ফেনীতে বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন প্রকল্পের কাজে ধীরগতি

আরিফ আজম, ফেনী
 | প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:২৯

গত ২ বছরেও ফেনী পৌরসভার সুলতানপুরে বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন কেন্দ্র প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। দ্বিতীয় দফায় কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পরও এখন পর্যন্ত সার উৎপাদন কেন্দ্র হস্তান্তর করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে নির্মাণাধীন বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন প্রকল্পের দ্বিতীয় মেয়াদ।

পথচারীদের অভিযোগ, শহরে যেখানে সেখানে আবর্জনার উৎকট দূর্গন্ধে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।

তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যেই কাজটি পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্পের জন্য ১১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের একটি শেড তৈরি করা হয়েছে। শেডের ভেতর ১৯টি আবর্জনা রাখার হাউজ তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে প্রধান ফটক। এখন চলছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ।

পৌরসভা, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ফেনী শহরের প্রবেশপথ দেওয়ানগঞ্জ, বিসিক রাস্তার মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে বর্জ্য স্তুপ করা হতো। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘জৈব আবর্জনা ব্যবহার করে প্রোগ্রামেটিক সিডিএম-২য় প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিবেশ অধিদপ্তর। বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করতে দেশের অগ্রসরমান পৌরসভা ফেনী ও কিশোরগঞ্জে এ প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রথম প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর ও কক্সবাজারে বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন চলমান রয়েছে।

ফেনী পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার নাথ জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ১ কোটি ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭ টাকা বরাদ্দে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট প্রকল্পের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মঞ্জুরুল হক মঞ্জু। ওই বছরের ৭ অক্টোবর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড সুলতানপুর এলাকায় জৈবসার উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মেয়র হাজী আলাউদ্দিন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ৭০ শতক জমির উপর ২০১৯ সালের ১ মে কাজটি শেষ করার নির্দেশনা দেয় পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম (সিডিএম) ও ফেনী পৌরসভা। নির্ধারিত সময়ে কাজের ৪০ ভাগ বাকী থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন। পরে আবেদন বিবেচনা করে দ্বিতীয় মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য সময় বাড়ানো হয়।

প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে থাকা সেন্টু মিয়া জানান, ইতোমধ্যে কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। গেইট নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ প্রান্তে। এখন সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ চলছে। অক্টোবরের আগেই এটি হস্তান্তর করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, কয়েক দফায় গেট, সীমানা প্রাচীর তৈরির স্থান ও ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তনগুলো প্রকল্পের কার্যালয় থেকে অনুমোদন করতে সময় নষ্ট হওয়ায় যথাসময়ে কাজ শেষ করা যায়নি।

পৌরসভা সূত্র জানায়, প্রতিদিন ফেনী পৌরসভায় ৭০ থেকে ৮০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। এসব বর্জ্য থেকে পচনশীল দ্রব্য ও অপচনশীল দ্রব্য আলাদা করে প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে। জেলায় নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের ধারণ ক্ষমতা দৈনিক ৭ টন। প্রাথমিকভাবে দুই বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি এনজিও এটি পরিচালনা করবে। তারা এখান থেকে উৎপাদিত জৈব সার সরাসরি কৃষকের কাছে বিক্রি করে এর চাহিদা তৈরি করবেন। এছাড়াও তারা এখানে স্থায়ীভাবে জনবল তৈরির জন্যেও কাজ চালিয়ে যাবেন।

পৌরসভার প্যানেল মেয়র আশরাফুল আলম গীটার জানান, প্রকল্পটি চালু করতে সংশ্লিষ্ট দাতা সংস্থা খুবই আন্তরিক। এটি চালু হলে ফেনী হবে ‘গ্রীন সিটি ও ক্লিন সিটি’।

এ বিষয়ে ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন বলেন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটির কাজ শেষ প্রান্তে। অক্টোবরের শুরুর দিকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। এটি চালু হলে একদিকে ময়লা আবর্জনার স্তুপের ক্ষতিকর অবস্থা থেকে রেহাই পাবে পৌরবাসী। অন্যদিকে প্রতিদিন প্রকল্পের মাধ্যমে ৭ থেকে ৮টন জৈবসার উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৯৬ হাজার টাকা। এর থেকে বছরে পৌরসভার আয় হবে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা।

(ঢাকাটাইমস/৭সেপ্টেম্বর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :