যা চাইবে তা ছিনিয়ে নিবে

রাজুব ভৌমিক
 | প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৩২

এই সংসারে নেতিবাচক মানুষের অভাব নেই। আপনার আশপাশে এ রকম অনেক ব্যক্তি আছে যারা প্রতিনিয়ত আপনাকে কিছু ‘না’ করার জন্য সবসময় উৎসাহিত করবে। তারা চাইবে যেন আপনি তাদের মতো জীবনযাপন করুন। আপনি যেন সফল না হোন সে জন্য তারা গোপনে বহু চেষ্টা চালাবে।

আপনাকে হয়তো বলবে ‘এটা করা সম্ভব নয় বা এটা কেউ কোনো দিন করতে পারেনি।’ অথবা আপনার কাজের সমালোচনা তারা অন্যের সাথে করবে। এতে নিরুৎসাহিত হবেন না। পরিবর্তে তাদেরকে ভুল প্রমাণ করার যুদ্ধে আপনি নামুন, যা পূর্বে করা হয়নি তা আপনাকে বর্তমানে সম্ভব করে দেখাতে হবে। মনে রাখতে হবে সাফল্যের লম্বা মইটা বেড়ে উঠা অত সহজ নয় কিন্তু সম্ভব। তার জন্য আপনাকে নেতিবাচক লোকদের সব কথা অবজ্ঞা করতে হবে।

সাফল্যের লম্বা মইটিতে উঠতে হলে প্রথমে আপনার পকেট থেকে দুই হাত বের করতে হবে। অনেকে চাইবে যে আপনি যেন তাদের মতো পকেটে দুই হাত ভরে সময় কাটিয়ে দিতে। কিন্তু সব ভেড়া এক সাথে থাকলেও তারা সবসময় সঠিক পথে চলে না। কেননা ভেড়ার দলে প্রথম ভেড়াটি যেদিকে যায় বাকিরা সেদিকই অনুসরণ করে। তাই অন্যরা যে পথে হাঁটছে আপনাকেও সেই পথে হাঁটতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অন্যের পথ অনুসরণ না করে নিজে পথ তৈরি করুন।

একটু ভেবে দেখুন। এই মুহূর্তে এমন অনেক লোক আছে যারা খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ-ফুর্তি বা নাচ-গান করে সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু আবার এমন লোকও আছে যারা প্রতিনিয়ত নিজের আত্মউন্নতির জন্য গভীর সাধনা করে যাচ্ছে। তারা নিয়মিত বই পড়ছে, পরীক্ষা চালাচ্ছে এবং অনুশীলন করেছে। তারাই একদিন সাফল্যের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছতে পারবে। মানুষের জীবন বৃথা সময় ব্যয় করার জন্য হয়নি। এই জীবনের প্রত্যেক মুহূর্ত সঠিকভাবে ব্যয় করে জনকল্যাণই মানব জীবনের মূল উদ্দেশ্য।

ধরুন আপনি একজন উদ্যোক্তা। আপনি দশটি মাছের পোনা উৎপাদন করে একটি বড় পুকুরে ছেড়ে দিয়েছেন। মাছের পোনাগুলো পুকুরে প্রবেশ করার পর তাদের আশপাশে এদিক-ওদিক করে সময় নষ্ট করে দিচ্ছে। কিছুদিন পর না খেয়ে সব মাছ মারা যায়। অথচ পুকুরের মধ্যভাগে প্রচুর খাবার ছিল। যেহেতু কোনো মাছের পোনাই পরিশ্রম করে পুকুরের মধ্যভাগে যেতে চায়নি। তাই সবাই না খেয়ে মারা গেল।

যদি অন্তত একটি পোনা পুকুরের মধ্যভাগের খাবারের সন্ধান পেতো তা হলে বাকি পোনা মরতো না। ঠিক তেমনি মানুষের মধ্যেও কেউ একজনকে অসম্ভব সাধন করে সাফল্য অর্জন করতে হয়, তা না হলে সংসারে অবশিষ্ট মানুষের অস্তিত্ব থাকত না। অন্যের মতো আপনি এদিক-ওদিক করে সময় নষ্ট করবেন না। তা হলে আপনার সাথে সাথে গোটা জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।

একটি বনের বাঘের কাছে একটি হরিণ শিকার করাটাই তার জন্য সফলতা। বাঘ যখন বনে একটি হরিণ প্রথমে দেখে সে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই কিন্তু হরিণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তেমনি আপনাকেও সফলতার ছায়া দেখলে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ছিনিয়ে নিতে হবে আপনার সফলতা। অন্যেরা কি বলছে বা আপনার নামে কি সমালোচনা করছে তা ভাবলে চলবে না।

জীবনে আপনার দৃষ্টি শুধু সফলতার ওপর রাখা উচিত। বড় সফলতা পেয়ে আবার যেন থেমে না যান। একটি বাঘ মাঝেমধ্যে বিশাল ষাঁড় বা মহিষ পর্যন্ত শিকার করতে পারে। শিকারের পর মহিষটা পুরোপুরি খেয়ে শেষ করতে তার বেশ কিছুদিন লাগতে পারে। তাই বলে বাঘটিকে মহিষ শিকারের পরের দিন একটি হরিণ শাবক দেখলে সেটাকে অবজ্ঞা করা উচিত হবে না। বাঘটিকে জানতে হবে যে মৃত মহিষটি কয়েক দিন পর পচেও যেতে পারে বা অন্য জীব বা জন্তু তা খেয়ে ফেলতে পারে। তাই একটি বড় সফলতার পর অন্য সব প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিলে চলবে না।

সাফল্যের ক্ষুধা সবসময় তীক্ষ্ণ থাকা উচিত। তাতে আপনার বেশি লাভ না হলেও সমাজ বা জাতির লাভ অবশ্যই হবে। যেমন ধরুন, বাঘটি প্রথমে বিশাল এক মহিষ শিকার করল, পরের দিন সে আবার একটি হরিণ শাবক শিকার করল, পরের দিন সে আবার আরেক প্রাণী শিকার করল। বাঘটির যদিও প্রতিদিন শিকারের ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছিল না, কারণ সে মহিষটি খেয়ে বেশ কয়েকদিন কাটিয়ে দিতে পারত। কিন্তু তার সাফল্যের ক্ষুধার কারণে এখন অন্য প্রাণীরা সে মাংসের বা সফলতার ভাগ পাবে। বনের সব বাঘই হিংস্র হয় না। কোনো কোনো বাঘ বার্ধক্যের চাপে শিকার তো দূরের কথা, উঠে-বসতেও পারে না। কিন্তু ওই বাঘটির সফলতার ক্ষুধার জন্য আজ এই বয়স্ক বাঘটির ক্ষুধা মিটবে।

সমাজ কল্যাণে আমাদের বৃহৎ চিত্রের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এই যে সমাজের মানুষই সমাজের কল্যাণে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সমাজে কেউ কিছু করতে চাইলে অন্যেরা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তা না হলে সমাজে মানুষ বেশ সুখে থাকত। একবার চিন্তা করে দেখুন যে একটি সমাজে সব ধরনের লোক আছে। যাদের নানা ধরনের গুণ আছে।

সবাই যদি সবাইকে সাহায্য করত তা হলে সমাজে দুঃখ বলে কিছু থাকত না। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমরা তাই করি না। উপরন্তু আমরা একে অন্যের ক্ষতি সাধনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এজন্য সমাজে সফল ব্যক্তিদের কদর বেশি। কেননা আমরা জানি যে সমাজে একজন মানুষকে সফল হতে হলে কত সংগ্রাম করতে হয়। তথাপি আপনাকে সফল হতে হবে। সমাজের শত বাধা আসা সত্ত্বেও আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। মনোবল হারালে কখনো চলবে না। সফলতা পাওয়ার ইচ্ছা থাকলেই শুধু হবে না, সফলতা ছিনিয়ে নেওয়ার ইচ্ছাও থাকতে হবে। তা হলেই সফলতা পাওয়া যেতে পারে।

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা, কবি ও প্রাবন্ধিক

ঢাকাটাইমস/৭সেপ্টেম্বর/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :