বাল্লা স্থলবন্দর বাস্তবায়নে নতুন জটিলতা

আবু হাসিব খান, হবিগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:০২

ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের টাকা কম নির্ধারণ নিয়ে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা স্থলবন্দর বাস্তবায়নে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকরা যথাযথ মূল্য না পেলে আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার টেকেরঘাট গ্রামের বাসিন্দা লকুজ মিয়া ১০/১৫ বছর আগে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় ৫ শতক জমি ক্রয় করে করেন। সেখানে মাটি ভরাট ঘর তৈরি করে বসবাস করেন এবং নিজ হাতে রোপণ করেন আম,কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলজ গাছ। তার তৈরি বাড়ির জায়গায় এখন হবে বাল্লা স্থলবন্দর। তাকে আবারও অন্য এলাকায় জমি কিনে তৈরি করতে হবে নতুন বাড়ি। কিন্তু নতুন জায়গা কিনে আবার বসতি গড়ার জন্য অর্থ নেই তার।

তিনি জানান, বাল্লা স্থলবন্দরের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করার কাজের সময় সরকারি কর্মচারীরা তাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন ‘আপনাকে সরকার তিনগুণ টাকা দেবে। এই টাকা দিয়ে নতুন বাড়ি করার পরও আরও টাকা হাতে থাকবে।’

তাই ভাল দামে জমি বিক্রির সুযোগ পেয়েও তিনি অপেক্ষায় থাকেন সরকারের থেকে টাকা পাওয়ার। কিন্তু সরকারিভাবে যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে সেখানে বিক্রি হয় ভূমি। আর সরকার যে টাকা দেবে তা দিয়ে নতুন বাড়ি করা দূরের কথা, নতুন ভূমি ক্রয়ও করতে পারবেন না তিনি।

শুধু লকুজ মিয়াই নন এ কাজে যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেই দুই শতাধিক ভূমি মালিকদের এখন মাথায় হাত। তারা যথাযথ ক্ষতিপূরণ না পেলে দুর্বার আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাল্লা স্থলবন্দরটি ১৯৫১ সালে ৪.৩৭ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বন্দর দিয়ে খোয়াই নদীর পানিতে পায়ে হেঁটে ও নৌকায় দু‘দেশের মাঝে ব্যবসা-বানিজ্য চলে আসছে। এখানে রয়েছে চেকপোস্টসহ সীমান্তঘাঁটি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ বাল্লা স্থলবন্দরের ২ কিলোমিটার পশ্চিমে কেদারাকোট নামক স্থানে স্থলবন্দর স্থাপনের চেষ্টা করে।

২০১২ সালের ১১ জুন প্রস্তাবিত কেদারাকোট স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন পরিদর্শন শেষে তখনকার বাণিজ্য উপ-সচিব মোকাব্বির হোসেন ও ভারতের কমার্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ইন্দিরা মারাঠি।

তারা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দু’দেশের সরকার ত্রিপুরা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে আগ্রহী। তাই বাল্লা সীমান্তের কেদারাকোট নামক স্থানে স্থলবন্দর স্থাপন করা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা সরজমিন পরিদর্শন করা হয়। ভারতীয় দল এই স্থলবন্দর নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরায় অনুষ্ঠিত সীমান্ত সম্মেলনে বাল্লা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠায় ঐক্যমত পোষণ করে দুই দেশ।

এরপর নতুন বন্দর হবে জানতে পেরে দেশের বড় বড় শিল্প মালিক-ব্যবসায়ীরা ওই এলাকায় জমি ক্রয় শুরু করলে বাড়তে থাকে জমির দাম।

এদিকে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ চুনারুঘাট উপজেলার ১৬২ নং জেএলস্থিত গাজিপুর মৌজায় ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে। বাংলাদেশ সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী এসব জমির মূল্য নির্ধারণের নির্দশনা দিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন নামিদামী কোম্পানির মালিক পক্ষ বন্দরের আশপাশে এলসির মাধ্যমে বেশ চড়া দামে জমি ক্রয় করেছেন। কোন কোন জমির শতক প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। ফলে সেখানে অধিগ্রহণের মূল্য বেশি হওয়ার কথা থাকলেও বাজার দরের অনেক কম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া, ১৩ একর ভূমির ক্ষতিপূরণ মাত্র ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে জানা গেছে। যা আইন অনুযায়ী ২০১৭ সালের সম্পাদিত দলিলের গড় মূল্যের চেয়ে অনেক কম।

এই খবর জানতে পেরে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকরা সেখানে সভা সমাবেশ করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ তারা মিয়া বলেন, ‘আমার বাড়িসহ ৮ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা শতক জমি বিক্রি হচ্ছে। সরকার কম টাকা দিলে আমরা জমি দেব না।’

সৌদি প্রবাসী জামাল চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ২০ শতক ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই জমি অনেক মূল্যে বিভিন্ন লোকজন কিনতে চাইলেও আমরা বিক্রি করিনি। সরকার আমাদের সঠিক মূল্য না দিলে আমরা জমি দেব না।’

গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ন চৌধুরী জানান, বন্দর এলাকায় ব্যবসায়ীরা জমি কেনায় সেখানে অনেক দাম। অধিগ্রহণের পরও বর্তমানে দুই লাখ টাকা শতক জমি বিক্রি হচ্ছে। সরকার যদি এর চেয়ে কম মূল্য দিলে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা তা মেনে নেবে না।

উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর জানান, ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকরা আমার কাছে জানতে চেয়েছে, তারা সঠিক ক্ষতিপূরণ পাবে কি না। কিন্তু সরকারি বরাদ্দের কোন খবর পাইনি। ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায় তার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, বাল্লা স্থলবন্দরের জায়গার সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। টাকা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/৮সেপ্টেম্বর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :