ইলিশে চাঁদপুর মৎস্য আড়ৎ সয়লাব

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:২২

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় তেমন বড় সাইজের ইলিশ ধরা না পড়লেও সাগরের নোয়াখালী, হাতিয়া, লক্ষীপুর, বরগুনা, চরফেশান ও ভোলা এলাকায় ধরা পড়া জাঁকে-জাঁকে ইলিশ চাঁদপুর মাছঘাটের আড়তে আসায় ব্যবসায়ীদের এখন সুদিন চলছে। এতে তাদের অর্থনীতির চাকা এখন সচল হয়ে উঠেছে। যার ফলে শত-শত জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের মনে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। তারা এ বছর বিগত দিনের দেনা পরিশোধ করেও ব্যাপক অর্থ উপার্যন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

‘ইলিশের বাড়ি’ খ্যাত চাঁদপুর জেলায় স্থানীয় পদ্মা মেঘনা নদীতে ইলিশ বলতে ছোট ইলিশ ধরা পড়লেও বড় সাইজের রুপালি ইলিশের দেখা নেই। তবে গভীর বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। সেই ইলিশে সয়লাব হচ্ছে বড় স্টেশন মৎস্য আড়ৎগুলো।

বুধবার দুপুরে আড়তে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ঘাট জুড়ে ইলিশ আর ইলিশ। আড়ৎদার, শ্রমিক, বরফ ব্যবসায়ী সবাই এখন সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে যেসব ইলিশ আমদানি হচ্ছে সেগুলো রাত ৯টার মধ্যে বিক্রি হয়ে আড়ৎগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে। ট্রাক, ট্রেন ও বাসে করে রপ্তানি হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মঙ্গলবার ও বুধবার এ দুই দিনে ২২টি ইলিশ ভর্তি ফিশিং বোট আসায় ইলিশের এই ছড়াছড়ি বলে জানিয়েছেন মাছ ঘাটের ব্যবসায়ীরা। ফিশিং বোটের পাশাপাশি নোয়াখালীর হাতিয়া, লক্ষীপুর থেকে ট্রাক ও পিকআপ বোঝাই হয়ে আনা হয় প্রচুর ইলিশ। সাগরের ইলিশের ব্যাপক আমদানিতে ইলিশের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত জানান, এসব ইলিশ সাগরের কাছাকাছি নোয়াখালীর হাতিয়া, বরগুনা ও ভোলা জেলার। গত দুই দিন ইলিশ আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে এখন ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকায়। একদম বড় সাইজের ইলিশ অর্থাৎ এক কেজি থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার থেকে ১৮০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

চাঁদপুর মৎস্য জেলে সমিতি নেতা তসলিম বেপারি বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুম চলে যাচ্ছে। কিন্তু চাঁদপুরে পদ্মা- মেঘনায় রুপালি ইলিশের দেখা নেই। জেলার নিবন্ধিত ৫১ হাজারের বেশি জেলে পরিবার অনেকটা হতাশ। তবে কিছু জেলে উপায় না পেয়ে সাগরে গিয়ে ইলিশ আহরণ করছেন। সাগরে গিয়ে ইলিশ আহরণে অনেক সময় জেলেরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

সদর উপজেলার আনন্দ বাজার এলাকার একাধিক জেলে জানান, চলতি বছরে সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। গত ২৩ জুলাই এ সময়সীমা শেষ হয়েছে। করোনার কারণে ওই সময়টাতে জেলেরা কর্মহীন হয়ে পড়ে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সাগরে নামলেও জেলেদের জালে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছিল না। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে এবং সে ইলিশ চাঁদপুর মাছ ঘাট ভরপুর হয়ে পড়েছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী বলেন, জাটকা সংরক্ষণের সময় চাঁদপুরের অধিকাংশ জেলে বেপরোয়া হয়ে জাটকা নিধন করে। ইলিশ না পাওয়ার এটিও একটি কারণ। জাটকা নিধন বন্ধ হলে চাঁদপুরে নদনদীতে রুপালী ইলিশ প্রচুর পাওয়া যেত। এছাড়াও পাথরঘাটা, বড়গুনা ও ভোলার শেষ প্রান্তে জেলেরা নদীতে ভরা মৌসুমে নদীর এপাড় থেকে ওপাড় বড় বড় দৈর্ঘের জাল পেতে রাখে। এতেও উজানে মাছ আসার একটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় সেপ্টেম্বর শেষ থেকে অক্টোবর মাসে পরিপক্ক ইলিশগুলো সাগর থেকে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে চলে আসে। তখন পদ্মা-মেঘনায় বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। কিন্তু মা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করার জন্য ২২ দিন চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তবে এখন পর্যন্ত সময়সীমা মন্ত্রণালয় থেকে ঠিক করা হয়নি। মা-ইলিশ রক্ষা ও জাটকা নিধন বন্ধ করা নিশ্চিত করা হলে চাঁদপুরের নদীতে প্রচুর রুপালী ইলিশ উৎপাদন হতো।

(ঢাকাটাইমস/৯সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :