সুনামগঞ্জে কৃষকদের উন্নয়নে তিনটি আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:০৮

প্রতিবারেই প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে ফসল আবাদ করে কখনও ফসল ঘরে উঠে, কখনও ফসলহারা হতে হয় কৃষকদের। এমনকি কোনো বছর উৎপাদন খরচ পর্যন্ত উঠে না। এর কারণ হিসেবে প্রকৃতিকে যেমন দায়ী করা হচ্ছে, তেমনি কৃষকের আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণের অভাবের কারণেই অনেকটা বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। এর থেকে মুক্তি দিতে হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জের তিনটি উপজেলায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যেই ভবনগুলো হস্তান্তর করতে পারবে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিভাগ।

জেলায় এমন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে হাওর বেষ্টিত তাহিরপুর, জগন্নাথপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায়। এছাড়াও উপজেলা প্রর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (৩য় প্রর্যায়) প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৫১টি গাড়ি ৫১টি উপজেলায় দেয়া হয়েছে।

দেশে নতুন নতুন ধান কাটার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন, মারাই মেশিনসহ নানাবিদ কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি আবিস্কার হলেও এসবের সঙ্গে অনেক কৃষকের পরিচয় নেই। এসব মেশিনের ব্যবহার ও কলাকৌশল সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণও নেই। তাই কৃষকরা পুরনো পদ্ধতি লাঙ্গল-জোয়াল গরুর সঙ্গে বেঁধে হালচাষ ও কাঁচি হাতে ধান কাটেন। সার্বিক বিবেচনায় কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে কৃষকদের প্রশিক্ষণের জন্য এসব সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

গণপূর্ত প্রকৌশলী সূত্রে জানা গেছে, জেলার তিন উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে প্রত্যেকটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৩.৫৪ লাখ টাকা। এই তিনটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র একই আদলে হচ্ছে এবং কাজ তিনটি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

হাওর পাড়ের কৃষক রফিক মিয়া, ইসলাম উদ্দিনসহ অনেকেই বলেন, তারা বংশ পরম্পরায় পেশা হিসেবে কৃষিকেই বেছে নিয়েছেন। কারণ এর বিকল্প কাজের সংস্থান নেই হাওর পাড়ে। তাই কৃষি কাজ করেই জীবন জীবিকার একমাত্র চালিকাশক্তি। ফলে প্রতি বছরেই প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে ফসল ফলাতে গিয়ে নানা কারণে ক্ষতির শিকার হতে হয়। কোনো বছর উৎপাদন খরচ পর্যন্ত উঠে না। কৃষকের আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণের অভাবে দুভোর্গের শিকার হতে হচ্ছে বছরের পর বছর। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণ কৃষকদের আত্মপ্রত্যয়ী করবে। ফসল ফলাতে সহজ হবে এবং ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না কোন কৃষককে।

হাওরের বাসিন্দারা জানান, হাওরের কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সঙ্গে এর ব্যবহার হাতে কলমে শিখিয়ে দিলে কৃষকরা সহজেই উৎপাদনমুখী হবেন এবং উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যাবে।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দোলা বলেন, কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ সম্পন্ন হলে উপজেলার কৃষকদেরকে আমরা কৃষি সম্পর্কিত নানান প্রযুক্তি বিষয়ে জানাতে পারবো। কোন ফসল কখন রোপন ও কাটতে হবে এবং কোন যন্ত্র কিভাবে ব্যবহার করতে হবে তা শিখিয়ে দিলে তারা নিজেরাই চালাতে পারবেন। এতে করে তাদের কৃষি কাজে উৎসাহ যোগাবে এবং উৎপাদনও বাড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সফর উদ্দিন জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় এই প্রথম তিনটি কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। অত্যাধুনিক দ্বিতল এ ভবনে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি অফিসসহ কৃষকদের নতুন নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এটি নির্মাণ শেষে কৃষক এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিলে লাভবান হবেন।

সুনামগঞ্জে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন বলেন, জেলায় এই প্রথম হাওরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য তিনটি উপজেলায় তিনটি কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। এগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :