানা।’ তবুও ‘আশা ভালোবাসা’য়, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ যে রয়ে যায়। জীবনের গোলক ধাঁধায় ‘জীবন সংসার’ কেটে গেছে বহু বহু দিন। তবুও আজও আবেগের ‘দেনমোহর’-এ ‘প্রেম পিয়াসী’ মনে তারুণ্যের মিছিল স্লোগান মুখর ‘তোমাকে চাই।’

যদিও জানি ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ তবুও ‘অন্তরে অন্তরে’,‘বিক্ষোভ’,‘বুকের ভিতর আগুন’ আর চোখের ‘মহামিলন’-এ ‘আনন্দ অশ্রু’,‘তুমি আমার।’ জলের জোয়ার ভাটার খেলায় ‘এই ঘর এই সংসার’-এ হয়তো বেরিয়ে যাবে দিন মাস বছর। তবু ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ পর্যন্ত ভক্তকুলে ‘প্রেম যুদ্ধে’ শুধু তুমিই যে ‘সুজন সখি’। কোটি ‘আঞ্জুমন’,‘প্রিয়জন’ স্নেহের সেই একটি নাম সালমান শাহ।

ক্ষণজন্মা এ নায়ককে হারানোর ২৪ বছর। তবুও এতটুকু মলিন হয়নি কেউর মন। যদি বলি বর্তমান অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক কিংবা প্রযোজক অথবা সাধারণ দর্শকের কথা, হয়তো সেখানে প্রতিটি মিছিলের স্লোগানে আছেন তিনি। হৃদয়জুড়ে সবার একই সুর সালমান শাহ একজনই। তার শূন্যতা কখনই পূরণ হওয়ার নয়। চলচ্চিত্রের উঠোনজুড়ে যে রঙিন বাতাস মৃত্যুর ২৪ বছর পরও সেই আকাশে দ্যুতি ছড়ানো ভীষণ রকম উজ্জ্বল একটি নক্ষত্র সালমান শাহ।

অভিনয় স্টাইল আর ব্যক্তিত্বে তিনি শুধু তরুণদের কাছেই নয়, অগ্রজদের কাছেও প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। মাত্র সাতাশটি সিনেমা দিয়েই মনোরঙিন করেছিলেন সিনেমাপ্রেমীদের। দশকের পর দশকেও এতটুকু ভাটা পড়েনি তার জনপ্রিয়তা। তাই হয়তো বা এই প্রজন্মের মিছিলেও রয়েছে ক্ষণজন্মা এই নায়কের প্রতি তুমুল মুগ্ধতা ও ভালোবাসার স্লোগান। হৃদয়জুড়ে তিনিই ঢালিউড যুবরাজ। প্রিয় এই নায়ককে দেখতে না পাওয়ায় এ প্রজন্মের তরুণরা মনে করছেন তাদের জীবনে এক অপূর্ণতা রয়ে গেছে। তবুও প্রিয় নায়কের হত্যার বিচার চান তারা।

এ প্রজন্মের পরিচালক ও চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সালমান শাহ আজ বেঁচে থাকলে হয়তো চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির এই বেহাল দশা হতো না। তার অকাল প্রয়াণে ইন্ডাস্ট্রির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এখনও নায়ক সংকটে ঢালিউড চলচ্চিত্র। দুই যুগেও মেলেনি মৃত্যু-রহস্যের জট। ভক্ত-অনুরাগীদের প্রত্যাশা তবুও কমেনি বিন্দু পরিমাণ।

১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ মাত্র তিন বছর পাঁচ মাস বারো দিন। চলচ্চিত্রের উঠোনে যদিও বয়সটি ছিল এমনই তবুও এই অল্প সময়ে রঙিন সব গল্পে রাঙিয়েছেন সিনেমার রঙিন পর্দা। প্রিয় এ নায়কের হঠাৎ প্রস্থানে থমকে গিয়েছিল যে সময়, আজও তা থমকে আছে। ভক্তদের প্রত্যাশা একদিন হয়তো বিচার হবে সেই হত্যাকাণ্ডের। আর সেদিন হয়তো ‘মায়ের অধিকার’-এ আঁচল ছেড়ে যাবে ন্যায়ের সু-বাতাস। যদিও থেমে গেছে জীবন প্রদীপ তবুও শিখাটা যে ভীষণ রকমের উজ্জ্বল। সালমান শাহ ছিলেন, আছেন, থাকবেন এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।

লেখক: সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/এসকেএস