মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:৪৮ | প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:৩৯

মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে নিজের ছাত্রদের হাতে প্রাণ হারালেন এক স্কুল শিক্ষক। রবিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা এলাকায় লবলং খাল থেকে স্কুল শিক্ষক রাসেল রানার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত রাসেল গাজীপুরের শ্রীপুরের সিংদিঘি গ্রামের সুজন আলীর ছেলে। অভিযুক্ত ইমরান বারতোপা গ্রামের বাক্কার মন্ডলের ছেলে।

নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, পরিবারে দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে রাসেল রানা বড়। সংসারে সুখের আশায় হতদরিদ্র পরিবারের বাবা বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। গত বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন রাসেল। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় শিশু কানন নামের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।

কয়েকদিন আগে স্থানীয় ইমরানসহ কয়েকজন মাদক কারবারিকে পুলিশের হাতে তুলে দেন রাসেল। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মাদক কারবারিরা। গত শনিবার বিকালে স্থানীয় বারতোপা বাজারে চায়ের স্টল থেকে ধরে নিয়ে যায় ইমরানের নেতৃত্বে কয়েকজন মাদক কারবারি। পরে তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে মারা গেলে রাতের আঁধারে পাশের লবলং খালের তীরে তার মরদেহ ফেলে দেয়া হয়।

ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবরে বাবা তার বিভিন্ন স্বজনদের নিয়ে সারারাত খুঁজতে থাকেন। পরে রোববার সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে স্থানীয় বিলাইঘাটা এলাকায় লবলং খালের পাড় থকে ছেলের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করেন।

নিহত রাসেলের বাবা সুজন আলীর ভাষ্য, ছেলে রাসেল শনিবার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল বাজারে যাওয়ার জন্য। তার বন্ধু তাকে মোটরসাইকেলে করে বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল। পরে সন্ধ্যায় খবর পান তার ছেলেকে ইমরান নামে এক যুবক বাজার থেকে ধরে নিয়ে মারধর করছে।

সারারাত ছেলের সন্ধানে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন সুজন আলী। কিন্তু ছেলেকে পাওয়া যায়নি। সবাই বলছে অভিযুক্ত ইমরান কয়েকজনকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে ঘুরেছেন আর মোড়ে মোড়ে নামিয়ে মারধর করেছেন।

তিনি জানান, দুই সপ্তাহ আগে ইমরানকে স্থানীয় মাওনা পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল মফিজুল ইসলাম বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। পরে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেন। এর পর থেকে রাসেলের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে গেছেন ইমরান। শনিবার রাসেলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ইমরানের বাবার হাতে পায়ে ধরেছি। ইমরানকেও ছেড়ে দিতে মুঠোফোনে বারবার অনুরোধ করেছি। সে বলেছে কিছু মারধর করে ছেড়ে দিয়েছে। রাতেই বাড়ি চলে আসবে। কিন্তু রাসেলতো আর বাড়ি ফিরলো না। সন্ধ্যা থেকে পুলিশ কনস্টেবল মফিজুলের সঙ্গে বারবার ছেলেকে উদ্ধার করতে সহযোগিতা চেয়েছেন সুজন আলী। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না।

নৃশংস এই হত্যার ঘটনায় পরিবারের শোকের মাতম চলছে। নিহতের পরিবারে ভিড় করছেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা। তারা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে মাওনা ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে স্থানীয় সলিং মোড় থেকে ইমরানকে ফাঁড়িতে ডেকে নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না থাকায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়। ঘটনার রাতে রাসেলের পরিবারের পক্ষ থেকে কনস্টেবল মফিজুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু মফিজুল ফাঁড়ির ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানায়নি।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। ব্যাপক মারধর করে শ্বাসরোধ করে এ যুবককে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের পর হত্যার কারণ জানা যাবে। থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :