ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়ার কবিতা: স্বপ্নের সোনাপুর
কিচ্ছু পষ্ট না; হয় ঘুটঘুটে আঁধার
নয়তো আবছায়া,
আততায়ীদের কানাকানি দেখে আমার বীরত্ব হাওয়া।
.
সহজ নয়তো আলোর ছুড়িতে আঁধারের গলা কাটা,
গলায় ঝোলানো কবচে ঘুমায়
তাবিজ বুকের পাটা।
আমার এখন সঙ্গী কেবল পথের বিছানো কাঁটা,
যে পা-ই বাড়াই
কাঁটায় বিঁধে সে পা-টা,
তবু অবিরাম দিন দিনান্তে আমার উদাসী হাঁটা।
.
অনেকটা পথ হাঁটতে হবে যেতে হবে বহুদূর,
ফোটে যেই খানে সোনা সোনা রোদ্দুর;
স্বপ্নের সেই সোনাপুর-
জানিনা সে দেশ কতো-যে সুদূর
জানিনা সে পথ কতো বন্ধুর
যেতে হবে কদ্দুর?
.
পথে পথে চিৎ হয়ে পড়ে আছে
মরা কোলাব্যাঙ চামচিকে নেংটি ইঁদুর
মরা ঘাস সজারুর শলা
নাপিতের সুতীক্ষ্ণ ক্ষুর।
.
পায়েরা কেবল এগিয়ে যায় পথের শেষের খোঁজে,
পায়ের কষ্ট দমের আহুতি পথের ধুলোরা বোঝে;
আদুরে ধুলোরা পায়ের চাকার রথে
স্বেদ শোণিতে সিক্ত চলার পথে
আশা ঢেলে দেয় দু’পায়ের ক্ষতে ক্ষতে
পায়ের শব্দে স্বরলিপি লিখে লিখে
চলার ছন্দে তুলে দরদিয়া সুর বলে, আর যেতে হবে না পথিক
তেমন ততোটা দূর
এইতো কাছেই স্বপ্নের সোনাপুর।
.
পথের দুধার শুকনো পাতায় ছাওয়া
গলায় ঝুলিয়ে ঝুলের ঝাঁটা
ঝিমায় কাকতাড়ুয়া;
কালো পাতিলের মুণ্ডু ক্ষাণিক নেড়ে
ঈর্ষা কাতর নজর শুদ্ধ করে।
.
কু-নজরে তবু পড়েছে আমার যাত্রা
ডোবার পাড়ের নল খাগড়ার বনে
হিংস্র থাবার বাঘেরা গড়েছে আস্তানা,
গোপের দুধেল গাভীর বাস্তু-বাথানে।
.
এ সব উটকো আবোল তাবোল
গোলমেলে সব আগল,
আমার চলাকে রুদ্ধ করার চাতুরি ছল,
আমি যে করেছি হাড় মজ্জাকে জল
আমার কাছে পারিজাত-বীথি
অ্যামাজন জঙ্গল,
আমার কাছে তুলোর কুশন
পাথর জগদ্দল।
.
হোক না যতোই দূর
আমি পার হবো তেরো নদী আর
সপ্ত সমুদ্দুর,
আমিই ফোটাবো লাল মোরগের কুক্কুরুতের ভোর।
তুমি আর আমি আমরা সকলে
পরস্পরের কর্মকুশলে
জামার গুটানো আস্তিনে ভরে
রাখবো চশম-খোর।
.
পার হয়ে যাবো জোচ্চোরি ভরা
ভেল্কি বাজির ঘোর,
লাঠি চকলেটে খোকারা যেমন আদিখ্যেতায় চুর;
সে রকম করে দিগন্ত জুড়ে
পাতালের সব আবছায়া ফুঁড়ে
হাসবে অখিল সোনা রোদ্দুরে
স্বপ্নের সোনাপুর।