ইমামের বেতন না দেওয়ায় পুরো পরিবারকে সমাজচ্যুত

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:০৮ | প্রকাশিত : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:০৬

হবিগঞ্জে মাধবপুরে মসজিদের মাইকে আবিদ মিয়া নামে এক ব্যক্তির পরিবারকে সমাজচ্যুতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার আদাঐর ইউনিয়নের সম্ভদপুর গ্রামে মসজিদের ইমামের বেতন না দেওয়ায় ওই পরিবারের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামের মাতব্বররা।

ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, কেউ ওই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মিশলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আবিদ মিয়া ৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সম্ভদপুর গ্রামের মাতব্বর আব্দুল আলী উরুফে কাইল্লা, এমবাদ উল্লাহ, স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুল্লা মাস্টার, মঙ্গল আলী, শফিক মিয়ার নেতৃত্বে সম্ভদপুর গ্রামের হাবিবুল্লাহ মাস্টারের বাড়িতে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগকারী আবিদ মিয়ার মেয়ের বিয়ে ছিল। বিয়ের আগের দিন আবিদ মিয়ার নিকট আব্দুল আলী উরুফে কাইল্লা ও তার সহযোগীরা দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এসময় তিনি টাকা না দেওয়ায় বিয়ের দিন মসজিদের ইমামসহ বরযাত্রীদের বিয়ে বাড়িতে যেতে বাধা দেয় কাইল্লা ও তার সহযোগীরা ।

এসময় তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়, আবিদ মিয়ার পরিবারের লোকজন সমাজের বাইরে। তাদের বাড়িতে কেউ যেন বিয়ে এবং অন্যান্য কাজে না যায়। এতে ওইদিন আবিদ মিয়া ও বরযাত্রীদের মান-সম্মানসহ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বর্তমানে আবিদ মিয়ার পরিবারের লোকজনকে কোথাযও চলাফেরা করতে দিচ্ছেন না তারা। শুধু তাই নয় প্রকাশ্যে তার পরিবারকে হুমকিও দিচ্ছে তারা।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এমন এক ঘরে করে রাখার অবস্থা চলতে থাকলে আবিদ মিয়া ও তার পরিবারের আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নাই। আবিদ মিয়ার ভাই ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘আমরা জমিতে গিয়ে চাষ করতে পারছি না। আমাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

তবে গ্রাম্য মাতব্বর আব্দুল আলী উরুফে কাইল্লা অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘এটা আমার একার সিদ্ধান্ত না। তাছাড়া তারা গ্রামের আইনকানুন মানে না। তারা গত দুই বছর যাবৎ মসজিদের ইমাম সাহেবের বেতন বা হাদিয়া দেয় না। তাই গ্রামবাসী হাবিবুল্লাহ স্যারের বাড়িতে মিটিং করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারা ইমামের বেতন দিলে আমরা আগের মতো স্বাভাবিকভাবে তাদের নিয়ে চলবো।’

এদিকে ইউনিয়নের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা শফিক মিয়া চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই মাতব্বর বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এছাড়া স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুল্লাহ মাস্টারের সঙ্গে ফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায় নি।

এ বিষয়ে আদাঐর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক পাঠান বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমি এখনও পায়নি। তবে কাউকে সমাজচ্যুত করা খুবই খারাপ কাজ। আমি এ বিষয়ে খবর নিচ্ছি।’

মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্কা (ওসি) ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নাই। আমি এখনই খবর নিয়ে দেখছি। তবে এমন কেউ করে থাকলে এটা আইন পরিপন্থী। কারণ দেশে সমাজচ্যুত করার আইন নেই।’

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনূভা নাসতারান বলেন, ‘এক ঘরে করে দেওয়ার বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

(ঢাকাটাইমস/৯সেপ্টেম্বর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :