গাজীপুরে তিনটি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:৫৪

বোরো মওসুমের লবণাক্ততা সহনশীল দুটি ও আউশ মওসুমে চাষাবাদের উপযোগী একটিসহ মোট তিনটি নতুন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। মঙ্গলবার জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৩তম সভায় ব্রি ধান ৯৭ ও ব্রি ধান ৯৯ দেশের উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চল ও অনুকূল পরিবেশে এবং ব্রি ধান ৯৮ সারা দেশে আউশ মওসুমে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। এর ফলে ব্রি উদ্ভাবিত ধান জাতের সংখ্যা হলো ১০৫টি।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের টেকনিক্যাল এডিটর আবুল কাশেম জানান, অবমুক্ত করা নতুন জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান ৯৮ আউশ মওসুমে চাষ উপযোগী জাত। এর ফলন প্রতি হেক্টরে ৫ দশমিক ০৯ থেকে ৫ দশমিক ৮৭। এর দানা লম্বা ও চিকন। এ জাতের ধানের দানার রং সোনালী। এ জাতের জীবনকাল ১১২ দিন যা রোপা আউশ মওসুমের জাত বিআর ২৬ এর সমান।

তিনি বলেন, এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২২ দশমিক ৬ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭ দশমিক ৯ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৯ দশমিক ৫ ভাগ। ভাত ঝরঝরে।

এ জাতের কৌলিক সারিটি নির্বাচনের পর ব্রির গবেষণা মাঠে তিন বছর এর ফলন পরীক্ষা করা হয় এবং পরে কৌলিক সারিটি আউশ ২০১৮-১৯ মওসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এই কৌলিক সারিটির জীবনকাল বিআর ২৬ এর মতো এবং ফলন বেশি হওয়ায় প্রস্তাবিত জাত হিসেবে নির্বাচিত হয়।

এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল আউশ ২০১৯-২০ মওসুমের কৃষকের মাঠে প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষা সম্পন্ন করে। কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় আউশ মওসুমের জন্য বিআর২৬ এর একটি পরিপূরক জাত হিসেবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়।

ব্রি ধান৯৭ ও ব্রি ধান৯৯ বোরো মওসুমের উচ্চ ফলনশীল লবণাক্ততা সহনশীল ধানের জাত। এ জাতগুলো চারা অবস্থায় ১৪ ডিএস/মি এবং সমগ্র জীবনকাল ৮-১০ ডিএস/মি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। ব্রি ধান ৯৭ এর গড় জীবনকাল ১৫২ দিন এবং গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৯ টন।

উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৭ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৫ দশমিক ৫ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৫ দশমিক ২ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮ দশমিক ৬ ভাগ। গাছের গড় উচ্চতা ১০০ সেন্টিমিটার ও ডিগপাতা খাড়া। এর চাল মাঝারি মোটা হওয়ায় বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর ও খুলনা অঞ্চলে অধিক জনপ্রিয় হবে।

ব্রি ধান ৯৯ এর গড় জীবনকাল ১৫৫ দিন এবং গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ৪টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৭ দশমিক ১টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২২ দশমিক ৮ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭ দশমিক ১ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৭ দশমিক ৯ ভাগ। গাছের গড় উচ্চতা ৯৪ সেন্টিমিটার ও ডিগপাতা খাড়া। এর চাল লম্বা ও চিকন হওয়ায় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে অধিক জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ জাতের কৌলিক সারিগুলো নির্বাচনের পর ব্রির গবেষণা মাঠে তিন বছর এর ফলন পরীক্ষা করা হয় এবং পরে কৌলিক সারিগুলোর বোরো ২০১৭-১৮ মওসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। উক্ত কৌলিক সারিগুলো লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি ধান৬৭ এর থেকে ফলন বেশি হওয়ায় প্রস্তাবিত জাত হিসেবে নির্বাচিত হয়।

এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল বোরো ২০১৮-১৯ মওসুমে কৃষকের মাঠে প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় বোরো মওসুমের জন্য লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি ধান ৬৭ এর পরিপূরক জাত হিসেবে এ জাত দুটি অবমুক্ত করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/৯সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :